Published : 18 Jun 2025, 08:08 PM
রক্তদান এমন একটি মানবিক ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ যা মানুষের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করে। অনেকে নিয়মিত রক্তদান করে। আবার অনেকে এখনো শুরু না করলেও মনে মনে নিজেকে উৎসাহিত করছে।
রক্তদানের আগে বা পরে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে রক্তদান নিয়ে এমন অনেক সাধারণ প্রশ্ন ও তার উত্তর দেওয়া হয়েছে।
সংস্থাটি বলছে, রক্তদান জীবন বাঁচানোর একটি উপায়। মায়ের গর্ভকালীন জটিলতা, দুর্ঘটনা, ক্যান্সার বা রক্ত শূন্যতার মত অবস্থায় রক্ত প্রয়োজন হয়। রক্ত অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায় না তাই দরকার নিয়মিত রক্তদাতা।
রক্তদাতা ও গ্রহীতার স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য প্রতিবার রক্ত দেওয়ার আগে কিছু নিয়ম মেনে চলা হয়। এসময় ছোট একটি স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করা হয়। যেখানে আগ্রহী রক্তদাতার হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ ও ওজন মাপা হয়। এক ফোঁটা রক্ত নিয়ে দেখা হয় আগ্রহী ব্যক্তি রক্তশূন্য কিনা।
রক্তদাতার শরীর যদি সেই দিন রক্ত দেওয়ার জন্য উপযুক্ত না হয় তাহলে রক্ত নেওয়া হবে না। এছাড়া রক্তদাতা যদি কোনো কারণে রক্তদানের উপযুক্ত না হয় তাহলে তাকে তা বলে দেওয়া হয়।
রক্ত সংগ্রহের প্রক্রিয়া নিয়ে সংস্থাটি বলেছে, এটি একটি সহজ প্রক্রিয়া। রক্তদাতাকে আরামদায়ক একটি চেয়ারে বা বিছানায় রাখা হয়। তারপর জীবাণুমুক্ত সূঁচ দিয়ে রক্ত নেওয়া হয় যা একটি ব্যাগে জমা হয়। সাধারণভাবে ১০ মিনিটেই রক্তদান সম্পন্ন হয়।
কনুইয়ের যে স্থানে সূঁচ লাগানো হয় সেখানে হালকা চিমটি লাগার মতো অনুভব হয়। এই অনুভূতিটা কয়েক সেকেন্ডের বেশি থাকে না। আর যেহেতু জীবাণুমুক্ত সূঁচ ব্যবহার করা হয় তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
প্রতিবার রক্তদানে সাধারণত ৪৫০ মিলিলিটার রক্ত নেওয়া হয়। যা একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মোট রক্তের ১০ ভাগেরও কম। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে গড়ে সাড়ে চার থেকে পাঁচ লিটার পর্যন্ত রক্ত থাকে। রক্ত দেওয়ার পর শরীর সেই ঘাটতি খুব দ্রুত পূরণ করে থাকে।
রক্ত দেওয়ার পর করণীয় কী? এই প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে, রক্ত দেওয়ার পর ১০ থেকে ১৫ মিনিট বিশ্রাম নেওয়া দরকার। এরপর পানি ও হালকা খাবার খাওয়া উচিত। দিনের বাকি সময় ভারি কাজ এড়িয়ে চলা উচিত। পরের ২৪ ঘণ্টা বেশি করে পানি পান করা ভালো।
রক্তদানের প্রসঙ্গ সামনে আসলে সবার আগে প্রশ্ন তৈরি হয়, কারা রক্ত দিতে পারবে? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রায় সব সুস্থ মানুষই রক্ত দিতে পারে। তবে যাদের শরীরে এমন কোনো সংক্রমণ আছে, যা রক্তের মাধ্যমে অন্যের শরীরে ছড়িয়ে যেতে পারে তারা রক্ত দিতে পারবেন না।
রক্তদানের বয়সসীমা দেশভেদে ভিন্ন হতে পারে। অনেক দেশে ১৭ থেকে ৬৫ বছর বয়সী মানুষদের রক্ত গ্রহণ করা হয়। আবার কিছু দেশে ১৬ বছর বয়স থেকেই রক্ত দেওয়া যায় এবং কোথাও ৬৫ বছরের বেশি বয়সীরাও রক্ত দিতে পারে যদি তারা সুস্থ থাকেন।
একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বছরে অন্তত দুইবার রক্ত দিতে পারেন। তবে কত সময় পরপর রক্ত দেওয়া যাবে তা চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নেওয়াই ভালো।
রক্তদানে সবাই অংশ নিতে পারবে না, কিছু মানুষের জন্য মানা রয়েছে। যারা অসুস্থ, রক্তস্বল্পতায় ভুগছে, গর্ভবতী অথবা শিশুকে বুকের দুধ পান করাচ্ছে তারা রক্ত দিতে পারবে না। যারা নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ নিচ্ছে বা দীর্ঘদিন কোনো অসুস্থতায় ভুগছে, তারাও রক্তদান করতে পারবে না।
এছাড়াও যৌনবাহিত রোগে আক্রান্ত কেউ রক্ত দিতে পারবে না। ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণ করেছে বা কিছুদিন আগে শরীরে উল্কি এঁকেছে এই ধরনের ব্যক্তিরাও রক্ত দিতে পারবে না।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৬। জেলা: ঢাকা।