Published : 04 Jun 2025, 06:12 PM
মেটাবলিজম বা বিপাক পক্রিয়ার গতি নির্ভর করে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর। কিছু বিষয় নিয়ন্ত্রণ করা যায়; আবার কিছু বিষয় যায় না।
সাধারণভাবে বলতে গেলে বিপাক প্রক্রিয়া হল জীব দেহে সংগঠিত সব রকমের রাসায়নিক বিক্রিয়া। এর মধ্যে খাবার খাওয়া থেকে শুরু করে হজম হয়ে নানান বিক্রিয়ার মাধ্যমে কোষে কোষে শক্তি পৌঁছানোর পর্যন্ত সবই পড়ে।
এই প্রক্রিয়ার গতি বয়স ও লিঙ্গের ওপর নির্ভর করে; যা পরিবর্তন করা যায় না। তবে দৈনিক অভ্যাসও বিপাক প্রক্রিয়ার ওপর প্রভাব ফেলে, যেমন- ঘুমানোর সময় বা কী ধরনের খাবার খাওয়া হচ্ছে। এগুলো পরিবর্তন করা সম্ভব।
আর বিপাক প্রক্রিয়া দৈনিক অভ্যাসে ধ্বংস করা হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে ইটদিস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানিয়েছেন মার্কিন স্বাস্থ্য বিজ্ঞানী এবং ‘বায়োটেক’ উদ্যোক্তা ‘হেভিলি মেডিটেটেড’ বইয়ের লেখক ডেভ অ্যাসপ্রে।
ফোন স্ক্রল করা
ফোন দেখা, ঘাঁটাঘাঁটি বা ‘স্ক্রল’র মাধ্যমে গোপনেই ধ্বংসের মুখে পড়ছে বিপাক প্রক্রিয়া।
ফোন, কম্পিউটার বা এই ধরনের যন্ত্র থেকে আসা কৃত্রিম আলো ‘সার্কাডিয়ান রিদম’ বা দেহঘড়ির ছন্দ পতন ঘটায়।
অ্যাসপ্রে বলেন, “গবেষণায় দেখা গেছে, রাতের বেলায় ‘ব্লু লাইট’ বা নীল রশ্মির সংস্পর্শ থেকে ইন্সুলিন প্রতিরোধী সমস্যা তৈরি করতে পারে।”
তাই তার পরামর্শ হল, সূর্য ডোবার পরে বৈদ্যুতিক যন্ত্রের পর্দা না দেখা, আর দেখলেও ‘ব্লু রে’ প্রতিরোধী কাচ ব্যবহার করতে হবে।
বাজে ঘুম
বিপাক প্রক্রিয়া উন্নত রাখতে ঘুমের মানের ওপর জোর দিতে হবে। এক রাত বাজে ঘুম খিদার হরমোন এবং ইন্সুলিন সংবেদনশীলতার ওপর প্রভাব পড়ে।
তাই ভালো ও পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য যা যা করার প্রয়োজন করতে হবে।
আরও পড়ুন
প্রোটিন কম গ্রহণ
বিপাক প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যেতে পারে পর্যাপ্ত প্রোটিন না গ্রহণ করলে।
অ্যাসপ্রে বলেন, “প্রোটিন কোষ পুনরুদ্ধারে কাজ করে। শারীরিক কর্মকাণ্ড থেকে দ্রুত ক্ষতি পোষায়। আর দীর্ঘক্ষণ তৃপ্তি ও পেটভরা অনুভূতি দেয়।”
তিনি পরামর্শ দেন, “দেহের প্রতি এক পাউন্ড ওজনের জন্য অন্তত পক্ষে এক গ্রাম উচ্চ মানের প্রোটিন খাওয়া উচিত।”
আবার সব প্রোটিন একই রকম কাজ করে না। দরকার প্রাণিজ প্রোটিন।
কিটো ডায়েট
ওজন কমানোর ক্ষেত্রে কিটো ডায়েট কার্যকর। তবে কার্বোহাইড্রেইট অতিরিক্ত কম গ্রহণ করলে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা কমে যেতে পারে।
আর থাইরয়েড হরমোন কম থাকলে ক্লান্তি ও কুঁড়েমি-ভাব জাগবে। আর ওজন বেড়ে যাবে সহজেই।
তাই যারা কিটো ডায়েট অনুসরণ করে ওজন কমাতে চাচ্ছেন তাদের কয়েকদিন পরপর ভালোমানের কার্বোহাইড্রেইট গ্রহণের পরামর্শ দেন. অ্যাসপ্রে।
অ্যালকোহল
অল্প মাত্রায় অ্যালকোহল গ্রহণ করলেও বিপাক প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়।
অ্যাসপ্রে বলেন, “মদ্যপান একেবারেই করা উচিত না। একটা আপনার যকৃত ও মস্তিষ্কে বিষ ঢালে।”
যখন অ্যালকোহলে বিষ দূর করতে যকৃত ব্যস্ত থাকে তখন চর্বি ও শর্করা সঠিকভাবে বিপাক প্রক্রিয়াতে হজম হয় না। যে কারণে ওজন বাড়ে। আর দেখা দেয় ‘ফ্যাটি লিভার’ সমস্যা।
ভুল ধরনের ব্যায়াম করা
ব্যায়াম স্বাস্থ্যকর। তবে ভুল শরীরচর্চা দেহে বাজে প্রভাব ফেলে।
অ্যাসপ্রে বলেন, “ট্রেডমিলে ৬০ মিনিট দৌড়ানোতে উপকারের চাইতে অপকার বেশি হতে পারে।”
পেশি বিপাক প্রক্রিয়াতে খুবই সক্রিয় থাকে। যত পেশি, বিপাক ততই ভালো।
হালকা, মধ্যম বা কঠিন ‘কার্ডিও’ বা হৃদস্পন্দন বাড়ায় এমন ব্যায়াম পেশির কোষ পোড়ায়। তাই এই ধরনের ব্যায়াম করা মানে বিপাক প্রক্রিয়ার বেশি উন্নতি না হওয়া।
শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত সময় কার্ডিও ব্যায়াম করার ফলে কর্টিসল হরমোন বৃদ্ধি পায়। আর দীর্ঘ মেয়াদে এই হরমোন বাড়তি থাকলে সংকেত পাঠায় যে, দেহে চর্বি জমা করতে হবে। বিশেষ করে পেটের চারপাশে।
এই ব্যাখ্যা দিয়ে আসপ্রে বলেন, “সেরা উপায় হল ‘হাই ইন্টেনসিটি ইন্টারভেল ট্রেইনিং (এইচআইআইটি)’ নেওয়া। আর ভারোত্তলন সপ্তাহে কিছু সময়ের জন্য করা।”
এইচআইআইটি করলে পেশি সংরক্ষিত হয়, কম সময় লাগে আর মেটাবলিজম বা বিপাক প্রক্রিয়া শরীরচর্চার পরের এক ঘণ্টা পর্যন্ত বেশি থাকে।
এছাড়া পেশি গড়তে ‘রেজিস্টেন্স ট্রেইনিং’ উপকারী। সপ্তাহের কয়েকটা দিন এই ব্যায়াম করলে পেশি গঠিত হয়। আর যেত বেশি পেশি ততই ক্যালরি পুড়বে।
তখন দেখতেও ভালো লাগবে আর দীর্ঘ সুস্থ জীবন পাওয়া সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন