Published : 01 Sep 2024, 07:40 PM
গণআন্দোলনে উত্তাল জুলাইয়ের ধাক্কা কাটিয়ে অগাস্টে রেমিটেন্স বেড়েছে ৩৯ দশমিক ৬২ শতাংশ।
এবার অগাস্টে রেমিটেন্স এসেছে ২ দশমিক ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা গত বছরের একই মাসে ছিল ১ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার। এই হিসাবে রেমিটেন্স বেড়েছে ৩৯ দশমিক ৬২ শতাংশ।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
চলতি বছরের জুলাইতে রেমিটেন্স প্রবাহ ছিল ১ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। এই হিসাব অনুযায়ী, গত জুলাইয়ের চেয়ে অগাস্টে রেমিটেন্স বেড়েছে ১৬ দশমিক ২৩ শতাংশ।
এদিকে গত জুনে ৪৭ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসে দেশে, যার পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সালের জুনের চেয়ে ২০২৪ সালের জুনে রেমিটেন্স বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১৬ শতাংশ বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুনে প্রবাসীরা পাঠিয়েছিলেন ২ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার।
রোববার অগাস্টের রেমিটেন্স নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তারা বলেছেন, গত মাসের প্রথম সাত দিন রেমিটেন্স প্রবাহ অনেক কম ছিল। মূলত ৭ তারিখের পর ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে। সে অনুযায়ী শেষ ২৩ দিনে রেমিটেন্স প্রবাহ বেশ ভালো এসেছে বলে ধারণা দিয়েছেন ব্যাংকাররা।
১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মাসের মাঝমাঝি এসে সহিংসতা হয়ে ওঠে, কমে যায় রেমিটেন্স প্রবাহ। আন্দোলনের গতি বাড়তে থাকায় সেই রেমিটেন্স কমার ধারা চলতে থাকে। জুলাই ছড়িয়ে সেই গণআন্দোলন আরও প্রবল হয়ে ৫ অগাস্ট সরকারের পতন ঘটায়। আর তার দুদিন পর থেকেই অর্থাৎ ৭ অগাস্ট থেকে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়তে থাকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অগাস্টের প্রথম ৫ দিন অনেক কম রেমিটেন্স এসেছে। ৭ তারিখের পর থেকে রেমিটেন্সের প্রবাহ বেড়েছে। তাতে রেমিটেন্স যা আসছে, সে অনুযায়ী অনেক ভালো হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।”
ডলারের দর স্থিতিশীল হওয়েছে কি না, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আরেকটু পর্যালোচনা করতে হবে।“
জুলাইতে কোটা সংস্করণ আন্দোলন হওয়ায় ব্যাংক খাতের ওপরেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ব্যাংক টানা তিন দিন বন্ধ থাকার কারণে জুলাইয়ে রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যায়। তাতে মাস শেষেও রেমিটেন্সের হিসাব দাঁড়ায় ২ বিলিয়নের নিচে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, সবশেষ চলতি বছরের গত জুনে রেমিটেন্সে উল্লম্ফন হয়েছে; ৪৭ মাস পর সর্বোচ্চ আয় এসেছে ২ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার।
বর্তমানে ডলা দর ১২০ টাকা সর্বোচ্চ; রেমিটেন্সের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো এর সঙ্গে আরও আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দেয়।
চলতি বছর মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের বিনিময় হার ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু করে। এতে দেশের প্রধান বৈদেশিক মুদ্রাটির দর এক লাফে ৭ টাকা বেড়ে যায়, যা আগের দিনও ছিল ১১০ টাকা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এর পরামর্শ মেনেই এই পদ্ধতিতেই ডলারের দর নির্ধারণ করতেন সাবেক গভর্নর আব্দুর রঊফ তালুকদার। ব্যাংক খাতের সংশ্লিষ্টরা বলেন, ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করার পর ব্যাংকিং খাতে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার গত মাসে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে রিজার্ভ বিক্রি করা হবে না। তাতে রিজার্ভ বাড়বে, কমার আশঙ্কা নেই।“
তার ভাষায়- ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি অনুসরণ করার কারণে ডলার দর ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হচ্ছে। ডলার দর স্থিতিশীল থাকলে মূল্যস্ফীতিও কমবে।