Published : 21 Jun 2020, 06:55 AM
তারা মাথা চুলকায়, ভাবে কিছু একটা করা দরকার। মা বলেন, চলো, বেশ রাত হয়েছে। খেয়ে শুতে যাবে।
তারপর দিন সকাল। গুড্ডু-বুড্ডু আর তাদের মা-বাবা একসঙ্গে খাবার টেবিলে নাস্তা খাচ্ছে। খেতে খেতে তারা তাদের বাবাকে বলে, বাবা একটা কাজ করতে চাই, যদি তোমার সাপোর্ট পাই।
বাবা বলেন, বল কী করতে চাও? গুড্ডু-বুড্ডু বলে, বাবা চলো, ছাদে আমরা বাগান করি। বাবা বলেন, হঠাৎ বাগান করা কেন? আমি তো ভাবলাম ফুটবল খেলার জন্য কিছু ব্যবস্থা করতে চাইবে। তারা বলে, না বাবা, প্রকৃতি আমাদের ওপর অনেক রাগ করেছে। তাই গাছ লাগাতে হবে, না হলে এই পচা করোনাভাইরাস কখনো যাবে না।
বাবা হেসে দুজনের মাথায় হাত বোলায়। বলেন, ঠিক আছে। আমি তাহলে বেশ কিছু গাছ আজই কিনে আনছি। মা বলেন, এর মধ্যে বের হবে? বাবা বলেন, আমি পিপিই পরে তবেই বাসা থেকে বের হব। মা বলেন, আচ্ছা।
বাবা নাস্তা শেষ করে উঠে যায়। কিছুক্ষণ পর পিপিই পরে আসেন। ওমা! গুড্ডু-বুড্ডু তো অবাক। এ কেমন ড্রেস! এসব ড্রেস পরে তো মানুষ চাঁদে যায়! গুড্ডু-বুড্ডু বাবাকে বলে, তুমি না গাছ কিনতে যাবে, তবে চাঁদে যাবার ড্রেস পরেছো কেন? বাবা হাসেন। বলেন, করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে বাইরে গেলে এখন এসব পরতে হয়।
গুড্ডু-বুড্ডু বুঝতে পারে করোনাভাইরাসটা আসলে খুবই পাজি। মা বলে, চল তাহলে আমরা ছাদে যাই। বাবাতো গাছ নিয়ে আসবে, ততক্ষণ বরং আমরা ছাদের টব ও ড্রামগুলো পরিষ্কার করে ফেলি।
অনেকদিন পর ছাদে উঠে গুড্ডু-বুড্ডুর খুব ভাল লাগে। বুক ভরে তারা বাতাস নেয়।
মা টব পরিষ্কার করছে। গুড্ডু-বুড্ডু বলে, মা টব পরিষ্কার করলেই তো হবে, ড্রাম কেন? মা বলে, সব গাছ টবে হয় না। কিছু গাছ ড্রামে লাগাবো। দেখি, তোমাদের বাবা কি কি গাছ আনে।
ছাদ থেকে নিচের রিকশার টংটাং শব্দ শুনতে পায় তারা। ওই যে বাবা এসে গেছে। বাবার রিকশার পেছনে একটা ভ্যান গাড়ি। নানা ধরনের গাছ নিয়ে এসেছে বাবা। গুড্ডু-বুড্ডু দৌড়ে নিচে নেমে আসে। বাবা তাদের দেখে বলে তোমরা সবাই দূরে থাকো। এখন আর কেউ কারো খুব কাছে আসবে না। দূরে দূরে দাঁড়াবে।
গুড্ডু-বুড্ডু মাথা নেড়ে সায় দেয়।
এরপর সবাই মিলে গাছগুলোকে ছাদে নেয়। মা বলে, সবই তো ফল বা সবজির গাছ এনেছো। ফুলগাছ তো আনোনি। বাবা বলে, এসময়ে ফুল গাছ নয়, লাগাবো ফল ও সবজির গাছ। মা বলে, ঠিকই বলেছো। করোনাভাইরাস কতদিন থাকবে তার ঠিক নেই। ফল ও সবজি নিয়মিত খেতেই হবে, তাই ফল ও সবজির গাছ লাগানো দরকার।
