Published : 03 Jul 2024, 12:26 AM
গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক সেবাদানকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকেও এবার আইনের আওতায় নিয়ে এল সরকার।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে ‘পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা ২০২৪’ নামে নতুন বিল পাসের মাধ্যমে গ্রাহকদের আর্থিক লেনদেনের দীর্ঘদিনের জটিলতার অবসানে আইনি কাঠামো তৈরি হল বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমদু আলী।
অবশ্য বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে একাধিক সংসদ সদস্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে বিশৃঙ্খলার সমালোচনা করেছেন।
এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।
মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী ‘পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা’ নামে বিলটি পাসের জন্য সংসদে উত্থাপন করেন। বিলের ওপর আনা সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে এ দিন বিলটি সংসদ সদস্যদের কণ্ঠভোটে পাস হয়।
এর আগে ৬ মে বিলটি সংসদে তোলা হলে সেটি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
নতুন এ আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি ‘অগ্রিম পরিশোধ দলিল’ ইস্যু এবং কেনাবেচা করতে পারবে না।
এতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লাইসেন্স ছাড়া বিনিয়োগ গ্রহণ, ঋণদান, অর্থ সংরক্ষণ বা আর্থিক লেনদেন উদ্ভব হয়, এমন কোনো অনলাইন বা অফলাইন প্ল্যাটফর্ম পরিচালনা করা যাবে না। এসব বিধান অমান্য করলে সাজা হবে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এত দিন বাংলাদেশে পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা-সংক্রান্ত কোনো আইন ছিল না। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ অনুযায়ী, পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেমস রেগুলেশনস-২০১৪ এবং রেগুলেশনস অন ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার-২০১৪-এর আওতায় সব পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছিল। এ-সংক্রান্ত পৃথক কোনো আইন না থাকায় ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ইলেকট্রনিক লেনদেন ব্যবস্থায় অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিশোধ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে কোনো আইন না থাকায় গ্রাহকের স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে ব্যাংকের পাশাপাশি অন্যান্য সেবাদানকারীদের আইনি কাঠামোর আওতায় আনতে আইনটি করা হল বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা নিয়ে সমালোচনা
এ বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে কয়েকজন সংসদ সদস্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিশৃঙ্খলা নিয়ে সমালোচনা করে এ থেকে উত্তরণের পথ খোঁজার তাগিদ দিয়েছেন।
স্বতন্ত্র সদস্য পংকজ নাথ বলেন, চার শিল্প প্রতিষ্ঠানের সুদ মওকুফ নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। নিয়ম না মেনে চারটি প্রতিষ্ঠানের ছয় হাজার ৪৯৭ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করা হয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ অনুমোদন প্রয়োজন ছিল। এসব লোক চিহ্নিত করতে না পারায় প্রধানমন্ত্রীর মহতি উদ্যোগ ম্লান হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, “রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক জনতা ব্যাংক ধুঁকে ধুঁকে মরছে। বেসরকারি ব্যাংক এনবিএল এর কী অবস্থা তাও জানি।”
জাতীয় পার্টির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, “পিকে হালদার টাকা নিয়ে ভারতে চয়ে গেছেন। অনেক কোম্পানি আজ দেউলিয়া অবস্থায়। যারা লিজিং কোম্পানিতে টাকা রেখে নিঃস্ব তারা ফেরত পাবেন কি না, তা এই আইনে আছে কি না বোধগম্য নয়।”
স্বতন্ত্র সদস্য হামিদুল হক খন্দকার বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীরা ক্লাস বাদ দিয়ে আন্দোলন করছেন। তারা সর্বজনীন পেনশনে যুক্ত হতে চাচ্ছেন না। কারও ওপর জোর করে কিছু চাপিয়ে দেওয়া সমীচীন হবে না। সরকারকে বলব, বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য।”