Published : 15 Jun 2025, 01:36 PM
ভ্রমণে ফ্যাশন সচেতন থাকার মানে এই নয় যে বিশাল স্যুটকেস নিয়ে বেরোতে হবে। শুধু ‘ক্যারি-অন’ ব্যাগেই কীভাবে স্মার্ট এবং স্টাইলিশ থাকা যায়, সেটাই দেখিয়ে দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের জনপ্রিয় ফ্যাশন বিশেষজ্ঞ ট্যান ফ্র্যান্স।
বিদেশ সফরে যাওয়ার সময়ে অতিরিক্ত লাগেজ ফি, বোঝা এবং পোশাকের জটিলতা অনেকের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ। তবে ট্যান ফ্র্যান্সের ছয়টি কার্যকর পরামর্শ ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য হতে পারে দারুণ সহায়ক।
তিন জোড়া জুতা রাখলেই যথেষ্ট
অনেকেই প্রতিটি পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে আলাদা জুতা নিতে চান, যা একদমই কার্যকর নয়।
রিয়েলসিম্পল ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ট্যান ফ্র্যান্স বলেন, “মাত্র তিন জোড়া জুতা যথেষ্ট। একটি পরে যান, আর দুইটি ব্যাগে রাখুন।”
ভ্রমণের সময় সবচেয়ে ভারী বা ‘চাঙ্কি’ জুতাটি পরে নিন। হোক তা বুট, হিল বা মোটা সোলের লোফার।
এতে ব্যাগে অনেকখানি জায়গা বেঁচে যাবে। তবে এসব জুতা দীর্ঘ ভ্রমণে অস্বস্তিকর হতে পারে, তাই ট্যান পরামর্শ দেন- হোটেলের পাতলা স্লিপার ব্যাগে রাখার, যাতে ট্রেন বা বিমানে চেপে উঠেই পরে নিতে পারেন।
ব্যাগে রাখা বাকি দুই জোড়া জুতা
একটি হালকা, সফট স্নিকার্স যেটা শহর ঘোরাঘুরির জন্য আরামদায়ক এবং ময়লা লাগলেও সমস্যা নেই।
আরেকটি হল হালকা, লেদার বা ফ্যাক্স লেদারের স্লাইড-অন স্যান্ডেল। পুল, কফি শপ বা সকালে হোটেলের আশপাশে হাঁটার জন্য আদর্শ।
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “রাবারের ফ্লিপ-ফ্লপ স্টাইলিশ নয়, এমনকি সুইমিং পুলেও নয়।”
আপনি যেমন, তেমনই পোশাক রাখুন
ট্যান ফ্র্যান্স বলেন, “অনেকেই ভ্রমণে গিয়ে নিজেকে নতুন রূপে কল্পনা করে পোশাক নেন। অথচ শেষ পর্যন্ত সেগুলো পরেন না।”
তিনি মনে করিয়ে দেন, “যদি নিজের শহরে কোনো পোশাক পরে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না করেন, তাহলে বিদেশে গিয়ে সেটা পরার আত্মবিশ্বাসও পাবেন না।”
ইউরোপে গিয়ে যদি স্থানীয়দের মতো পোশাক পরার চেষ্টা করেন, তাহলে সেটা কৃত্রিম ‘কস্টিউমি’ মনে হতে পারে। তাই নিজের পরিচিত স্টাইল ও আরামদায়ক পোশাকই ভ্রমণের জন্য বেছে নেওয়া ভালো।
নিরপেক্ষ রংয়ের পোশাক, রঙিন অনুষঙ্গ
সামান্য জায়গায় অনেক ধরনের ‘লুক’ তৈরি করতে চান? তাহলে বেছে নেওয়া উচিত সাদা, ধূসর, কালো বা হালকা খয়েরি রংয়ের পোশাক।
এরপর রঙিন স্কার্ফ, বেল্ট, গলার হার বা ছোট ব্যাগের মাধ্যমে যোগ করা যায় স্টাইল।
ট্যানের মতে, “ছোট জিনিস যেমন- মোজা, বেল্ট বা স্কার্ফ জুতার ভেতরে ভরে রাখা উচিত। এতে ব্যাগে জায়গা বাঁচে, আবার জুতার আকৃতিও ঠিক থাকে।”
আবহাওয়া অনুযায়ী প্রস্তুত থাকা
আবহাওয়ার ওপর ভরসা করা কঠিন। সে কারণেই ট্যান ফ্র্যান্স লেয়ারিং করার পরামর্শ দেন।
শীত প্রধান দেশে ভ্রমণে গেলে ভারী সোয়েটার না নিয়ে একাধিক হালকা লেয়ার নেওয়া যায়। যেমন- পাতলা কার্ডিগান, বোতামযুক্ত শার্ট, কোট বা হুডি।
এগুলো একসাথে মেলানো সহজ। আর তাপমাত্রা অনুযায়ী বাড়ানো বা কমানো যায়। বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে গেলে জলবায়ু পার্থক্য থাকেই— সেখানে এই কৌশল কাজে দেবে।
ভ্যাকুয়াম সিল ব্যাগ নয়
অনেকে ব্যাগে বেশি কিছু ঢোকাতে ভ্যাকুয়াম সিল ব্যাগ ব্যবহার করেন। তবে ট্যান ফ্র্যান্স এটাকে ভুল সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন।
কারণ এতে পোশাক প্রচণ্ড রকমের কুঁচকে যায় এবং হয়ত হোটেলে ভালো আয়রনের সুবিধা নাও থাকতে পারে। ফলে সময়, শ্রম আর স্টাইল সবই বিফলে যায়। বরং, কম নিয়ে যাওয়াই ভালো।
কেনাকাটার জায়গা রাখা
ভ্রমণে হয়ত এমন কিছু চোখে পড়বে যা দেশে পাওয়া যায় না। তখন সেটা কেনার সুযোগ হাতছাড়া করতে ইচ্ছে করবে না। তাই আগে থেকেই ব্যাগে কিছুটা জায়গা খালি রাখতে হবে।
ফ্রান্সের মতে, “একটি ফোল্ডেবল বা ভাঁজযোগ্য ব্যাগ রাখা উচিত বিকল্প হিসেবে। যা ফিরতি পথে ব্যবহার করা যাবে।”
আর ভারী কিছু কিনলে সেটা পরে নেওয়া ভালো বুদ্ধি। অর্থাৎ ব্যাগের ওজন না বাড়িয়ে নিজের গায়ে চাপিয়ে ফেলা।
অতিরিক্ত কিছু ভ্রমণ পরামর্শ
• প্যাকিং কিউব ব্যবহার করা উচিত। প্রতিটি ‘লুক’ বা কার্যক্রম অনুযায়ী পোশাক আলাদা রাখা।
• রোল বা মুড়িয়ে গোছানো উচিত। টি-শার্ট, ট্যাংক টপ রোল করলে জায়গা বাঁচে।
• প্লেনে লেয়ার পরে উঠা উচিত। চাঙ্কি সোয়েটার বা জ্যাকেট পরে উঠলে ব্যাগে জায়গা বাঁচে।
• ভ্রমণ-আকারের টয়লেট্রিজ নেওয়া জরুরি। জেল বা লিকুইডের জন্য ছোট বোতল ব্যবহার করা ভালো।
• একটা অতিরিক্ত পোশাক ও ইনার ব্যাগে রাখা উচিত। ‘লস্ট লাগেজ’ বা না পাওয়া গেলেও চলবে দিনটা।
আরও পড়ুন
ভ্রমণে যা সঙ্গে নিতে ভোলা যাবে না
প্রথমবার একা ভ্রমণের আগে যা করবেন