Published : 25 May 2025, 12:53 PM
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘পথের পাঁচালির’ চলচ্চিত্রায়ন ঘটিয়ে ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার ঝুলিতে পুরোছিলেন নির্মাতা লেখক আঁকিয়ে সত্যজিৎ রায়। ‘পথের পাঁচালির’ পরের দুটি সিনেমা ‘অপরাজিত’ ও ‘অপুর সংসার’। ‘অপরাজিতর’ সাফল্য সত্যজিৎকে আন্তর্জাতিক মহলে আরও পরিচিত করে তোলে।
সত্যজিৎ তার দীর্ঘ নির্মাতা জীবনে একের পর সিনেমা দর্শকদের উপহার দিয়েছেন। কিন্তু সবগুলোর মধ্যে এই ট্রিলজি অর্থাৎ ‘পথের পাঁচালি’, ‘অপরাজিত’ ও ‘অপুর সংসার’ এই নির্মাতার কাছে সবচেয়ে ‘পছন্দের কাজ’ বলে জানিয়েছে ভারতীয় অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর। যার সিনেমার পথচলা সত্যজিতের হাত ধরে।
কিংবদন্তী নির্মাতার পছন্দের সিনেমার কথা শর্মিলা জানিয়েছেন আনন্দবাজারের কাছে।
পছন্দের সিনেমার কথা কীভাবে জানতে চাইলেন প্রশ্নে শর্মিলা বলেন, “আপনি যেমন আমার সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন, ঠিক তেমনই আমিও সত্যজিৎ রায়ের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। আমি জানতে চেয়েছিলাম নিজের পরিচালিত কোন সিনোমাগুলো আপনার সবচেয়ে পছন্দ?
শর্মিলার এই প্রশ্নে সত্যজিৎ জানিয়েছিলেন, অপু ট্রিলজির ‘পথের পাঁচালি’, ‘অপরাজিত’ ও ‘অপুর সংসার’ তার সবচেয়ে পছন্দের কাজ। এসবের পরে ছিল ‘অরণ্যের দিনরাত্রির’ নাম।
শর্মিলা বলেন, “এই সিনেমার নাম বলেই মানিকদা (সত্যজিৎ রায়) আমার দিকে তাকিয়ে বলেন যে ‘এই সিনেমায় তো তুমি আছ’।”
‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ সিনেমার ফোর-কে সংস্করণের প্রিমিয়ার হয়েছে ফ্রান্সের সাগরপাড়ে ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে।
নতুন সংস্করণটি তৈরি করেছে দ্য ফিল্ম ফাউন্ডেশনের ওয়ার্ল্ড সিনেমা প্রজেক্ট। প্রদর্শনী উপলক্ষে কানে গিয়েছিলেন সিনেমার অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর, সিমি গাড়েওয়াল, প্রযোজক পূর্ণিমা দত্তসহ সিনেমা সংশ্লিষ্ট আরও অনেকে।
সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ উপন্যাস অবলম্বনে সত্যজিৎ রায় একই নামের সিনেমা তৈরি করেন ১৯৭০ সালে।
ওই সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়, শমিত ভঞ্জ, রবি ঘোষ, শর্মিলা ঠাকুর, কাবেরী বসু, মিমি গঙ্গোপাধ্যায়সহ আরো কয়েকজন।
‘অরণ্যের দিনরাত্রির’ শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন শর্মিলা।
তিনি বলেন, “আমরা তাকে মানিকদা বলে ডাকতাম। তার হাতে লেখা চিত্রনাট্য থাকত। সংলাপ মুখস্থ করতে বলতেন না মানিকদা।”
একটি বিশেষ দৃশ্যের জন্য আগে থেকে কোনো ধরনেরে প্রস্তুতি নিতেও সত্যজিৎ নিষেধ করতেন বলে জানিয়েছেন শর্মিলা।
“তিনি চাইতেন, কিছু প্রতিক্রিয়া যেন অভিনেতাদের ভেতর থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসে।”
শর্মিলার কথায়, সিনেমায় মেমরি গেমের একটি দৃশ্য ছিল। সেই দৃশ্যের জন্য রবি ঘোষকে নিজের মত করে সংলাপ বলতে ও প্রতিক্রিয়া দিতে দিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। কিন্তু চরিত্রের কথা মাথায় রেখে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে সত্যজিৎ সেটা করতে দেননি বলে জানিয়েছেন শর্মিলা।
এই সিনেমার গল্পে চার বন্ধু, অসীম, সঞ্জয়, হরি ও শেখর কলকাতায় বসবাস করেন। ছুটি কাটাতে পালামৌতে আসেন। সেখানে একটি ট্যুরিস্ট বাংলোতে থাকেন।
উদ্দেশ্যহীনভাবে জঙ্গলে ঘুরতে বের হলেও নানান ঘটনায় আন্তসম্পর্কের গল্প হয়ে এগিয়ে চলে ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’র চরিত্রগুলো।
এই কয়েকটি সিনেমা ছাড়াও সত্যজিতের ‘পরশপাথর’, ‘জলসাঘর’, ‘তিন কন্যা’, ‘দেবী’, ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’, ‘ঘরে-বাইরে’, ‘চারুলতা’, ‘চিড়িয়াখানা’, ‘অরণের দিনরাত্রি’, ‘নায়ক’, ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’,‘হীরক রাজার দেশে’, ‘সোনার কেল্লা’, ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’, ‘গণশক্র’, ‘শাখা-প্রশাখা’, ‘আগন্তুক’সহ আরও সিনেমা দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে।