Published : 25 Feb 2025, 08:42 PM
কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটক যখন অনন্তলোকে পাড়ি দিয়েছিলেন, তখন গীতিকার কাওসার আহমেদ চৌধুরীর কাছে কলকাতা রং হারানোর এক শহরে রূপ নিয়েছিল। কাওসার উপলব্ধি করেছিলেন, প্রয়াত চলচ্চিত্রকারের প্রত্যাশার সঙ্গে তার চাওয়ার মিল ছিল অনেকখানি।
সেসব অনুভূতি নিয়ে বহু বছর আগে একটি গান বেঁধেছিলেন কাওসার। যে গান এতকাল বাদে মিউজিক ভিডিও হয়ে প্রকাশ হয়েছে শনিবার। 'স্মরণে ঋত্বিক' শিরোনামের ওই গানে কণ্ঠ দিয়েছেন সংগীতশিল্পী নাফিস কামাল, সুর করেছেন সৈয়দ কল্লোল এবং সংগীতায়োজন করেছেন তুষার রহমান।
নাফিস কামালের ইউটিউব চ্যানেলে গানটির ভিডিও চিত্র এসেছে; গান প্রকাশের দিনটি ছিল কাওসারের প্রয়াণ দিবস।
এই গায়ক বলেন, “ঋত্বিক ঘটক ও কাওসার আহমেদের জীবনে পাওয়া না পাওয়ার কথাই উঠে এসেছে গানটিতে। কাওসার আহমেদ যখন জানলেন ঋত্বিক ঘটক চলে গেছেন তখন মনে হয়েছে কলকাতায় আর কার কাছে যাব। কলকাতা আমার জন্য এত রঙিন আর কখনো হবে না।"
গানের কথা নিয়ে কামাল বলেন, "গানে কাওসার আহমেদ তুলে ধরেছেন ঋত্বিককে নিয়ে আমাদের মধ্যে যে ভাবনা তৈরি হয়, ভেতরে আন্দোলিত হওয়া সেই অনুভূতি। কাওসার আহমেদ গানে বলে গেছেন উনি ( ঋত্বিক) কী নিয়ে ভাবতেন, উনার চাওয়ার সাথে আমাদের চাওয়ার মিলে যাওয়া, তার কাছে আমাদের প্রাপ্তি, প্রত্যাশা। মনে হয় দূরত্ব ঘোচাতে এই হয়ত বর্ডারটা উঠে যাবে, মানুষের ভুলগুলো ঠিক হয়ে যাবে। ঋত্বিক তার পুরনো বাড়িটা ফিরে পাবে। এই কথাগুলোই কাওসার আহমেদ ফুটিয়ে তুলেছেন।"
গানটি আবিষ্কারের গল্প নাফিস কামাল বলেছেন গ্লিটজের কাছে।
তিনি বলেন, "প্রায় ১৫ বছর বা এরও বেশি হতে পারে প্রথম যখন গানগুলোর কথা শুনি কাওসার আংকেলের কাছে, তখন মনে হয়েছে আমাদের আবেগ এখানেই। অনেক বছর এমন কথার কথার গান শুনি না। বিষয় প্রসঙ্গ অন্যরকম। তখন মনে মনে একটা ইচ্ছা তৈরি হয় গানটা আমি করব। এই গান মানুষের জন্য গান, জীবনের জন্য।"
গানটি তৈরি ১৫ বছর সময় লেগে গেল কেন প্রশ্নে কামাল বলেছেন তার বাধ সেধেছিল তার ব্যস্ততা।
"অনেক আগেই পরিকল্পনা ছিল গানটি আমার কণ্ঠ দিয়েই প্রকাশ হোক। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে কাজ নিয়ে অনেক বেশি ব্যস্ত ছিলাম, গানটাকে এক পাশ করে রাখা ছিল আমার জীবনে।“
কামালের ইচ্ছা ছিল কাওসারের জীবদ্দশাতে গানটি তৈরি করার।
“কিন্তু এর আগে উনি চলে গেলেন৷ আমি সেসময় গানটি করতে পারিনি। কোভিড আসলে অনেক কিছু পরিবর্তন করে গেল। কোভিডে আমার মা চলে গেলেন৷ সব মিলিয়ে হয়ে উঠছিল না।"
গানের ভিডিও চিত্র তৈরির জন্য কামাল শুটিং করেছিলেন কলকাতায়। কিন্তু সেই শুটিংয়ে যা যা দৃশ্যধারণ করা হয়েছিল, পরে সেগুলো গানের আবেগের সঙ্গে ‘বেমানান’ বলে মনে হয়েছিল কামালের কাছে।
“তারপর বাদ দেই। এবার অ্যানিমেশন দিয়ে করে ফেলা হয়েছে।"
এর আগে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি গানটির অডিও প্রকাশ পায় রেডিও প্ল্যাটফর্মে।
গানটির প্রযোজনা ও পরিবেশনায় রয়েছে কুল এক্সপোজার, সহযোগিতায় ইউনিভার্সাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং স্টুডিও আবোল তাবোল।
বিজ্ঞপ্তিতে প্রযোজক সংস্থা কুল এক্সপোজারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহেদী মিথুন বলেন,"এই গানটি শুধু সংগীত নয়, বরং দুই কিংবদন্তি শিল্পীর শিল্পচিন্তা ও আবেগের প্রতিফলন। দীর্ঘদিন অপ্রকাশিত থাকার পর, এটি প্রথমবারের মত প্রকাশিত হচ্ছে, যা সংগীতপ্রেমীদের জন্য এক বিশেষ উপহার।"
‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘কোমল গান্ধার’, ‘সুবর্ণরেখা’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’-এর মতো অসামান্য সৃষ্টিকর্মের সুবাদে বাংলা চলচ্চিত্রে অমর হয়ে আছেন ঋত্বিক ঘটক।
ঋত্বিক ঘটকের জন্ম পুরান ঢাকায় ১৯২৫ সালের ৪ নভেম্বর। তার বাবা সুরেশ চন্দ্র ঘটক ছিলেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।
রাজশাহী কলেজের ছাত্র ঋত্বিক ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর কলকাতা চলে যান পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। দেশভাগের সেই বেদনা কখনো ভুলতে পারেননি তিনি। তার সৃষ্টিকর্মে ফিরে ফিরে এসেছে পূর্ব ও পশ্চিম বাংলা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় বাস্তুহারা মানুষের অসহনীয় কষ্টের দৃশ্য।
দেশের জনপ্রিয় অনেক আধুনিক গানের গীতিকার কাওসার চৌধুরী। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- আমায় ডেকো না, যেখানে সীমান্ত তোমার, আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে, কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে, এই রুপালি গিটার ফেলে, এক ঝাঁক প্রজাপতি ছিলাম আমরা, মৌসুমী, এলোমেলো বাতাসে।
গান লেখার পাশাপাশি জ্যোতিষশাস্ত্রবিদ হিসেবেও জনপ্রিয় ছিলেন।
২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি এই গীতিকার মারা যান।