বাবা গুড্ডু-বুড্ডুকে কাছে ডাকে। বাবা বলেন, গুড্ডু-বুড্ডু এ গাছগুলোর নাম জানো? তারা মাথা নাড়ে। বাবা বলে, এখানে আছে আম্রপালি, কুল, পেয়ারা, লেবু, পেঁপে, বেগুন, টমেটো, বরবটি, মরিচ, করল্লা, লালশাক, পুঁইশাক আর লাউশাক গাছ।
গুড্ডু-বুড্ডু বলে, এসব তো সবসময় আমরা খাই, কিন্তু গাছটাই চিনি না।
গুড্ডু-বুড্ডুর গাছ চিনতে না পারায় খুব লজ্জা লাগে। বাবা বলেন, গাছগুলো চিনে রাখো, আর চল আমরা সবাই মিলে টবে গাছ লাগাই।
গুড্ডু-বুড্ডু দৌড়ে লেবু গাছটা নিয়ে আসল। তারা সবাই মিলে বড় ড্রামে লেবু গাছটা লাগায়। কাজ করতে করতে সবার বেশ গরমই লাগে। গুড্ডু-বুড্ডু বলে উফ কি গরম! ফ্রিজ থেকে একটু ঠান্ডা পানি খেয়ে আসি।
বাবা বলেন, না। করোনাভাইরাসের এসময়ে ঠান্ডা পানি নয়। খাবো আমরা লেবু পানি। আর প্রতিদিন গাছের যত্ন নিতে এসে শরীরে রোদ লাগাবো।
গুড্ডু-বুড্ডু তো হা। রোদ লাগালে কি লাভ? বাবা বলে, রোদ থেকে পাবে ভিটামিন ডি। গুড্ডু-বুড্ডু হা করে বাবার দিকে তাকিয়ে থাকে।
বাবা হেসে বলেন, তোরা কাছে আয়। এবার আমার শিম গাছের জন্য মাচা তৈরি করবো। গুড্ডু-বুড্ডু বলে, অন্যসব গাছের জন্য যে মাচা করলাম না।
বাবা বলেন, শিম বা লাউগাছ যখন মাচা বেয়ে বড় হতে থাকবে তখনই বুঝবি কেন মাচা তৈরি করলাম। গুড্ডু-বুড্ডু বোঝে গাছ লাগানো বিষয়টি এত সহজ নয়। এখানেও বেশকিছু টেকনিক খাটাতে হয়।
গাছ লাগাতে লাগাতে বাবা একটু টায়ার্ড হয়। বাবা একটু জিরোয়। তারপর বলেন, প্রতিদিন গাছের পানি দেবার দায়িত্ব তোমাদের দুই ভাইয়ের। আর মাটি, সার এসব তিনিই দিবেন।
তারা গাছে পানি দেবার দায়িত্ব পেয়ে ভীষণ খুশি।
বাবা বলেন, এ গাছগুলো তোমাদের বন্ধু কিন্তু। খেলার মাঠের বন্ধুদের চেয়েও এরা কম আপন নয়। এরা তোমাদের অক্সিজেন দেবে, ছাদটাকে ঠান্ডা রাখবে। দুঃসময়ে বাইরে থেকে কিছু কিনে খেতে না পারলে গাছ তোমাদের খাওয়ার জন্য ফল ও সবজি দেবে।
গুড্ডু-বুড্ডু বাবার দিকে তাকিয়ে গাছেদের মায়া-মমতা আর ভালবাসার কথা শোনে। গাছেরা যে মানুষের এতো আপন এর আগে কোনদিন তারা ভাবেইনি। একথা ভেবে তারা মনে মনে লজ্জিত হয়। তারা কল্পনা করে, এই ছোট গাছগুলো ডালপালা মেলে ফল দিয়ে তাদের এই ছাদটাকে ভরিয়ে দিয়েছে যেন।
