Published : 23 Sep 2024, 10:43 PM
শরৎ হল দ্বিতীয় বসন্ত, যখন প্রতিটি পাতাই ফুল। কথাটা ফরাসি লেখক আলবেয়ার কাম্যুর। শরৎ, শব্দটি শুনলেই মনের মধ্যে অনেক ছবি, নাম ফুটে ওঠে।
শরতে আকাশের নীল রঙ, তারই মাঝে ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা সাদা মেঘ। মৃদু-মন্দ বাতাস বইছে। মাঠে রয়েছে হাজারো কাশফুল, যা বাতাসে দুলছে। তার মধ্যে বসে আমি আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে সূর্যের লুকোচুরি খেলা দেখছি।
তখন মনে পড়ে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই গান “আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্র ছায়ায় লুকোচুরি খেলা রে ভাই, লুকোচুরি খেলা”। ইংরেজ অবি জন ডন তো ঘোষণাই দিয়ে দিলেন, “বসন্ত বা গ্রীষ্মের সৌন্দর্যে এমন করুণা নেই, যা আমি একটি শরতের মুখ দেখেছি।”
আবার ইংরেজ কল্পকাহিনি লেখক জে কে রাউলিং স্মৃতিচারণ করে লিখেন, “সেবছর শরৎ যেন হঠাৎ করেই এসে পড়েছিল। সেপ্টেম্বরের প্রথম সকালের বাতাস ছিল টাটকা ও সোনালি, ঠিক একটি আপেলের মতো।”
সেই সময় হয়তো দূর থেকে ঢাকের আওয়াজ আসে। তার তালে নেচে উঠতে চায় মন। সব মিলিয়ে ঘরে ফিরতেই মন চায় না। ইচ্ছা করে সারাটা দিন বাইরে কাটাই।
তবে ঘরে ফিরেও বেশ মজায় সময় কাটে। তালের বড়া, লবণ দিয়ে আমড়া, চালতার আচার ইত্যাদি খাওয়াদাওয়া চলেই। এগুলো সব শরতের উপহার। জার্মান কবি রাইনার মারিয়া রিলক যেমন বলেন, “অন্য কোন সময়ে (শরৎ ছাড়া) পৃথিবী নিজেকে এমন গন্ধে নিশ্বাস নিতে দেয় না। পাকা মাটি, এমন গন্ধে যা সমুদ্রের গন্ধের থেকে কোন অংশে কম নয়।”
রাতে বিছানায় শুয়ে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে থাকি। আকাশ পরিষ্কার থাকলে রাতের নিস্তব্ধ আঁধারেও মেঘের দেখা মেলে। পেঁজা তুলার মতো মেঘ। চাঁদের আলো যেন মেঘের ঝলকানি আরও বাড়িয়ে তোলে। ইচ্ছা করে সেই মেঘে করে ভেসে দূর দূরান্তে চলে যেতে।
আচমকাই হঠাৎ দমকা বাতাস আসে। তখন হয়তো মৃদুস্বরে গাই ‘মলয় বাতাসে ভেসে যাবো শুধু কুসুমের মতো করিবো পান’। রাতটা ঘরে কাটিয়ে সকালে আবার কাশবনে বসে থাকা। মধ্যে মধ্যেই ‘শরৎ তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি’ গানটি মুখে চলে আসে।
তারপর শরতের বিদায়ী দিনে মনটা থাকে দুঃখ ভারাক্রান্ত। চোখে জল চলে আসে। কাশফুলগুলোর কাছে গিয়ে বলি, আবার দেখা হবে। ঘরে ফিরে সেই প্রতীক্ষায় প্রকৃতির মুখ চেয়ে থাকি, কবে আবার আসবে শরৎ।