Published : 05 Sep 2022, 12:43 AM
‘আলমগীর কবিরের চলচ্চিত্রচিন্তা ও জাতীয় মুক্তিভাবনা’ নিয়ে আলোচনায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চলচ্চিত্রে তার ব্যথিত হওয়ার কথা উঠে এল।
শনিবার ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির আয়োজনে এই আলোচনা অনুষ্ঠান হয় ঢাকার মোহাম্মদপুরের কলাকেন্দ্রে।
আলমগীর কবির জাতীয় কারণেই গুরুত্বপূর্ণ দাবি করে ড. নাদির জুনায়েদ বলেন, “আর আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যাদের কাছ থেকে আমাদের শেখা উচিৎ তাদের গুরুত্বটা আমরা ভুলে গিয়েছি।
“তার সময়ে আলমগীর কবির কঠোর সমালোচনা করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রের। কারণ তিনি দেখিয়েছিলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আসল যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং মনস্তাত্ত্বিক দিকগুলো আছে, সেই দিকে আমাদের চলচ্চিত্রে না গিয়ে বরং বাজারমুখী চলচ্চিত্র হয়েছে। এটা মুক্তিযোদ্ধা চলচ্চিত্রকার আলমগীর কবিরের জন্য বেদনার ছিল।”
আলোচনায় অংশ নিয়ে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, “মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের যে পরাজয় ঘটেছে, এটা আলমগীর কবির বুঝতে পেরেছিলেন। এই চিন্তাটা তার ছবি ও লেখা পড়লে দেখতে পাওয়া যায়।
“বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, বাংলাদেশ রাষ্ট্র হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে, কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জয়ী হয়নি। এর কারণটা বোঝার জন্য আমাদের আহমদ ছফাকে পড়তে হবে এবং এই কারণটা বোঝার জন্য আলমগীর কবিরের লেখা পড়তে হবে।”
নাদির জুনাইদ বলেন, “আমাদের চলচ্চিত্র চিন্তাশীলতার দিক থেকে খুব পিছিয়ে আছে। এর কারণ আমরা আমাদের চলচ্চিত্রে ফর্ম এবং কনটেন্টের দিকে থেকে কোনো নতুন ভাষা গড়ে তুলতে পারছি না।
“আমরা ভুলে গিয়েছি আলমগীর কবিরের মতো চলচ্চিত্রকারকে, আমরা ভুলে যাচ্ছি চিন্তাশীল চলচ্চিত্রের প্রয়োজনীয়তার কথা।”
আলমগীর কবিরকে চলচ্চিত্রার্য উপাধি দেওয়া হলেও তার মূল্যায়ন নেই অভিযোগ করেন ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি লেখক বেলায়াত হোসেন মামুন।
তিনি বলেন, “দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশের বেশ অনেকগুলো সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলচ্চিত্র পড়ানো হলেও আলমগীর কবিরকে পড়ানো হয় না।
“বাংলাদেশের কোনো সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্রের সিলেবাসে এখনও জহির রায়হান, আলমগীর কবির ও তারেক মাসুদ পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত নয়।”
মামুন বলেন, “বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিক্ষার্থীরা এখনও নিজেদের দেশের চলচ্চিত্রকার ও চলচ্চিত্র চিন্তাকে সিলেবাসের মধ্যে পাচ্ছে না। এই যদি অবস্থা হয় তাহলে আমরা আগামী প্রজন্মকে দেশীয় চলচ্চিত্র সংস্কৃতির বিষয়ে সচেতন করে গড়ে তুলতে পারবো না।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক চলচ্চিত্র নির্মাতা অদ্রি হৃদয়েশ।
আয়োজকরা জানায়, মূলত চলচ্চিত্রচিন্তার বিবিধ বিষয়ে আলোচনা-তর্ক ও ভাবনা বিনিময়ের একটি তৎপরতা হলো ‘চলচ্চিত্রের বাহাস পর্ব’। এর ৩৫তম বৈঠক অনুষ্ঠিত হল শনিবার।