Published : 04 Jul 2024, 09:59 PM
খ্যাতিমানরা খ্যাতির বিড়ম্বনায় অভ্যস্ত; ব্যতিক্রম ছিলেন না মহানায়ক দিলীপ কুমারও। যেখানেই গেছেন, ভক্ত, অনুরাগী আর সাংবাদিকরা ছেঁকে ধরেছেন তাকে। কিন্তু এক বিমানযাত্রায় তার হয়েছিল ভিন্ন অভিজ্ঞতা।
ভারতীয় সংবাদমাধম্য ‘দ্য ওয়াল’ নায়কের আত্মজীবনী থেকে তুলে এনেছে দিলীপ কুমারের জীবনের সেই ঘটনা।
অনেক বছর আগে এক বিমানযাত্রায় দিলীপ কুমারের অটোগ্রাফ নিতে বিমানের মধ্যেই হুড়োহুড়ি পড়ে যায় যাত্রীদের মধ্যে। কিন্তু নায়কের ঠিক পাশে বসে থাকা এক বৃদ্ধ যাত্রীর মধ্যে তাকে নিয়ে কোনো আগ্রহ দেখা যায় না। সাধারণ চেক শার্ট ও প্যান্ট পরা এই বৃদ্ধ হাতে থাকা খবরের কাগজ পড়লছিলেন আর মাঝে মধ্যে জানালা দিয়ে বাইরের আকাশ দেখছিলেন।
দিলীপ তার জীবনীতে লিখেছেন, সময় যত বাড়তে থাকে, ওই বৃদ্ধের নির্লিপ্ততা ততটাই অস্বস্তিকর হয়ে উঠতে থাকে তার কাছে।
‘আমার বিস্ময়ের মাত্রা বাড়তে থাকে। বহু বছর আমার চারপাশে এমন কোনো মানুষ দেখিনি, যারা আমাকে চেনেন না বা আমাকে দেখার জন্য অস্থির নন। ভদ্রলোক একবার চা খেলেন, তবুও পাশের হিরোর দিকে তাকালেন না।”
এ ঘটনায় কৌতুহল আরো বেড়ে গেল। দিলীপ লিখেছেন, “এরপর আমি নিজেই ভদ্রলোকের চোখে চোখ রেখে তাকালাম। উনি আমার দিকে তাকিয়ে হ্যালো বললেন।”
এরপর নিজে থেকে বৃদ্ধের সঙ্গে কথা আগানোর সিদ্ধান্ত নেন দিলীপ।
“আপনি সিনেমা দেখেন? বৃদ্ধ বললেন, “হ্যাঁ খুব অল্প! তবে দীর্ঘদিন কিছু দেখা হয়নি।”
এরপর কথায় কথায় দিলীপ জানান, তিনি সিনেমায় কাজ করেন।
এ কথা শুনে বৃদ্ধ বলেন, “বাহ! কি কাজ করেন আপনি ফিল্মে?”
দিলীপের উত্তর, “আমি সিনেমার অভিনেতা। লোকে হিরো বলে।”
নিজেকে নায়ক হিসেবে পরিচয় দেওয়ার পরও যখন ওই বৃদ্ধের মধ্যে আগ্রহ জাগাতে ব্যর্থ হলেন দিলীপ, তখন ভাবলেন, আর কথা বাড়িয়ে কাজ নেই।
দিলীপ তার জীবনীতে লিখেছেন, মূল ঘটনা ঘটে যায় বিমান থেকে নামার পর বিমানবন্দরে।
চলে যাওয়ার সময় দিলীপ ওই বৃদ্ধের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নিজের নাম জানান।
উত্তরে বৃদ্ধ নিজের পরিচয় বলেন, “ধন্যবাদ, আমি জে আর ডি টাটা।”
এই পরিচয় শুনে দারুণ অবাক হয়ে সেখানে থমকে যান দিলীপ কুমার।
জে আর ডি টাটার পুরো নাম জাহাঙ্গীর রতনজী দাদাভাই টাটা, যিনি ছিলেন ভারতের প্রথম লাইসেন্সপ্রাপ্ত বিমানচালক এবং টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস, টাটা মোটরস, টাইটান ইন্ডাস্ট্রিজ, টাটা সল্ট, ভল্টাস এবং এয়ার ইন্ডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা।
কর্মক্ষেত্রে অবদানের জন্য ফ্রান্স সরকার তাকে ১৯৮৩ সালে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘লেজিয়ন অব অনর’ দেয়।
এছাড়া ভারত সরকার তাকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘পদ্মবিভূষণ’ এবং সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘ভারতরত্নও’ দিয়েছিল।
ওইদিন যে বিমানে দিলীপ কুমার ভ্রমণ করছিলেন, সেটির মালিকও ছিলেন জে আর ডি টাটা।
দিলীপের ভাষ্য, জীবনের যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনা তার স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করেছে, সেগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
আত্মজীবনীতে দিলীপ কুমার লিখেছেন, “একজন মানুষ কত বড়, কত ধনী, সেটা অন্য কাউকে বুঝিয়ে দেওয়ার কিছু নেই আসলে। কারণ মনে রাখা উচিত আপনার থেকেও কেউ বড় মানুষ আছেন পৃথিবীতে। যা আমি এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েছিলাম। তাই নম্র হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। শিখরে উঠলেও সাধারণ থেকে মাটিতে পা রেখে চলতে হবে জীবনে।”