Published : 09 Aug 2023, 11:07 AM
ঘটা করে জন্মদিন উদযাপনে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন না রামেন্দু মজুমদার; তাই শুভানুধ্যায়ীরা তার জন্মদিন ঘিরে বড় কোনো আয়োজনের পরিকল্পনা করলেও নিষেধ করে দেন।
বুধবার রামেন্দু মজুমদারের ৮২তম জন্মবার্ষিকী। এ দিনটাও সাদামাটাভাবে কাটিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা তার। তবে কাছের মানুষেরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুভেচ্ছার ফুলঝুরি ছড়িয়ে দিচ্ছেন ঠিকই।
ঘটা করে জন্মদিন উদযাপন না করলেও সবার শুভেচ্ছা ও ভালোবাসার বার্তায় আপ্লুত হন বলেও জানান রামেন্দু মজুমদার।
জন্মদিনের সকালে গ্লিটজকে তিনি বলেন, "সবাই যে শুভেচ্ছা জানায়, এটা তো সবাই ভালোবাসে বলেই। সবার এই ভালোবাসাটা পেতে ভালোই লাগে।"
এক প্রশ্নে রামেন্দু মজুমদার বলেন, "প্রতি বছর জন্মদিনটা পরিবারের সদস্যদের নিয়েই উদযাপন করি, এছাড়া আমার নাট্যদল 'থিয়েটার' ঘরোয়া কিছু আয়োজন করে। ওরা বড় করে আয়োজন করার জন্য চাপাচাপি করে, কিন্ত আমি আগ্রহ দেখাই না। এবার ওদের ঘরোয়া কিছু করতেও মানা করে দিয়েছি।"
আয়োজনে অনীহার কারণ জানতে চাইলে রামেন্দু মজুমদার বলেন, "ঘটা করে উদযাপন আমার ভালো লাগে না। জন্মদিনের অনুষ্ঠানে এসে সবাই অহেতুক প্রশংসা করতে থাকে, সেটা সামনে বসে শোনাটা খুব বিব্রতকর। আর এবার আমার নাতনীর শরীরটাও একটু খারাপ। তার জন্য পারিবারিক আনন্দটাও সেভাবে হচ্ছে না।"
একবার অনেক জোর করে নাসির উদ্দীন ইউসুফ একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন বলে জানান রামেন্দু মজুমদার।
লক্ষ্মীপুরের সন্তান রামেন্দু মজুমদার কিছুদিন আগে দুই বছরের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিণ্ডিকেট সদস্য হয়েছেন। কয়েক বছর ধরে তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্যও। এছাড়া গত কয়েক বছর ধরে তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েরও সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এই মঞ্চ নির্দেশনের জন্ম ১৯৪১ সালে। ছাত্র থাকা অবস্থায় থিয়েটারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। পরে বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনকে বেগবান করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। নাট্যসংগঠন ‘থিয়েটার’ এর সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন শুরু থেকেই। পাঁচ দশক ধরে নাট্যবিষয়ক পত্রিকা ‘থিয়েটার’ সম্পাদনা করছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে পড়ালেখা শেষ করে পেশা হিসেবে তিনি শিক্ষকতাকে বেছে নিয়েছিলেন। নোয়াখালীর চৌমুহনী কলেজে বছর তিনেক শিক্ষকতার পর পেশা পরিবর্তন করে ১৯৬৭ সালে পাকিস্তানের করাচিতে বিজ্ঞাপনশিল্পে যোগ দেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের কয়েকটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন রামেন্দু মজুমদার। বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা ও বিবৃতির একটি ইংরেজি সংকলন সম্পাদনা করে তিনি দিল্লি থেকে প্রকাশ করেছেন।
রামেন্দু মজুমদার বেতার ও টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করছেন ১৯৬২ ও ১৯৬৫ সাল থেকে। মঞ্চে অভিনয় করছেন ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে। বাংলাদেশের নব নাট্যচর্চা ও আন্দোলনে তিনি ভূমিকা পালন করে চলেছেন।
নাট্যদল ও পত্রিকার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছাড়াও ‘আবদুল্লাহ আল-মামুন থিয়েটার স্কুল’ এর অধ্যক্ষ, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।
জাতিসংঘের সংস্থা ইউনেস্কোর অধীনে পরিচালিত নাট্য সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট’ এর সভাপতি হিসেবে পরপর দুবার দায়িত্ব পালন করেছেন রামেন্দু মজুমদার। ১৯৮২ সালে এ সংগঠনের বাংলাদেশ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
২০০৯ সালে একুশে পদক পাওয়া রামেন্দু মজুমদারের মৌলিক ও সম্পাদিত গ্রন্থ সংখ্যা ৩০টি। বাংলা একাডেমি তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ দিয়েছে।
অভিনয়শিল্পী ফেরদৌসী মজুমদার তার স্ত্রী। অভিনয়শিল্পী ও নির্দেশক ত্রপা মজুমদার এই দম্পতির একমাত্র সন্তান।