Published : 18 May 2025, 01:13 AM
গল্প, আড্ডা আর স্মৃতিকথায় উঠে এল ঢাকার সমৃদ্ধ সংস্কৃতি আর ইতিহাস ঐতিহ্যের নানা প্রসঙ্গ।
পুরান ঢাকার নাম এলেই যে শুধু খাবারের প্রসঙ্গ আসে, আড়ালে ঢাকা পড়ে যায় আরও সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক বিবর্তনের গল্প- তাও উঠে এসেছে আলাপচারিতায়।
শনিবার বিকালে ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে হয় 'ঢাকাইয়া গল্প ঢাকার গল্প' শিরোনামের এ আলাপচারিতা।
উপলক্ষ ছিল আলোকচিত্রী মুনেম ওয়াসিফের 'ক্রমশ' শিরোনামে দৃশ্যশিল্পের প্রদর্শনী।
প্রদর্শনী শুরু হয় গত ১৮ এপ্রিল, চলবে ৩১ মে পর্যন্ত।
'ঢাকাইয়া গল্প ঢাকার গল্প' আলাপচারিতায় ইতিহাসবিদ, লেখক, স্থপতি, সংগঠক ও শিক্ষকরা তুলে ধরেন তাদের অভিজ্ঞতায় দেখা পুরান ঢাকার বিবর্তনের কথা।
স্মৃতি, অভিজ্ঞতা এবং ওই অঞ্চলকেন্দ্রিক গল্প ও ভাবনা বিনিময়ে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে আয়োজনটি।
ঢাকার ইতিহাস গবেষক হাশেম সূফী বলেন, পুরান ঢাকা হাজার বছর আগে মসলিন কারিগরদের বসতির জন্যও বিখ্যাত। ৫০০ বছর আগেও ঢাকা শহর ছিল অসংখ্য টিলা আর বন-জঙ্গলের শহর। সে কথাও জানতে হবে। ঢাকা মানেই কেবল খাই দাই নয়।
ঢাকার খাবারের যে অনেক ঐতিহ্য আছে, সে গল্পও আসে এ গবেষকের বক্তব্যে। কলকাতা রাজধানী হওয়ার আগেই যে ঢাকা সমৃদ্ধ শহর, সে কথাও বলেন তিনি।
ঢাকা কেন্দ্রের পরিচালক মোহাম্মদ আজিম বখস বলেন, "মতিঝিল হওয়ার আগে বড় বড় অফিস, ফার্নিচারের দোকান ছিল ফরাশগঞ্জে। তখন ফরাশগঞ্জ কতটা সমৃদ্ধ ছিল, তা বলে বোঝানো যাবে না।"
ফরাশগঞ্জ ক্লাব কীভাবে পুরান ঢাকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে, তার নানা গল্পও শোনান তিনি।
ঢাকাইয়া ভাষাতেই নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন লেখক আখতার জাহান। বলেন তার লেখক হয়ে ওঠার গল্প।
বাড়ির উঠানে কিসসা বলার আসর আর মহল্লার ক্লাবে খেলাধুলা, সংস্কৃতিচর্চা, সেলাই প্রশিক্ষণসহ নানা কর্মযজ্ঞ কীভাবে সেই জনপদের সাংস্কৃতিক বিকাশে ভূমিকা রাখে, সেই গল্পও তুলে ধরেন তিনি।
পুরান ঢাকায় ৫৫ বছর শিক্ষকতায় কাটিয়েছেন অজয় সরকার। তিনি বলেন, তিন বছর বয়সে আমার প্রথম এ স্মৃতি মনে আছে, তা এই পুরান ঢাকার।
তাঁর বেড়ে ওঠা এবং আজকের ঢাকা কীভাবে তার জীবনে জড়িয়ে আছে, সে গল্প শোনান তিনি।
স্থপতি রেহনুমা তাসনিম শিফা পুরান ঢাকার যে বাড়িটিতে বেড়ে উঠেছেন, সেই বাড়ির জানালা দিয়ে বুড়িগঙ্গা নদী দেখতে পাওয়ার স্মৃতি তুলে ধরেন।
শিফা বলেন, "আমাদের বাড়িটি ছিল মহল্লার সবচেয়ে উঁচু ভবন। তখন আমার দাদা হয়তো কল্পনাও করেননি, এই বাড়ির চারপাশে এত এত উঁচু ভবন তৈরি হবে। এখন আর বাড়ির জানালা দিয়ে বুড়িগঙ্গা দেখা যায় না।"
আলোকচিত্রী মুনেম ওয়াসিফ 'ক্রমশ' প্রদর্শনীয়ে তুলে এনেছেন পুরান ঢাকার অলিগলির চিত্র, যা সেই জনপদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অনুসন্ধানে প্রেরণা যোগাবে।
ক্রমশ দৃশ্যশিল্প প্রদর্শনী আলোকচিত্র, ফিল্ম ও ভাস্কর্যের মিশ্র মাধ্যমে তিনটি পর্বে সাজানো হয়েছে।
প্রদর্শনীতে উঠে আসা সবই ঘটেছে রাজধানীর পুরান ঢাকার বিভিন্ন অলিগলিতে ছড়িয়ে থাকা জীবনপ্রবাহ ও স্মৃতিকাতরতার চিহ্ন নিয়ে।
প্রদর্শনীর কিউরেটর তানজিম ওয়াহাব। তিনি প্রদর্শনীর পরিচিতিপত্রে লিখেছেন, ছবিগুলো অতীত থেকে ভবিষ্যতের দিকে বিস্তৃত নানা মুহূর্তের এক বিশাল সমাহার।
রোববার বাদে প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শকের জন্য উন্মুক্ত থাকবে প্রদর্শনী।