Published : 19 Jun 2025, 04:36 PM
গাল-মাথার ত্বকে ব্রণ ওঠা নতুন কিছু নয়। তবে চল্লিশের ঘরে এসে গলায় হঠাৎ করে বড়সড়, বেদনাদায়ক ব্রণ দেখা দিলে অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন।
এ বয়সে এসে ত্বক অনেকটাই স্থিতিশীল হয়ে ওঠে বলে ধারণা থাকলেও, বাস্তবতা একটু আলাদা।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘ইড্রিস ডার্মাটোলজি’র প্রতিষ্ঠাতা এবং ত্বক বিশেষজ্ঞ শেরিন ইড্রিস রিয়েলসিম্পল ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, “নারীদের ক্ষেত্রে চল্লিশে পা দেওয়ার পর গলায় ব্রণ হওয়া অস্বাভাবিক নয়। বরং এটা বেশ সাধারণ ঘটনা।”
চল্লিশোর্ধ্ব বয়সে গলায় কেন হঠাৎ করে ব্রণ দেখা দেয়? কীভাবে দ্রুত মুক্তি পাওয়া যায়? এসব বিষয়ে ত্বক বিশেষজ্ঞরা দিয়েছেন নানান পরামর্শ।
গলার ব্রণ হওয়ার প্রধান কারণ
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘মারিওয়ালা ডার্মাটোলজি’র প্রতিষ্ঠাতা ও ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. কবিতা মারিওয়ালা একই প্রতিবেদনে বলেন, “অনেকেরই গলার ব্রণ অত্যন্ত বড় ও ব্যথাযুক্ত হয়। সাধারণত দুই ধরনের মানুষ এতে বেশি আক্রান্ত হন। প্রথমত, যারা নিয়মিত শরীরচর্চা করেন, অতিরিক্ত ঘামেন। তবে ঘামার পরপরই গোসল করেন না। দ্বিতীয়ত, যারা হরমোনজনিত ব্রণের সমস্যায় ভুগছেন।”
ডা. শেরিন ইড্রিস আরও বলেন, “চল্লিশোর্ধ্ব নারীদের মধ্যে অনেকেই ঋতুবন্ধ বা ‘পেরিমেনোপজ’ ধাপে থাকেন। এই সময় শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যায় এবং টেস্টোস্টেরন তুলনামূলক বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। এর ফলেই চোয়াল, গলা ও ঠোঁটের নিচে অতিরিক্ত তেল উৎপাদন শুরু হয়, যা ব্রণের অন্যতম কারণ।”
যেসব কারণে গলার ব্রণ আরও খারাপ হয়
ডা. ইড্রিস বলেন, “গলায় গয়না পরা, টাইট কলার বা স্কার্ফ ব্যবহার করলে ঘর্ষণের ফলে ব্রণের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। তাছাড়া ঘন ঘন গলায় হাত দেওয়া বা ঘষাঘষি করাও ব্রণ বাড়াতে পারে।”
ডা. মারিওয়ালার মতে, “কিছু উপাদানও গলার ত্বকে ব্রণের জন্য দায়ী হতে পারে। অনেকেই রেটিনল ব্যবহার করেন, যা গলার ভাঁজে আটকে থেকে চুলকানি বা র্যাশ তৈরি করতে পারে। তাই রেটিনয়েড ব্যবহার না করাই ভালো।”
“এছাড়া সুগন্ধি বা গায়ে দেওয়া পারফিউম গলার ত্বকে লাগানো উচিত নয়। পোশাকে ডিটারজেন্ট বা সাবান ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় ‘হাইপোঅ্যালার্জেনিক’ বা সংবেদনশীল ত্বকের জন্য উপযোগী কাপড় ধোয়ার সাবান ব্যবহার করলে”- পরামর্শ দেন ডা. মারিওয়ালা।
তবে একটা ভুল ধারণা দূর করেন এই চিকিৎসক।
তিনি বলেন, “অনেকে ভাবেন খোলা চুল গলায় পড়লে ব্রণ বাড়ে। তবে বাস্তবে এর তেমন প্রভাব নেই।”
গলার ব্রণ দ্রুত দূর করার উপায়
ডা. ইড্রিস বলেন, “অনেকেই মুখ ধুয়ে ফেললেও গলা ভালো করে পরিষ্কার করেন না। ফলে গলা ও আশপাশের ত্বকে ময়লা, রোদে পোড়া প্রসাধনী, মেইকআপ ও ঘামের স্তর জমে থাকে, যা ব্রণ সৃষ্টি করে।”
ত্বক পরিষ্কারের জন্য উপযুক্ত ফেইসওয়াশ
গলায় নিয়মিত পরিচ্ছন্নতার জন্য ডা. ইড্রিস পরামর্শ দেন, “সপ্তাহে দুয়েকবার গোসলের সময় ‘বেনজয়েল পারঅক্সাইড’ যুক্ত ফেইসওয়াশ ব্যবহার করতে হবে। এটি ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংসে সাহায্য করে। যদি ত্বক অতিরিক্ত তৈলাক্ত হয়, তাহলে সালফারযুক্ত ফেইসওয়াশ ব্যবহার করলে, সেটা সিবাম বা ত্বকের তেল নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।”
উপযুক্ত ক্রিম বা লোশন
ডা. মারিওয়ালা বলেন, “আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড’, যেমন- গ্লাইকোলিক অ্যাসিডযুক্ত ক্রিম খুঁজে নিতে হবে। ত্বকে প্রয়োগের আগে চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যাক্টেরিয়ারোধী ক্রিম ব্যবহার করা উচিত। বাইরে বের হওয়ার আগে ‘হাইপোক্লোরাস অ্যাসিড’ স্প্রে ব্যবহার করা ভালো, যা ত্বকের জন্য একটি সুরক্ষা স্তর তৈরি করে।”
নিয়মিত এক্সফোলিয়েশন
ডা. ইড্রিস বলেন, “গলার ত্বক পরিষ্কার রাখতে সপ্তাহে অন্তত দুবার রাসায়নিক এক্সফোলিয়েট ব্যবহার করতে হবে। তবে তা যেন ত্বকের জন্য বেশি তীব্র না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।”
হরমোন সংক্রান্ত পরীক্ষা
ডা. ইড্রিস আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেন, “গলায় হঠাৎ করে ব্রণ ওঠা ‘পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম’-এর লক্ষণ হতে পারে। যা অনেক নারী চল্লিশের পরেও ভোগেন। তাই এমন ব্রণ দেখা দিলে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় রক্ত পরীক্ষা করানো উচিত।”
আরও পড়ুন
ব্রণ হওয়ার বিভিন্ন কারণ ও প্রতিকার