Published : 30 Aug 2024, 10:01 PM
গানে-সুরে সমাজের নানা অনিয়ম-অসঙ্গতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের বাণী ফুটিয়ে তোলা সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান আগামী দিনে দেশের রাজনীতিতে ভিন্ন মতের, ভিন্ন পরিচয়ের মানুষের স্বার্থ রক্ষায় সচেতন অনেকগুলো রাজনৈতিক দল দেখতে চান।
তিনি বলেছেন, “স্বৈরাচারের পতনের পর সবচেয়ে যে বড় প্রশ্নটা সামনে চলে আসে, সেটা হল এখন মৌলবাদের উত্থান হবে, না জানি কী হবে। এই যে ভয়, এই যে জুজুর ভুত, এই ভুতটা যেন আমাদের ঘাড়ের উপর যেন চেপে বসতে না পারে।”
শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর পরিবাগে সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে ‘কী রকম রাজনৈতিক দল চান' শীর্ষক মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন ‘ভয় বাংলায়’ গানের শিল্পী সায়ান।
নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে এই শিল্পী বলেন, “অনেক রকম রাজনৈতিক দল থাকবে, এটা হল আমার চাওয়া, যে বিভিন্ন সাংঘর্ষিক মূল্যবোধের রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের মাটিতে থাকবে। আরেকটি জিনিস চাই, অনেকগুলো দলের মধ্যে কিছু কমন জায়গা থাকবে, সেটা হল এরকম যে আমাদের দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠের যে দাপট আমরা লক্ষ্য করে থাকি, সেই জায়গাটা থেকে আমরা যেন বেরোতে পারি।”
সায়ানের ভাষায়, “যে কোনো মানু্ষই আসলে একজন মানুষ হয়ে জন্মায়, এবার জন্মানোর পরে সে দেখল, তার ধর্ম, তার জাত, তার ভাষা ইত্যাদির ভিত্তিতে আরও অনেক মানুষ। তো, তার পরে সে হঠাৎ করে এমপাওয়ার্ড ফিল করে যে আমার মত অনেক মানুষ, তাহলে আমি মনে হয় এ মাটির মানুষ।”
এই জায়গায় দ্বিমত পোষণ করে গায়ক বলেন, “আমার কাছে মনে হয়, এই বাংলাদেশের মাটিতে যদি একজন মানুষও থাকে, যে একটা ভিন্ন পরিচয় নিয়ে বসবাস করে, তাকে তার যেই মর্যাদা, সেটা যেন একজন সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ নিশ্চিত করতে পারে, সেটা যে রাজনৈতিক দল নিশ্চিত করতে পারবে, আমি আসলে সে রাজনৈতিক দলকে ভোট দেয়ার কথা চিন্তা করব।”
“অর্থাৎ এই মুহূর্তে আমাদের দেশে সবচেয়ে ভালনারেবল জনগোষ্ঠী কারা? বাঙালিরা না, মুসলমানরা না, তার বাইরে যারা।”
মৌলবাদ রুখে দেওয়ার আহবান জানিয়ে সায়ান বলেন, “আমাদের একটা শুধু ঘটনা ঘটেছে, বাকিসব বাস্তবতা কিন্তু আগের মতই। একমাস আগে যা ছিল, আমরা সেই বাংলাদেশেই আছি। এবার আমাদের সামনে অনেক কিছু বেরিয়ে এসেছে। আমাদের সামনে যেতে হবে।”
আগামী দিনে যেসব রাজনৈতিক দল থাকবে, তাদের তাছে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তার নিশ্চিয়তা চেয়ে সায়ান বলেন, “আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন, আমার চিন্তাটা কী? আমার সবচেয়ে বড় ধর্মটা হচ্ছে, আমার ধর্মের বাইরের সকল মানুষের সর্বোচ্চ অধিকার আমি নিশ্চিত করব। সেটা হচ্ছে আমার ধর্ম। আমি চাইব সেরকম দল, যে নিজে সংখ্যাগরিষ্ঠের আগে, সংখ্যালঘু বলে যাদেরকে আমরা জানি, তাদের নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করবে। এটা আমার ব্যক্তিগত দাবি। আমার বন্ধু যদি আজকে রাজনৈতিক দল গঠন করে, আমি তাকে এই পরামর্শ দেব।”
রাজনৈতিক দলগুলোকে একনায়কতন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানান সায়ান। তিনি বলেন, “প্রতি মুহূর্তে আমার মনে হয়, যে মূল্যবোধ আমরা বিশ্বাস করি, সেটা নিজের জায়গায় চর্চা করা এবং সেই অনুযায়ী দল গঠন করা। একটা দল না, অনেক দল গঠন করা। এবং যত বেশি দল থাকবে, আমার কাছে মনে হয় ততো বহুত্ববাদের চর্চা বেশি হবে।
“যে দুর্নাম আমাদের ছিল, যে বাস্তবতা থেকে আমরা মাত্র বের হলাম, যে দলটা সবাইকে ধারণ করে, ঘটনাচক্রে আমরা সেটা দেখতে পাই নাই। কিন্তু এবার যারা আসবে, বা যারা রাজনীতি করবে, তারা এই পক্ষপাত করলে আমরা পাড়ায়-পাড়ায় রুখে দিতে চাই। সোজা কথায় যারা বহুত্ববাদকে ধারণ করবে, সেরকম অনেকগুলো দলকে আমরা চাই।”
অন্যদের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক গবেষক আলতাফ পারভেজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাসুদ ইমরান আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন সভায়।