গুড্ডু-বুড্ডু বাবাকে থ্যাংকস বলে। বাবা বলে, তোমাদেরও থ্যাংকস। কারণ গাছ লাগানোর আইডিয়াটা তোমাদেরই। সবার মুখে একসাথে হাসি ফোটে।
গুড্ডু-বুড্ডু ছাদ থেকে নেমে বাসায় ফিরে গোসলটা সেরে নেয়। দুই ভাই বিছানায় একটু গড়িয়ে নেয়। তাদের মনে হয় অনেকদিন পর তারা খুব ভালো একটা কাজ করলো।
এরপর থেকে গুড্ডু-বুড্ডু লকডাউনের সময়ে নিজেদের একেবারে খাপ খাইয়ে নিল। কোন আলসেমি নেই তাদের, সকালে উঠেই এক গ্লাস দুধ আর ডিম খাওয়া চাই। নাস্তা খেয়েই দৌড়ে অনলাইন ক্লাসে। তারপর আর দুজনকে বাসায় পাওয়াই যায় না।
তারা ছাদে চলে যায়। ছাদ ঝাড় দেয়। গাছে পানি দেয়। গাছের পাতায় হাত বোলায়। গাছেদের সাথে গল্প করে। গাছদের বলে, আমাদের নাম গুড্ডু-বুড্ডু। আমরা দুই ভাই। আমরা কিন্তু খুব ভাল ফুটবল খেলি। তোমাদের সবার নামই খুব সুন্দর।
বাতাসে গাছের পাতা নড়ে ওঠে। মনে হয় গাছেরা তাদের কথা শুনছে যেন!
আহ! কি শান্তির বাতাস। শরীর জুড়িয়ে যায় দুই ভাইয়ের। আনন্দে মনটা ভরে যায়। তারা বুক ভরে বাতাস নেয়। ছাদে পাটি পাতে। দুই ভাই শুয়ে গাছেদের নিয়ে কত যে কথা বলে! কবে কোন গাছে কোন ফল হবে সেই ফল তারা কীভাবে খাবে এ নিয়েই তাদের কথা শেষই হয় না।
পরক্ষণেই মনে হয় ইশ এত কষ্ট করে ওদের বড় করে কীভাবে ওদের খেয়ে ফেলবো? খুব মন খারাপ হবে তো গাছেদের।
দুই ভাইয়ের এ কথা ভেবে একটু মন খারাপ হয়তো বৈকি। তবে কিছুক্ষণ পর আবার বয়ে যাওয়া বাতাসে মনটা ফুরফুরে হয়ে যায়।
বাতাসের পরশে গাছেদের ভালবাসায় বন্ধু গাছগুলোর পাশে পেতে রাখা পাটিতে একসময় তারা দুইজনই ঘুমিয়ে পরে।
মা তাদের সারা বাড়ি খুজঁতে খুঁজতে ছাদে আসেন। ঘুমিয়ে পড়া দুইজনের দিকে তাকিয়ে ভীষণ মায়া লাগে তার। গুড্ডু-বুড্ডুর কপালে চুমু খান মা।
লেখক পরিচিতি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পড়াশোনা করেছেন। পেশায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কর্মকর্তা। তার প্রকাশিত বইগুলো ‘হুমায়ুন আজাদ আমার বাবা’, ‘রূপালি জোছনায় ভেজা জীবন’, ‘রক্তজবাদের কেউ ভালোবাসেনি’, ‘বইয়ের পাতা স্বপ্ন বলে’ ও ‘যেখানে জীবন সেখানেই আইন’।
কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা [email protected]। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না! |