Published : 08 Jan 2024, 09:18 AM
কোনো সিনেমার সফলতার সিঁড়ি মূলত কাহিনী বা গল্প, যা দর্শককে টানে যুগের পর যুগ; যদিও এর পেছনের কারিগররা থাকেন আড়ালেই।
লেখক বা স্ক্রিনরাইটারদের স্ক্রিপট পর্দায় ফুটে উঠলেও সাধারণ দর্শক মহল তাদের কমই চেনে। এই লেখকদের সিনেমাই বক্স অফিসে ঝড় তুললে কোটি কোটি টাকা আয় করে নির্মাতা কোম্পানি; বিপরীতে স্ক্রিনরাইটাররা পান ‘যৎসামন্যই’।
লেখালেখির এই পেশা বিশেষ করে বলিউডে এখনও ‘লাভজনক অবস্থানে যেতে পারেনি’। যে কারণে নিজেদের অবস্থা পরিবর্তনে এখন সংগ্রাম করছেন তারা।
লেখকরা বলছেন, লেখালেখির পেশাকে লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে যেতে না পারার প্রধান কারণ হল প্রযোজক বা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ‘কঠোর চুক্তি’, যেখানে প্রযোজকদের স্বার্থ রক্ষা করতে বাধ্য হন লেখকরা।
হলিউডের লেখক সংঘ ‘রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকা’র মত বলিউডে রয়েছে ‘স্ক্রিনরাইটারস অ্যাসোসিয়েশন’ (এসডব্লিউএ)। ৫৫ হাজারেরও বেশি সদস্য রয়েছে এতে।
বলিউডের এই লেখক সংঘের সিনিয়র সদস্য আনজুম রাজাবলী বিবিসিকে বলেন, বেশিরভাগ চুক্তিতে কঠোর ধারা বা শর্ত জুড়ে দেওয়া থাকে। সামান্য ফি’র প্রস্তাব থাকে, বিশেষ করে নতুন লেখকদের জন্য।
“কোনো খসড়া লেখা বা স্ক্রিপট যখন পুনর্নির্মাণ করা হয়, তার জন্য লেখকদের অর্থ দেওয়া হয় না। স্ক্রিন রাইটাররা কোথায় তাদের কাজের কৃতিত্ব পাবেন, সেই সিদ্ধান্তও নির্ভর করে প্রযোজকের ওপর।”
“প্রযোজকের সঙ্গে বিরোধ হলে ইউনিয়নের শরণাপন্ন হতেও লেখকদের নিষেধ করা হয় কিছু চুক্তিতে” বলেন আনজুম রাজাবলী।
বিবিসি জানায়, লেখকদের অধিকারের ব্যাপারে কয়েক দশক ধরে তাদের সচেতন করে আসছে এসডব্লিউএ। কিন্তু সম্প্রতি লেখক ও প্রযোজকদের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা কমাতে আরও ইতিবাচক পথ খুঁজছে সংঘটি।
লেখকরা প্রযোজকদের সঙ্গে চুক্তিতে যে পরিবর্তনগুলো দেখতে চান, সেসব বিষয়ে নিয়ে গত ডিসেম্বরে একটি সভা করে এসডব্লিউএ। আব্বাস টায়ারওয়ালা ও শ্রীরাম রাঘবনের মত বলিউডের বড় স্ক্রিনরাইটাররাসহ শতাধিক লেখক ছিলেন সেখানে।
রাজাবলী বলেন, “এখনকার পরিকল্পনা হল চুক্তিগুলোকে আরও ন্যায়সঙ্গত করতে আমাদের সঙ্গে কাজ করার জন্য প্রযোজকদের আলোচনার টেবিলে আমন্ত্রণ জানাব। ‘বেশিরভাগ প্রযোজক একমত’ যে, লেখকদের আরও ভালো বেতন ও চাকরির নিরাপত্তা প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে জানতে ‘প্রডিউসার গিল্ড অব ইন্ডিয়া’কে এক মেইলের পর তাৎক্ষণিক কোনো জবাব পায়নি বিবিসি।
গত বছর লেখকদের অধিকার আদায়ে কয়েক মাস ধরে ধর্মঘট পালিত হয়েছে হলিউডে। তারা মজুরি বৃদ্ধির পাশাপাশি স্ক্রিন রাইটিংয়ে এআই প্রযুক্তির ব্যবহার বন্ধের দাবিও তুলেছিলেন। ওই কর্মসূচি পালনকালে সিনেমা সংশ্লিষ্ট সকল থেমে গিয়েছিল। একপর্যায়ে লেখকদের দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে সম্মত হন প্রযোজকরা।
ওই আন্দোলন কর্মসূচিতে সফলতা আসার পর তা ভারতীয় স্ক্রিন রাইটারদেরও আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছে। নিজেদের দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে সোচ্চার হতে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।
তবে ভারতে সেই আন্দোলন এখনও প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে। ধর্মঘটের মত কঠোর কোনো কর্মসূচি শিগগিরই হবে না বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
বলিউডে লেখকদের কাজ পাওয়ার প্রধান উপায় হল ভালো সম্পর্ক। আর অল্প সংখ্যক লোকই ভালো সুযোগ পান।
বলিউডে স্ক্রিন রাইটারদের সঙ্গে চুক্তির চর্চাটাও নতুন। ২০০০ এর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্তও লেখকরা তাদের মজুরি পেতে প্রযোজকদের কথার ওপরই নির্ভর করতেন। এমনকি কোনো স্ক্রিপটের জন্য মৌখিকভাবেই আলোচনা করে নিতেন লেখক ও প্রযোজকরা। আর লেখকরা মজুরিও পেতেন অনিয়মিতভাবে।
এসডব্লিউএ’র আনজুম রাজাবলী বলেন, “বড় কোম্পানিগুলো স্টুডিওতে অর্থা ঢালা শুরু করলে চুক্তিবদ্ধ হওয়া শুরু করেন লেখকরা। কিন্তু প্রযোজকরা লাভের হিসাব বাড়িয়ে আর্থিক ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা করেন। এর ফলে লেখকদের সঙ্গে চুক্তি অনেক কঠোর এবং অনেক বেশি ‘অযৌক্তিক’ করে ফেলা হয়।”