Published : 02 Jun 2025, 03:22 PM
ত্বকের যত্নে কত কিছুই না করা হয়। কেউ সকালে ঘুম থেকে উঠে ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধোয়ার পর রূপচর্চা শুরু করেন, কেউ আবার রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মুখ ধুয়ে ত্বককে বিশ্রাম দেন।
তবে একটি প্রশ্ন প্রায়ই ঘুরেফিরে আসে, সেটি হল দিনে কয়বার মুখ ধোয়া উচিত?
এই বিষয়ে ত্বক বিশেষজ্ঞদের মাঝে এক ধরনের দ্বিধা ছিল অনেকদিন ধরে। কেউ বলেন দিনে একবার ধুলেই যথেষ্ট, আবার কেউ বলেন তিনবার ধোয়া ভালো।
তবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক তিনজন ত্বক বিশেষজ্ঞ সবাই একমত হয়েছেন একটি সংখ্যায়, আর সেটি হলো দিনে দু’বার মুখ ধোয়া উচিত।
কেন মুখ ধোয়া জরুরি?
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. লরেন ময় রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “মুখ ধোয়ার মাধ্যমে প্রতিদিনের ধুলোবালি, ঘাম, তেল, মেইকআপ এবং পরিবেশ থেকে আসা দূষিত উপাদানগুলো সরিয়ে ফেলতে হয়। এ ছাড়া মুখ ধোয়ার ফলে ত্বকে যেসব ‘স্কিন কেয়ার’ পণ্য ব্যবহার করা হয়, সেগুলো আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারে।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “যদি নিয়মিত মুখ না ধোয়া হয় তাহলে ময়লা, তেল ও মৃত কোষ জমে ত্বকে ব্রণ হতে পারে। ত্বক মলিন, অনুজ্জ্বল এবং অস্বস্তিকর দেখাতে পারে। বিশেষ করে যদি মুখে ঘাম ও মেইকআপ জমে থাকে, তাহলে ত্বকে প্রদাহেরও ঝুঁকি থাকে।”
তবে অতিরিক্ত ধোয়া কিন্তু ক্ষতিকর
যুক্তরাষ্ট্রের ‘মেড ফরটিফোর আর্কেডিয়া’ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও কসমেটিক বিশেষজ্ঞ হলি মুলার বলেন, “অতিরিক্ত মুখ ধোয়ার ফলে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল ধুয়ে যায়। এতে ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে পড়ে এবং ত্বকে জ্বালা, লালচেভাব কিংবা অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা দেখা দিতে পারে।”
তাহলে সঠিক সংখ্যা কী?
যুক্তরাষ্ট্রের ‘মন্টেফিয়োর আইনস্টাইন অ্যাডভান্সড কেয়ার’–এর ‘কসমেটিক ডার্মাটোলজি’র পরিচালক এবং ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. সেনিয়া কোবেটস বলেন, “দিনে দুবার অর্থাৎ সকাল ও রাতে মুখ ধোয়ার অভ্যাসটাই সবচেয়ে ভালো। সকালে ধোয়ার মাধ্যমে রাতে ব্যবহৃত সেরাম, ক্রিম এবং মাথার চুল থেকে মুখে আসা পণ্যের আস্তরণ সরিয়ে ফেলা যায়। সেইসঙ্গে ত্বকের যত্নের রুটিনের জন্য ত্বক প্রস্তুত হয়।”
তিনি আরও বলেন, “রাতে ধোয়ার মাধ্যমে সারাদিন জমে থাকা ধুলাবালি, ঘাম, মেইকআপ এবং পরিবেশ দূষণ দূর হয়। এতে রাতের ত্বকের যত্নের পণ্যগুলোর উপকারিতা আরও বাড়ে।”
শুষ্ক বা সংবেদনশীল ত্বকের জন্য?
বিশেষজ্ঞদের মতে, যাদের ত্বক শুষ্ক বা সংবেদনশীল, তাদেরও দিনে দুবার মুখ ধোয়ার অভ্যাস রাখা উচিত। তবে ক্লেনজার বাছাইয়ে সতর্কতা প্রয়োজন।
ডা. কোবেটস বলেন, “এই ধরনের ত্বকের জন্য এমন ক্লেনজার দরকার যাতে গ্লিসারিন, হায়ালুরনিক অ্যাসিড এবং নিয়াসিনামাইডের মতো ময়েশ্চারাইজিং উপাদান থাকে। ক্রিম বা তেল নির্ভর ক্লেনজার ব্যবহার করা ভালো।”
অনেকেই শুধু পানি দিয়ে মুখ ধোয়ার পক্ষপাতি।
তবে কোবেটস সতর্ক করে বলেন, “শুধু পানি দিয়ে মুখ ধোয়ার ফলে ত্বকে জমে থাকা ধুলা, দূষণ, মৌসুমী অ্যালার্জেন ঠিক মতো পরিষ্কার হয় না। এতে রোমকূপ বন্ধ হয়ে যেতে পারে, ব্রণের প্রকোপ বাড়তে পারে এবং অ্যালার্জিও হতে পারে।”
ব্রণপ্রবণ ত্বকের জন্য কী করবেন?
হলি মুলার বলেন, “যাদের ত্বক ব্রণ প্রবণ, তাদেরও দিনে দুবার মুখ ধোয়া উচিত। তবে ব্যবহার করতে হবে হালকা, জেল-ধরনের বা ‘ওয়াটার-বেইসড ক্লেনজার’, যাতে ‘নন-কোমেডোজেনিক’ উপাদান থাকে অর্থাৎ রোমকূপ বন্ধ করে না।”
তিনি আরও বলেন, “যদি কেউ নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তবে ব্যায়ামের পর ