Published : 09 Feb 2025, 01:08 AM
কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে পড়েছে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী; দুই পক্ষ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পৃথক নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে।
একপক্ষ বর্তমান কমিটিকে রাখার পক্ষপাতি হলেও অপরপক্ষ সাধারণ সম্পাদক বদলে জোরালো অবস্থান নেয়। এতে দুটি পক্ষ তৈরি হয়ে যায় দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মধ্যে।
শনিবার শিশু একাডেমিতে দুই দিনের জাতীয় সম্মেলনের সমাপনী পর্বে কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনাকালে দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটেছে বলে সেখানে উপস্থিত কয়েকজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন।
এক পক্ষ বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে পরের মেয়াদে দুই বছরের জন্য দায়িত্ব দিতে চাইলেও আরেক পক্ষ সাধারণ সম্পাদক পদে চান জামশেদ আনোয়ার তপনকে।
সম্মেলনের পর দুই পক্ষ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আলাদা কমিটির তথ্য জানিয়েছে।
সবশেষ কমিটির প্রচার ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক কংকন নাগের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধ্যাপক বদিউর রহমানকে সভাপতি এবং অমিত রঞ্জন দে’কে সাধারণ সম্পাদক বহাল রেখে নতুন কেন্দ্রীয় সংসদ গঠন করা হয়েছে। কমিটির বাকি সদস্যদের নাম পরে ঘোষণা করা হবে।
এ বিজ্ঞপ্তি উদীচীর অফিশিয়াল ফেইসবুক পেইজে প্রচারও করা হয়।
অপরদিকে সবশেষ কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খানের সই করা আরেকটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধ্যাপক বদিউর রহমানকে সভাপতি ও জামসেদ আনোয়ার তপনকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্রীয় সংসদের নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। সবশেষ কমিটিতে জামসেদ আনোয়ার সহসভাপতি ছিলেন।
কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, উদীচীর আরিফ নূরসহ বেশ কয়েকজন ফেইসবুকে এ বিজ্ঞপ্তি শেয়ার করেন।
এ বিষয়ে উদীচীর সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমানকে ফোন করা হলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
উদীচীর একাধিক নেতাকর্মী বলেন, অধ্যাপক বদিউর রহমান বাসায় রয়েছেন। তিনি কিছুটা অসুস্থ থাকায় ফোন ধরছেন না।
জামসেদ আনোয়ার তপন দাবি করেন, “নির্বাচনি অধিবেশনে গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া মেনেই যখন কমিটি অনুমোদন দেওয়া হচ্ছিল, তখন একটি অংশ হট্টগোল করে এবং বাধা দেয়। কিন্তু সেখানে আমাকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্রীয় সংসদের কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয় এবং নতুন কমিটির শপথ গ্রহণও করা হয়।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “শপথ গ্রহণের পর আমরা মিলনায়তন থেকে চলে আসি। পরে শুনেছি, আমরা চলে আসার পর সেখানে কিছু লোক ভাঙচুর করেছে এবং তারা কমিটিও নাকি ঘোষণা করেছে। এটা খুবই দুঃখজনক।”
সম্মেলনের সাংগঠনিক নিয়ম মেনেই সম্মেলন হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “কিন্তু পরে এই বিশংখলা খুবই দুঃখজনক।”
