Published : 17 Jun 2025, 01:06 PM
নতুন মা হওয়া জীবনের একটি বিশেষ তবে চ্যালেঞ্জিং সময়। গর্ভধারণ, সন্তান জন্মদান এবং প্রসব-পরবর্তী সময়ে একজন নারীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে।
এ সময়ে পরিবার, বন্ধু ও আশপাশের মানুষদের কাছ থেকে সহানুভূতি, সহায়তা ও যত্ন পাওয়া একজন নতুন মায়ের জন্য অপরিহার্য।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনেক সময় শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েও আমরা এমন কিছু করি যা তার জন্য বিরক্তিকর বা চাপ হয়ে দাঁড়ায়। তাই নতুন মায়ের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে হতে হবে সচেতন ও যত্নবান।
ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক মনোবিজ্ঞানী ডা আকিলা রেনল্ডস ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, “মাতৃত্বে রূপান্তর একজন নারীর জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়গুলোর একটি। এমন একটি সমাজে যেখানে মায়েদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রায়শই অনুপস্থিত, সেখানে উচিত তাদের কথা শোনা এবং জেনে নেওয়া কী তাদের প্রয়োজন।”
নিউইয়র্কভিত্তিক ‘মন্টেফিওর হেল্থ সিস্টেম’য়ের ‘পোস্টপার্টাম অ্যান্ড ফোর্থ ট্রাইমেস্টার’-এর পরিচালক ও মাতৃ-ভ্রূণ চিকিৎসাবিদ ডা. কবিতা বাণী বলেন, “পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন দিন দিন বাড়ছে, তাই মায়েদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করা খুবই জরুরি। পরিবারের সদস্য ও বন্ধুরা যেন তাকে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে এবং যদি কোনো অস্বস্তি বা অবসাদে ভোগেন, সেটা প্রকাশ করতে উৎসাহিত করতে হবে।”
আগে জিজ্ঞেস, তারপর সাহায্য
প্রত্যেক মায়ের প্রয়োজন এক রকম নয়। তাই আগে তার কাছে জানতে চাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সে কী চায়, কীসে সাহায্য প্রয়োজন বিষয়গুলো জানতে হবে।
যদি তার বাসায় যান, তাহলে সরাসরি জিজ্ঞেস করতে হবে, “তোমার বাসার কোনো কাজ আমি করে দিতে পারি কি?”
ডা. বাণী বলেন, “নতুন মায়েরা অনেক কাজের মুখোমুখি হন, যা সন্তান আসার আগে কল্পনাও করেননি।”
বাড়ির কাপড় ধোয়া, বাসন মাজা, রান্না করা বা ঘর পরিষ্কার করার প্রস্তাব দেওয়া যায়। আর যদি দূরে থাকেন, তাহলে প্রিয় কোনো রেস্তোরাঁ থেকে খাবার পাঠিয়ে দিতে পারেন, কিংবা লন্ড্রি বা ক্লিনিং সার্ভিস উপহার দিতে পারেন। তবে অবশ্যই আগে তার সম্মতি নিতে হবে- পরামর্শ দেন ডা. বাণী।
সময় দিন
ডা. বাণী বলেন, “আমি মা হওয়ার আগে শুনতাম, ‘একটা গোসল করারও সময় পাই না।’ তখন ভাবতাম, এটা কীভাবে সম্ভব? কিন্তু মা হওয়ার পর বুঝলাম।”
একজন মাকে একটু সময় দেওয়া অনেক বড় উপকার। শিশুটি ঘুমালে তার পাশে বসে থাকার প্রস্তাব দেওয়া যায়, যাতে মা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে পারেন, গোসল করতে পারেন কিংবা একটু ঘুমাতে পারেন।
ডা. রেনল্ডস বলেন, “রাত জেগে সন্তান সামলানো একজন মায়ের জন্য ক্লান্তিকর। ঘুমের ঘাটতি পূরণে পাশে দাঁড়ানো উপকারি উপহার।”
গাড়ি চালকের দায়িত্ব নেওয়া
বর্তমানে প্রসব-পরবর্তী মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়ার কারণে ডাক্তাররা জন্মের পর দ্রুত দেখা করছেন।
ডা. বাণী বলেন, “আগে প্রথম স্বাক্ষাৎ হত ছয় সপ্তাহ পর, এখন তিন সপ্তাহের মধ্যেই দেখা হচ্ছে।”
এই সময়ে হাসপাতালে যাওয়া অনেক মায়ের জন্য কঠিন। যদি কাছাকাছি থাকেন, তাহলে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পারেন কিংবা তার সন্তানকে কিছুক্ষণ দেখে রাখতে পারেন। অনেক মা একা সন্তানসহ বাইরে যেতে স্বস্তি পান না, এমন পরিস্থিতিতে পাশে থাকলে তা অনেক সহজ হয়।
অডিওবুকের জন্য উপহার
ঘনিষ্ট না হলেও নতুন মাকে উপহার দিয়ে পাশে দাঁড়াতে পারেন।
ডা. বাণী বলেন, “সন্তানকে দুধ খাওয়ানোর সময়ে অনেকটা সময় চুপচাপ বসে থাকতে হয়। তখন অডিওবুক শোনা বেশ ভালো সঙ্গী হতে পারে।”
চুপ থাকুন, শুনুন
অনেক সময় নতুন মায়েরা শুধু কথা বলতে চান। সেই সুযোগ করে দিতে হবে।
ডা. রেনল্ডস বলেন, “অনেকেই অপ্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন, যা কোনো কাজে আসে না বরং বিরক্তির কারণ হয়।”
শুধু প্রশ্ন করতে হবে, “তুমি কেমন আছ?”, “সব কিছু কেমন চলছে?” এমন সোজাসাপ্টা কথাবার্তা একজন মায়ের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। নিজের অভিজ্ঞতা চাপিয়ে না দিয়ে বরং শুনুন।
রান্নার ব্যবস্থা করা
নতুন মা প্রায়শই নিজের খাবারের কথাই ভুলে যান। চাইলে রান্না করে দিতে পারেন, একদিনের জন্য হলেও। আর একাধিক বন্ধু বা আত্মীয় মিলে মিল ‘ট্রেন’ আয়োজন করা যেতে পারে। যেখানে পালাক্রমে কেউ একজন রান্না করে পৌঁছে দেবে।
ডা. রেনল্ডস বলেন, “সন্তানের যত্ন নিতে নিতে নিজের খাবার খাওয়া পর্যন্ত ভুলে যাওয়া মায়েদের জন্য পুষ্টিকর খাবার পাওয়াটা একটি বড় সহায়তা।”
অপরিচিতদের না পাঠানো
অনেকেই ভাবেন, নতুন মায়ের পাশে দাঁড়ানোর জন্য কাউকে পাঠিয়ে দিলে ভালো হয় যেমন- সাহায্যকারী বা পরিচ্ছন্নতা কর্মী।
তবে ডা. বাণী বলেন, “নতুন মায়েরা অপরিচিত মানুষদের নিয়ে অস্বস্তিতে পড়তে পারেন।”
বরং সাহায্য করার ইচ্ছা থাকলে আগে জানিয়ে নিতে হবে। তিনি এতে স্বস্তি বোধ করেন কি-না জানতে হবে। তাকে জোর না করে সহানুভূতির সাথে পাশে দাঁড়ানো উচিত।
আরও পড়ুন