Published : 20 May 2025, 06:34 PM
প্রতি বছর জাতীয় বাজেটে শ্রম মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ কমছে আনুপাতিক হারে কমছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ গোলাম মোয়াজ্জেম।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে গোলটেবিল বৈঠকে সেন্টার ফর পলিসি ডয়ালগ-সিপিডির এই গবেষণা পরিচালক বলেন, “২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেটের একশত টাকার মধ্যে শ্রম মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল ১১ পয়সা। কমতে কমতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা হয় একশত টাকার মধ্যে ৯ পয়সা।”
টাকার অঙ্কে বরাদ্দ বাড়লেও অন্যান্য খাতের সঙ্গে তুলনা করলে আনুপাতিক হারে বাজেটে শ্রমিকদের হিস্যা কমেছে, মন্তব্য তার।
‘শ্রমিকদের জন্য কেমন বাজেট চাই’ শীর্ষক এই আলোচনার আয়োজন করে বাংলাদেশ টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশন।
বাজেটে শ্রম খাতে সরকারের বাজেট কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, সব সরকারের আমলেই সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে শ্রমিকদের নিচের দিকে দেখানো হয়।
“আমরা দেখতে চাই আগামী বাজেটে শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার কতটুকু বাজেটে প্রতিফলিত হল,” বলেন গোলাম মোয়াজ্জেম বললেন।
আগামী নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোতে শ্রমিকদের অন্তত ১০ শতাংশ হলেও প্রতিনিধি রাখার অনুরোধ করেন তিনি।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান ইসমাইল লিখিত প্রস্তাবনায় বলেন, শ্রম অসন্তোষ ঠেকাতে গত সেপ্টেম্বরে শ্রমিক সংগঠন, কারখানা মালিক ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী শ্রমিকদের রেশনিং ব্যবস্থা চালু করার কথা। এখনো এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
“বাংলাদেশ এলডিসি উত্তরণ করে মধ্যম আয়ের দেশে যাচ্ছে। সেখানে শ্রমিকদের জীবনমান দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করতে পারে না।”
রেশন, জাতীয় বাজেটে শ্রম খাতে বরাদ্দ ১০ শতাংশ করা, শ্রমঘণ এলাকায় হাসপাতাল নির্মাণ, নিরাপত্তা তহবিল গঠন, শ্রমিক আবাসন, সার্বজনীন কল্যাণ তহবিল গঠন ও সংসদে শ্রমিক কক্কাস গঠনসহ ৮ দাবি জানানো হয় লিখিত প্রস্তাবে।
শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশেও শ্রমিকদের রেশন দেওয়ার বিষয়ে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, শ্রমিকদের সকল ন্যয্য দাবি-দাওয়ার সঙ্গে বিজিএমইএ-বিকেএমইএ সব সময় একমত।
তিনি বলেন, “এবছর জাতীয় বাজেটে টোকেন বরাদ্দ দিয়ে হলেও রেশন ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। শ্রমিকদের প্রতিও অনুরোধ করব, আপনারা জ্বালাও-পোড়াও, কারখানা ভাঙচুরের মত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যাবেন না। ৯৫ শতাংশ শ্রমিকই ভালো, কিন্তু ৫ শতাংশ শ্রমিক নামধারী কারখানা ভাঙচুরে জড়িত। আপনারা তাদেরকে সমর্থন দিবেন না।”
এক সময় কলকারখানায় শ্রমিকদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা থাকত। নারায়ণগঞ্জের আদমজী জুট মিল তার একটি বড় উদাহরণ। এখন শিল্পাঞ্চল হলেও শ্রমিকদের জন্য আবাসন হয় না।
বিষয়টি তুলে ধরে শ্রম সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, “এখনকার সময়ে কারখানাগুলো শ্রমিকদের আবাসনের ব্যবস্থা করছে না। কারখানা মালিকরা বলছেন, একসঙেগ এত শ্রমিক থাকলে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে।”
শ্রমিক দুলাল চন্দ্র মজুমদার বলেন, সোনারগাঁও হোটেলের মত পাঁচ তারকা হোটেলেও বেতন বৈষম্য হয়। সেখানেও শ্রমিকদের সবার আবাসন সুবিধা নেই।
বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ বলেন, “দেশের চাকরির বাজারে সবচেয় বেশি সংখ্যায় শ্রমিক। অথচ তাদের ভোটের দাম নেই। আমাদের ক্ষমতায় যেতে হবে, রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশীদার হতে হবে, তা না হলে শ্রমিকদের দাবি আদায় হবে না।”
বাংলাদেশ মটরযান মেকানিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বলেন, “আমরা অচল গাড়ি সচল করি। আমাদের কথা সরকারকে শুনতে হবে। নইলে দাবি আদায়ে আন্দোলন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
রেশনসহ শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি আদায়ে আগামী ১ জুন ঢাকার শ্রম ভবন ও ৩০ মে গাজীপুর, সাভার, চট্টগ্রাম শিল্পাঞ্চল এলাকায় শ্রমিক সমাবেশ করার ঘোষণা দেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান।