Published : 17 Sep 2024, 07:46 PM
সহকর্মীদের ক্ষোভের মুখে অফিস ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন শিল্পকলা একাডেমির গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক অভিনেত্রী জ্যোতিকা পাল জ্যোতি।
মঙ্গলবার সকালে তিনি অফিসে যাওয়ার পর একাডেমির কর্মীদের একটি অংশ বিক্ষুব্ধ হয়ে তাকে চলে যেতে চাপ দেন বলে জানিয়েছেন জ্যোতি।
একাডেমির একাধিক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, জ্যোতি অফিস থেকে কিছু নথি নিয়ে যেতে চাইলে তাকে বাধা দেওয়া হয়। তাছাড়া ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ‘আলো আসবেই’ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে জ্যোতি যুক্ত থাকায় একাডেমির কর্মীদের একটি অংশ তার উপর ক্ষুব্ধ ছিল।
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দেড় মাস পর মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো অফিসে আসেন জ্যোতি। এদিন সকাল সাড়ে ১১টায় অফিসে আসার পর থেকেই একাডেমির কর্মীদের একটি অংশ তার কক্ষের সামনে এসে তাকে অফিস থেকে চলে যেতে বলেন।
জ্যোতি আওয়ামী লীগ সরকারের ‘দোসর’ এবং ‘রাজনৈতিক ক্ষমতাকে’ কাজে লাগিয়ে তিনি শিল্পকলায় পরিচালকের দায়িত্ব নিয়েছেন বলে অভিযোগ তোলেন বিক্ষুব্ধরা।
জ্যোতিকা জ্যোতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ২০১৬ সালে ময়মনসিংহ-৩ আসনে উপ-নির্বাচনের অংশ নেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্রও কিনেছিলেন তিনি। পরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নৌকার টিকিট চেয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের শেষের দিকে গত বছরের ১৪ মে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিচালকের দায়িত্বে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান জ্যোতি।
শিল্পকলায় তার সঙ্গে কী হয়েছে জানতে চাইলে জ্যোতিকা জ্যোতি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি তো এখনও শিল্পকলা একাডেমির পরিচালক পদে বহাল আছি। আমাকে দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সেই নিয়োগ তো বাতিলও করা হয়নি, আমিও পদত্যাগ করিনি। তাহলে আমি আমার অফিসে যেতে পারব না কেন? নিজের অফিসে গিয়ে এমন আচরণের মুখোমুখি হব, আশা করিনি।”
সরকার পতনের পর গত ১২ অগাস্ট পদত্যাগ করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। পরে নাট্যনির্দেশক ও শিক্ষক সৈয়দ জামিল আহমেদকে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দেয় সরকার।
জ্যোতি বলেন, “আমি নতুন মহাপরিচালকের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম। আমার কাজের ব্যাপারে কথা বলতে এসেছিলাম। কিন্তু এমন ঘটনার মুখোমুখি হব আশা করিনি।”
শিল্পকলা একাডেমির সিনিয়র ইনস্ট্রাক্টর আইরিন পারভীন লোপা বলেন, “স্বৈরাচার সরকারের দোসর জ্যোতিকা জ্যোতিকে অফিসে দেখে আমরা একাডেমির কর্মীরা হতবাক হয়েছি।
“দেশের মানুষ যখন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে, তখন তিনি শিল্পকলার পরিচালক হয়েও ‘আলো আসবেই’ নামের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত থেকে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করতে উৎসাহিত করেছেন। এজন্য একাডেমির বিক্ষুব্ধ কর্মীরা তাকে অফিস থেকে চলে যেতে বলেছেন। আমরা এমন সহকর্মীর সঙ্গে কাজ করতে চাই না।”
জ্যোতি এদিন খুবই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন বলেও জানান লোপা।
“একাডেমি থেকে কিছু নথি নিয়ে যেতে চাইলে একাডেমির কর্মীরা বাধা দেন। পরে তিনি চলে যান,” বলেন একাডেমির এই কর্মকর্তা।
তবে একাডেমি থেকে নথি সরানোর চেষ্টার অভিযোগ ঠিক নয় বলে জানিয়েছেন জ্যোতি।
অপ্রীতিকর পরিস্থিতি দেখে একাডেমির মহাপরিচালক ও সচিবকে বিষয়টা জানিয়ে সেখান থেকে চলে আসেন বলেও জানান।
এ বিষয়ে জানতে একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ এবং সচিব সালাহউদ্দিন আহাম্মদকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা কেউই ফোন রিসিভ করেননি।