Published : 19 May 2025, 06:57 PM
অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার করে যারা চলে গেছেন, তাদের জব্দ সম্পদ দিয়ে একটি তহবিল তৈরি করে সেই অর্থ জনকল্যাণে ব্যয় করার পরিকল্পনার কথা বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
সোমবার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ইতোমধ্যে এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তার এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, “লুটেরাদের অর্থ দিয়ে ফান্ড তৈরি করা হবে, যা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংক ও জনহিতকর কাজে ব্যবহার করা হবে। তাছাড়া আমাদের হাতে বিভিন্ন ব্যাংক ও কোম্পানির শেয়ার রয়েছে- এগুলো যারা পালিয়ে গেছেন তাদের শেয়ার।
“তাই ব্যাংকগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে বাকি টাকা দিয়ে ফান্ড তৈরি করে কীভাবে জনহিতকর কাজে ব্যবহার করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।"
আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসব অর্থ জব্দ করার ব্যবস্থা নেওয়ার কথা তুলে ধরে গভর্নর বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা লন্ডন সফরে যাবেন। তখন তিনি লুটের টাকা ফেরত আনতে কিছু তৎপরতা চালাবেন।”
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, যারা তদন্তের আওতায় এসেছেন, তাদের ১ লাখ ৩০ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
আর বিদেশে ১৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার এবং ৪২ হাজার ৬১৪ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ অবস্থায় রয়েছে।
তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন লুটের টাকা দিয়ে ম্যানেজমেন্ট ফান্ড করা হবে। সেই ফান্ড থেকে ডিপোজিটর ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে দেওয়া হবে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।"
আইনের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে ‘এই লুটের টাকা’ দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে দেওয়া হবে এবং তাতে কোন আইনের ‘ব্যতয় ঘটবে না’ বলে মন্তব্য করেন গভর্নর।
তিনি বলেন, “প্রয়োজনে আইনের কিছু সংশোধন করা হতে পারে। তবে বর্তমান আইন দিয়ে করতে পারলে আমরা সেটাই করব।“
আহসান মনসুর বলেন, জব্দ করা যেসব সম্পদ ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, সে ধরনের সম্পদ নিয়ে আলাদা ফান্ড তৈরি করে সরকার জনহিতকর কাজে লাগাবে। সেটাও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই করা হবে।
এসআলম গ্রুপ যেসব ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ‘আত্মসাৎ’ করেছে, সেসব ব্যাংকের অনেকগুলোই এখন মূলধন সংকটে রয়েছে বলে তথ্য দেন গভর্নর।
তিনি বলেন, “সেসব অর্থ ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হলে এসব ব্যাংকের ক্ষতি কিছুটা হলেও কমবে।”
এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, “পাচার হওয়া অর্থ কীভাবে ফেরত আনতে হয় সে বিষয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা নেই। তবে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে চার থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত সময় লাগে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে।
“বিদেশে তাদের যেসব সম্পদ রয়েছে সেগুলো ফ্রিজ করা যায়। তা বছরখানেকের মধ্যেই করা সম্ভব। যেসব আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে, সেটার মাধ্যমেই বিদেশে আবেদন পাঠাচ্ছি। বিদেশের সহায়তা পেলেই সম্পদ ফ্রিজ করা যাবে। তারপর আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধান হতে ৪-৫ বছর সময় লাগবে।”
দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের ১২ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকার শেয়ার জব্দ আছে জানিয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, “এই শেয়ার একটা স্ট্র্যাটেজিক বিনিয়োগকারীর কাছে হস্তান্তর করা হবে। জব্দের অর্থ আমানতকারীদের ফেরত দেওয়া হবে।”