Published : 23 Feb 2025, 09:45 PM
মুক্তি পাওয়া সিনেমার মধ্যে কোনটি ভালো চলবে, সেটি বিবেচনায় নিয়ে প্রেক্ষাগৃহে দেখানো হবে। আর এই সিনেমা বাছাইয়ের কাজটি করবে হল মালিকদের গড়া একটি কমিটি। এই কমিটি সিনেমা আমদানির বিষয়েও কাজ করবে।
সিনেমার অভাবে ধুঁকতে থাকা হল মালিকরা ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে এবং সিনেমা মুক্তিতে শৃঙ্খলা আনতে এই কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যাকে তারা বলছেন ‘ফিল্ম রিলিজ কমিটি’।
রোববার চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি সাধারণ সভায় এই কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। যেখানে উপস্থিত ছিলেন সারাদেশের প্রায় ৩০ জন হল মালিক।
সভায় গ্লিটজের এক প্রশ্নে ঢাকার লায়ন সিনেমা হলের কর্ণধার মির্জা আব্দুল খালেক বলেন, “আমরা সিনেমা হলের মালিকরা এবং প্রদর্শক সমিতির পক্ষ থেকে সিনেমা মুক্তি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ‘ফিল্ম রিলিজ কমিটি’ তৈরি করব।
“আমরা ৫০ জন হল মালিক লিখিতভাবে একত্রিত হয়েছি। তাদের সিদ্ধান্ত নিয়েই পাঁচ থেকে সাতজনের কমিটি তৈরি করা হচ্ছে। আমাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সারাদেশে সিনেমা মুক্তি দেওয়া হবে।”
‘ফিল্ম রিলিজ কমিটি’ কর্মপরিধি সম্পর্কে জানতে চাইলে খালেক বলেন, “এই কমিটির কাজ হবে সিনেমা সিলেকশন করা, মুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া, ওটিটির জন্য তৈরি সিনেমা হলে মুক্তিতে বাধা দেওয়া এবং সিনেমা আমদানি করা।”
খুব শিগগিরই একটা নীতিমালা তৈরি করে এই কমিটির ঘোষণা দেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
কমিটির কাজের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রদর্শক সমিতির সহ সভাপতি মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, “সিনেমা সেন্সরের পর তারা রিলিজ কমিটির কাছে আবেদন করে জানাবে আমরা এত তারিখে সিনেমাটি মুক্তি দিতে চাই। রিলিজ কমিটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার করে সেটা হলে মুক্তি দিবে।”
রিলিজ কমিটির জন্য সরকারি অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কি না এই প্রশ্নে সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, “আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কাছে আবেদন জানিয়েছে, এটা বিবেচনাধীন আছে। হয়ত এক-দুইদিনের মধ্যে অনুমোদন পেয়ে যাব। তবে আমাদের যেহেতু লাইসেন্স আছে তাই আমাদের আইনি অনুমোদনের প্রয়োজন নেই।”
সাধারণ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বগুড়ার মধুবন সিনেপ্লেক্সের মালিক রোকনুজ্জামান ইউনূস, যশোরের মণিহারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউল ইসলাম, সিরাজগঞ্জের রুটস সিনেক্লাবের কর্ণধার সামিনা ইসলাম নি, অনামিকা নাসরিন জামালপুরের কুইন সিনেপ্লেক্স, বরিশালের অভিরুচি সিনেমা হলের মালিক মো.জাহাঙ্গীর আলম, আনন্দ সিনেপ্লেক্সের মালিকআনিসুর রহমানসহ অনেকে।
সাধারণ সভায় হল মালিকরা সিনেমা আমদানির উপর জোর দেন। বড় সিনেমার ফাঁকে হলগুলো বাঁচাতে সিনেমা আমদানি করতে চান তারা এবং দাবি আদায়ে একতাবদ্ধ হয়ে মাঠে নামার কথাও জানিয়েছেন হল মালিকরা।
প্রদর্শক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিরাজগঞ্জের রুটস সিনেক্লাবের কর্ণধার সামিনা ইসলাম নি বলেন, “আমাদের সিনেমা আমদানি করতে দেওয়া হচ্ছে না। সিনেমা তো একটা পণ্য, সকল দেশের সকল পণ্য আসছে, তাহলে সিনেমা আমদানিতে এত বাধা কেন?
“আমরা নিয়ম মেনে ভ্যাট দিয়েই সিনেমা আমদানি করি। সিনেমা শিল্প বাঁচাতে আমাদের সবাইকে একতাবদ্ধ হতে হবে। হল যদি না থাকে চলচ্চিত্র থাকবে না।”
তিনি বলেন, “আমাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন না হলে হল বন্ধ করে দিতে হবে। একযোগে সকল হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিতে হবে। এই সিদ্ধান্তে সবাই একমত হওয়ার পরে যদি কেউ ব্যত্যয় ঘটায় তার বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যেতে হবে।”
একই কথা বলেছেন সমিতির আইন বিষয়ক সম্পাদক ও বগুড়ার মধুবন সিনেপ্লেক্সের মালিক রোকনুজ্জামান ইউনূসও।
ইউনূস বলেন, “আমরা সিনেমা আনব, পৃথিবীর যেকোনো দেশ থেকে হোক। এনে সেন্সর বোর্ডে জমা দিব, সেন্সর বোর্ড সিদ্ধান্ত নিবে সিনেমাটি চলার মত কি না। সিনেমা ব্যবসা নেই, সারা বছর সিনেমা নাই, ঈদে দুই একটা সিনেমা আসে। হল মালিকরা কীভাবে টিকে থাকবে? এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে রিলিজ কমিটি প্রয়োজন।”
আরও পড়ুন:
সিনেমা আমদানি: দাবি আদায়ে 'প্রয়োজনে' সারাদেশে হল বন্ধের পরিকল্পনা