Published : 03 Jun 2024, 09:44 AM
দক্ষিণ কলকাতার ৩ লেক টেম্পল রোডের যে বাড়ির তিনতলায় এক সময় পরিবার নিয়ে বাস করতেন গুরু-শিষ্য সত্যজিৎ রায় এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সেই বাড়ির মালিকানা চলে গেছে একটি করপোরেট কোম্পানির হাতে।
ওই ভাড়া বাড়িতে বসেই বিভিন্ন সিনেমার চিত্রনাট্যের খসড়া লিখেছেন ভারতীয় বাংলা সিনেমার প্রখ্যাত পরিচালক সত্যজিৎ রায়। তার কালজয়ী গোয়েন্দা চরিত্র ফেলুদা এবং বৈজ্ঞানিক চরিত্র প্রফেসর শঙ্কুর জন্মও হয়েছিল পুরনো ওই বাড়িতে।
এছাড়া সংগীত পরিচালক হিসেবে সত্যজিতের যাত্রাও ওই বাড়িতে শুরু। সব দিক মিলিয়ে এ বাড়িকে সত্যজিতের কর্মজীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান বলে মনে করেন তার ছেলে পরিচালক সন্দীপ রায়।
বাড়ির বর্তমান অবস্থা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কলকাতার বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার।
লেক টেম্পল রোডের বারীন্দ্রনাথ বসুর কাছ থেকে তিন তলার ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়ে সত্যজিৎ থাকতে শুরু করেন ১৯৫৯ সালে। থেকেছিলেন ১৯৭০ সাল পর্যন্ত। তারপর তিনি চলে যান বিশপ লেফ্রয় রোডের বাড়িতে, যে বাড়িটি ‘রায় বাড়ি’ নামে পরিচিত।
১৯৭০ সালে টেম্পল রোডের বাড়িটি ছাড়ার পর সেটি ভাড়া নেন অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তিনি ওই বাড়িতে ছিলেন ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত। অর্থাৎ প্রায় তিন দশক বাড়িটি বাংলা চলচ্চিত্রের দুই মহা তারকার জীবনযাত্রা ও কর্মের সাক্ষী হয়ে থেকেছে।
পাঁচ বছর আগে বাড়ির মালিক বারীন্দ্রনাথ বসু মারা যান, কিছুদিন পর মারা যান তার স্ত্রীও। বছর দুই আগে তাদের তিন ছেলে বাড়িটি বিক্রি করে দেন।
এখন বাড়ির মূল কাঠামো ঠিক রেখে ভেতরে সংস্কার কাজ হচ্ছে। মূল ফটকে ‘বসু’ ফলকের পরিবর্তে লেখা হয়েছে ‘মেট্রো আর্ক—ফার্স্ট ইন সিলিকনস ইন ইন্ডিয়া’।
লেক টেম্পল রোডের বাড়ি যে বিক্রি হয়ে গেছে, সে খবর জানতেন না সত্যজিতের ছেলে সন্দীপ। আনন্দবাজারের কাছে খবরটি শোনার পর এ পরিচালক বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, "সে কী! কবে বিক্রি করা হল। ওই বাড়িতে তো আমার ছোটবেলার প্রচুর স্মৃতি।”
তিনি বলেন, “ফেলুদা এবং প্রফেসর শঙ্কু ছাড়াও ১৯৬১ সালে ওই বাড়িতেই ‘সন্দেশ’ পত্রিকার নবজন্ম হয়। ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ সিনেমার বেশ কিছু কাজও ওই বাড়িতে শুরু হয়। শেষ হয় আমাদের বর্তমান বাড়িতে এসে।”
সন্দীপ জানালেন লেক টেম্পল রোডের বাড়িতে তার শৈশবের সেরা সময় কেটেছে।
সন্দীপ বলেন, “ওই বাড়িতে ঠাকুমা, দিদা সবাই থেকেছেন। তিন তলায় থাকতাম বলে ছাদটা ছিল আমাদের উপরি পাওনা। মনে আছে, ছাদে জন্মদিন পালন এবং বাড়ির অন্যান্য অনুষ্ঠান হত। ওই বাড়িতেই রায় পরিবারে পিয়ানোর প্রবেশ। ওই বাড়ি থেকে তো বাবার সংগীত পরিচালনার সূত্রপাত। তাই ওই বাড়ি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।’’
সত্যজিতের পর ওই একই বাড়িতে সৌমিত্র কেন থাকতে শুরু করেছিলেন সে কথাও বলেন সন্দীপ।
“সৌমিত্র কাকুর আগের বাড়িটা খুব বড় ছিল না। তারপর যখন জানতে পারলেন যে আমরা চলে যাচ্ছি, তখন তিনি বাবার কাছে ওই ফ্ল্যাটেই থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। বিষয়টা এভাবেই এগোয়।’’
বাড়ির মালিকানা বদল নিয়ে অবগত নন সৌমিত্রকন্যা পৌলোমী চট্টোপাধ্যায়ও ।
তিনি বলেন “এই খবরটা জানতাম না। ওখানে অফিস হবে! ভাবতে পারছি না। ওই বাড়িতে আমরা কোনো দিন ভাড়া বাড়ি হিসেবে দেখিনি। বাবা কত ভালো ভালো কাজ ওই বাড়িতে থাকাকালীন করেছিলেন! আক্ষেপ নেই, কাউকে দোষারোপও করতে চাই না। কারণ, দিনের শেষে ওটা ব্যক্তিগত সম্পত্তি। অনেক সময়ই অনেক কিছু করে ওঠা সম্ভব হয় না।’’