Published : 13 Jun 2025, 01:00 PM
চেরি ব্লসম শুধু একটি ফুল নয়, এক অনন্য অনুভূতির নাম। যখন এই ফুল ফোটে, প্রকৃতি হয়ে ওঠে নরম রংয়ে সেজে ওঠা এক রূপকথার মতো।
আর এই চেরি ব্লসম এখন জায়গা করে নিয়েছে রূপচর্চায়, বিশেষ করে ব্লাশ ব্যবহারে। যদিও এটি আমাদের দেশের ফুল নয়।
চেরি ব্লাশ ট্রেন্ড- একটি নতুন তবে কোমল, স্নিগ্ধ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলার অভিনব পদ্ধতি। এই ধারা এখন ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে, যার মাঝে আছে বাংলাদেশও।
চেরি ব্লাশ ধারাটা কী?
চেরি ব্লাশ আসলে ব্লাশ ব্যবহারের একটি কৌশল, যেখানে দুটি ভিন্ন শেইডের গোলাপি ব্লাশ ব্যবহার করে একটি ‘ওমব্রে’ বা স্তরভিত্তিক রংয়ের প্রভাব তৈরি করা হয়।
একদিকে যেমন এটি ত্বকে প্রাকৃতিক লালচে আভা এনে দেয় তেমনি অন্যদিকে এটি মুখে আনে কোমলতা ও দীপ্তি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রসাধনী ব্র্যান্ড ‘কেভিন অকোইন বিউটি’-এর প্রধান রূপসজ্জাকর ড্রিটা পালজেভিচ এই ট্রেন্ড সম্পর্কে রিয়েলসিম্পল ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, “অন্যান্য ব্লাশ ট্রেন্ডের মতো এতে তীক্ষ্ণতা বা জোরালো কনট্যুরিং নেই। বরং, এটি মুখে এক ধরনের কোমল, কিশোরীসুলভ দীপ্তি এনে দেয়।”
এই ট্রেন্ডকে সমর্থন করেছেন আরেকজন বিখ্যাত মেইকআপ শিল্পী ক্রিশ্চিয়ান ব্রিসেনো, যিনি হলিউডের অনেক তারকার সঙ্গে কাজ করেন।
তিনি বলেন, “এই ব্লাশ ট্রেন্ডে ‘ত্বক আগে, রং পরে’ এই নীতিতে কাজ করা হয়। এটি সহজে করা যায় এবং নরম, রোমান্টিক ও পরিধানযোগ্য দর্শন দেয়।”
কেন চেরি ব্লাশ ট্রেন্ড এত জনপ্রিয়?
চেরি ব্লাশ এমন এক ‘লুক’ তৈরি করে যা একদিকে খুব স্বাভাবিক আবার অন্যদিকে শৈল্পিক। যেখানে অন্য ট্রেন্ডগুলোতে মুখে খুব কড়া বা কনট্যুর করা রং থাকে, সেখানে এই ট্রেন্ডে রং থাকে হালকা ও নরম।
ড্রিটা পালজেভিচ বলেন, “এই ট্রেন্ড পছন্দ করি কারণ এটি একাধিক ব্লাশ শেইড ব্যবহার করে মুখে গভীরতা ও প্রাণ আনে। এটি পেশাদার মেইকআপ আর্টিস্টরা নিয়মিত করেন। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে এটা খুব বেশি প্রচলিত নয়।”
এই লুকটি ঠোঁটে হালকা লিপ গ্লস, চোখে নরম আইলাইনার বা ‘ক্লাউড স্কিন’ মেইকআপ স্টাইলের সঙ্গে খুব ভালোভাবে মিশে যায়। অর্থাৎ, যদি ‘ন্যাচারাল বিউটি লুক’ পছন্দ করেন, তাহলে এই ট্রেন্ড নিঃসন্দেহে উপযুক্ত।
যেভাবে চেরি ব্লাশ ট্রেন্ড বাস্তবে প্রয়োগ করা যায়
ত্বকের বেস (ফাউন্ডেইশন, কনসিলার ইত্যাদি) তৈরি হয়ে গেলে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করে সহজেই এই লুকটি তৈরি করা যায়।
১. দুটি শেইড বেছে নিন: প্রথমে একটি হালকা ও একটি উজ্জ্বল গোলাপি বা লাইলাক শেইডের ব্লাশ বেছে নিন। ক্রিম, তরল বা জেল ফর্মুলার ব্লাশ সবচেয়ে ভালো কাজ করবে, কারণ এগুলো সহজে ব্লেন্ড হয়।
ক্রিশ্চিয়ান ব্রিসেনো ও ড্রিটা পালজেভিচ একমত যে একই ফর্মুলার দুই শেইড ব্যবহার করাই সবচেয়ে ভালো ফল দেয়।
২. হালকা শেইডটি লাগান: হালকা শেইডটি গালে, গালের ওপরের অংশে, কান ও কপালের মাঝামাঝি অংশে লাগান। এটি তুলনামূলকভাবে বেশি জায়গায় ও একটু বেশি পরিমাণে দিন, যাতে একটি স্বচ্ছ রংয়ের ছায়া তৈরি হয়।
৩. গালের আপেল অংশে গাঢ় শেইড ব্যবহার: গালের যে অংশে হাসলে উঁচু হয়ে ওঠে (অ্যাপল অব দ্য চিক), সেখানে গাঢ় শেইডটি লাগান। এটা হতে পারে উজ্জ্বল গোলাপি বা হালকা চেরি রং।
এখানেই হবে আপনার মূল রংয়ের পয়েন্ট।
চাইলে সামান্য পরিমাণে নাকের ওপরের দিকে লাগাতে পারেন, সূর্যের আলোর মতো একটি প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা আনার জন্য।
৪. ভালোভাবে ব্লেন্ড: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল- দুটি রং এমনভাবে মিশিয়ে ফেলা যাতে কোনো প্রান্ত বা সীমারেখা চোখে না পড়ে। যেন মনে হয় রংটি গালের সঙ্গে মিশে গেছে, ধীরে ধীরে হালকা থেকে গাঢ় হয়েছে। ঠিক যেমন একটি চেরি ব্লসম ফুলের পাপড়ি।
কারা এই লুকের উপযুক্ত?
চেরি ব্লাশ ট্রেন্ড যাদের ত্বক একটু হালকা বা মাঝারি, তাদের জন্য এটি খুবই কার্যকর। তবে বাদামি বা গাঢ় ত্বকের অধিকারীদের ক্ষেত্রেও একটু ঠাণ্ডা টোনের ‘ফিউশা’ বা ‘মভ শেইড’ বেছে নিলে অসাধারণ মানিয়ে যাবে।
যারা ‘মিনিমাল মেইকআপ’ পছন্দ করেন বা রোজকার মেইকআপে একটু ভিন্নতা আনতে চান, তাদের জন্য এটি একদম উপযুক্ত।
বাংলাদেশের উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় হালকা মেইকআপ ট্রেন্ড খুবই উপযোগী। চেরি ব্লাশ লুকটি গ্রীষ্মকালে একদিকে যেমন ত্বকে প্রাণ এনে দেয়, তেমনি ভারী মেইকআপের যন্ত্রণা থেকেও মুক্ত রাখে।
আরও পড়ুন
মেইকআপের যেসব কৌশল একেবারেই অবলম্বন করা উচিত না
মেইকআপ করাও হতে পারে ধ্যানের সহজ মাধ্যম