Published : 25 May 2025, 03:49 PM
দৈনন্দিন রূপচর্চার একটি অপরিহার্য উপাদান হল মেইকআপ ব্রাশ। সাজগোজের সময় ফাউন্ডেশন, ব্লাশ, কনসিলার কিংবা আইশ্যাডো সবকিছুই নিখুঁতভাবে ত্বকে বসাতে সাহায্য করে ব্রাশগুলো।
তবে ব্রাশ পরিষ্কার করার কাজটি প্রায়শই ফেলে রাখা হয় বা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। অথচ নিয়মিত মেইকআপ ব্রাশ পরিষ্কার না করলে ত্বকের নানান সমস্যা তৈরি হতে পারে।
এতে ত্বকে জীবাণুর আবাস গড়ে ওঠে। যা ব্রণ, অ্যালার্জি ও নানান রকম ত্বকজনিত সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
কতদিন পর পর মেইকআপ ব্রাশ পরিষ্কার করা উচিত?
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘মিশেল ডার্মাটোলজি’র প্রতিষ্ঠাতা এবং চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হোপ মিশেল ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “সাধারণ ত্বক হলে সপ্তাহে অন্তত একবার মেইকআপ ব্রাশ পরিষ্কার করা উচিত। তবে ত্বক তৈলাক্ত বা ব্রণপ্রবণ হয়, তাহলে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্রাশ পরিষ্কার করাই ভালো। এটি ত্বকে জীবাণু জমা হওয়া এবং ত্বকের জ্বালা-পোড়া বা ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা কমায়।”
একই প্রতিবেদনে নিউইয়র্ক সিটি-ভিত্তিক ‘ইউনিয়নডার্ম’ -এর চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. পূজা রম্ভিয়া বলেন, “জীবন যত ব্যস্তই হোক না কেন, সপ্তাহে অন্তত একবার ব্রাশ পরিষ্কার করার অভ্যাস গড়ে তুললে ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।”
মেইকআপ ব্রাশ পরিষ্কার না করলে কী হয়?
ডা. মিশেল বলেন, “নিয়মিত ব্রাশ পরিষ্কার না করলে এতে ব্যাক্টেরিয়া, তেল এবং মৃত ত্বকের কোষ জমতে থাকে। এসব থেকে তৈরি হয় ব্রণ, র্যাশ এবং বিভিন্ন ত্বকজনিত রোগ।”
ডা. রম্ভিয়ার মতে, “শুধু ব্রাশ নয়, বিউটি স্পঞ্জ বা ব্লেন্ডারেও একই সমস্যা হতে পারে।”
যুক্তরাজ্যেল ‘অ্যাস্টস ইউনিভার্সিটি’র ‘স্কুল অফ লাইফ অ্যান্ড হেল্থ সায়েন্সেস’য়ের করা গবেষণায় দেখা গেছে, বিউটি ব্লেন্ডারে ‘স্ট্যাফিলোকোকাস অরিয়াস’, ‘এন্টারোব্যাক্টেরিয়াসি’ এবং ছত্রাক ধরনের জীবাণুর পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি থাকে।
তিনি আরও বলেন, “এই জীবাণুগুলো ত্বকে সংক্রমণ ঘটাতে পারে, একজিমার মতো প্রদাহজনিত সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। নিয়মিত ব্রাশ পরিষ্কার করলে এই ধরনের ত্বক সমস্যার ঝুঁকি কমে যায়।”
এছাড়াও ডা. মিচেল যোগ করেন, “অপরিষ্কার ব্রাশে মেইকআপ দিলে তা ত্বকে ভালোভাবে বসে না, মেইকআপের ফিনিশিং অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে পড়ে।”
মেইকআপ ব্রাশ পরিষ্কার করার সেরা উপায়
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ব্রাশ পরিষ্কারের জন্য ‘ডাবল ক্লেনজিং’ পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত।
প্রথম ধাপে মাইসেলার ওয়াটার বা তেল-ভিত্তিক ক্লেনজার দিয়ে ব্রাশে জমে থাকা প্রসাধনী আলগা করে নিতে হবে৷
এরপর হালকা গরম পানিতে ব্রাশ ভিজিয়ে ফোম ধর্মী কোমল ফেইস ক্লেনজার দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
তাছাড়া বাজারে মেইকআপ ব্রাশ পরিষ্কারের জন্য বিশেষভাবে তৈরি ক্লেনজারও রয়েছে। এগুলোও ভালো বিকল্প।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক রূপসজ্জাকর ব্রিয়েলে পোলারা বলেন, “ব্রাশ পরিষ্কারের সময় ‘ম্যাট ক্লেঞ্জার’ ব্যবহার করলে সবচেয়ে ভালো ফল মেলে।
তার পরামর্শ, “সামান্য পরিমাণ সাবান ম্যাটে লাগিয়ে ব্রাশ ঘষে পরিষ্কার করা উচিত যতক্ষণ না ফেনা বন্ধ হয়।”
পরিষ্কারের পর হালকা গরম পানিতে ব্রাশ ধুয়ে নিতে হবে এবং একটি পরিষ্কার তোয়ালে বা কাপড়ের ওপর রেখে শুকাতে দিতে হবে।
ব্রাশ যখন আধা শুকনা অবস্থায় থাকবে, তখন উল্টোভাবে কাপে বসিয়ে দিলে ভেতরে পানি জমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে না এবং ব্রাশের আকারও ঠিক থাকে।
প্রতিবার ব্যবহারের পরই কি ব্রাশ ধুতে হবে?
সব ব্রাশ প্রতিবার ব্যবহারের পর ধোয়ার প্রয়োজন নেই। তবে ফাউন্ডেশন বা কনসিলারের মতো তরল মেইকআপ পণ্যের জন্য ব্যবহৃত ব্রাশগুলো প্রতিবার ব্যবহারের পর ধুয়ে ফেলা উচিত। বিশেষ করে যদি ত্বক তৈলাক্ত বা ব্রণ প্রবণ হয়।
ডা. রম্ভিয়া বলেন, “তরল মেইকআপ দ্রব্য সহজেই ব্যাক্টেরিয়া বহন করে এবং ত্বকে সমস্যা তৈরি করতে পারে।”
তবে যদি শুধু পাউডার ব্যবহার করা আর সাধারণত ব্রাশ ব্যবহারে ত্বকে সমস্যা না হয়, তাহলে সপ্তাহে একবার ধুলেই যথেষ্ট।
ব্রিয়েলে পোলারা বলেন, “প্রতিবার ব্যবহারের পর ব্রাশ ধুলে সেটা দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই সতর্কতার সাথে পরিষ্কারের রুটিন অনুসরণ করা উচিত।”
আরও পড়ুন