অপরদিকে উদীচীর ফেইসবুক পেইজে কংকন নাগের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগ করা হয়, “অধিবেশনের সভাপতি হাবিবুল আলম পুরোপুরি অগণতান্ত্রিক ও উদীচীর গঠনতন্ত্রের বিরুদ্ধে গিয়ে জোর করে নতুন কমিটি নির্বাচিত বলে ঘোষণা দেন। তাৎক্ষণিকভাবে কাউন্সিলরদের অধিকাংশ এ ঘোষণার বিপক্ষে অবস্থান নেন। কিন্তু বেশির ভাগ প্রতিনিধির মতামতকে উপেক্ষা করে হাবিবুল আলম ও জামসেদ আনোয়ার তপন এর নেতৃত্বে নতুন কমিটি ঘোষণা এবং শপথ গ্রহণের চেষ্টা করা হয়।”
এতে বলা হয়, “তবে যে শপথবাক্য তারা পাঠ করার চেষ্টা করেন সেটিও উদীচীর ঘোষণাপত্র বা গঠনতন্ত্রে নেই। এক পর্যায়ে তারা মিছিল নিয়ে সম্মেলন কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। এ অবস্থায় উদীচীর বেশিরভাগ জেলা ও শাখা সংসদের প্রতিনিধিরা হাবিবুল আলম ও জামসেদ আনোয়ার তপন-এর নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট আচরণের তীব্র নিন্দা জানান এবং তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেন।”
এ ঘটনার পরও উদীচী ভাঙবে না বলে মনে করেন অমিত রঞ্জন দে। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উদীচীকে আগেও বহুবার ভাঙবার চেষ্টা করা হয়েছে, তা সম্ভব হয়নি। এবারও হবে না বলেই মনে করি। এটা তাৎক্ষণিক উত্তেজনার বশে হয়েছে। দ্রুতই আমাদের মাঝে ঐক্য তৈরি হবে।”
এ ঘটনা নিয়ে রোববার বিকাল ৩টায় জামসেদ আনোয়ার তপনদের অংশ সংবাদ সম্মেলন করবে বলে রাতে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়েছে।
‘আমরা তো লড়ছি সমতার মন্ত্রে, থামব না কখনো শত ষড়যন্ত্রে’ স্লোগান নিয়ে বৃহস্পতিবার শুরু হয় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ২৩তম জাতীয় সম্মেলন।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে তিন দিনের এ সম্মেলন উদ্বোধন করেন উদীচীর প্রতিষ্ঠাতা সত্যেন সেনের ঘনিষ্ঠ সহচর ও প্রবীণ কৃষক নেতা লীনা চক্রবর্তী।
শনিবার সম্মেলনের তৃতীয় ও সমাপনী দিনের কার্যক্রমে সাংগঠনিক পর্ব শেষে পরবর্তী দুই বছরের জন্য নতুন কেন্দ্রীয় সংসদ গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়।
সম্মেলনে উপস্থিত থাকা কয়েকজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শনিবার সকালে সাংগঠনিক বা কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়। প্রথম দিকে ঠিকঠাকভাবে সাংগঠনিক নানা পৰ্ব অনুষ্ঠিত হয়। মধ্যাহ্নের পর নির্বাচনি অধিবেশন চলার সময় প্রস্তাবিত নতুন কেন্দ্রীয় সংসদের পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন প্রস্তাব দেওয়া হয়।
অধিবেশনে সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার পর হট্টগোলে বিভক্ত হয়ে পড়েন উদীচীর কর্মীরা।
এক পক্ষ বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে’কে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে চান। অন্য একটি পক্ষ জামসেদ আনোয়ার তপনকে চান।
উভয় পক্ষই দাবি করছেন, তারা সংগঠনের গঠনতন্ত্র মেনেই কমিটি ঘোষণা করেছেন। উভয় পক্ষের লোকজন তাদের ঘোষিত কমিটির তথ্য জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও পোস্ট দিচ্ছেন।
১৯৬৮ সালের ২৯ অক্টোবর প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গান-নাচ-কবিতা-নাটক-চলচ্চিত্রের মতো সৃজনশীল মাধ্যমকে হাতিয়ার করে সমাজের নানা অসঙ্গতি, শোষণ-বঞ্চনা-অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে চলেছে উদীচী।
সাংগঠনিক শৃঙ্খলা রক্ষা ও নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার লক্ষ্যে প্রতি দুই বছর পরপর জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করে উদীচী।
সমতার মন্ত্রে লড়াই জারি রাখার প্রত্যয়ে শুরু উদীচীর সম্মেলন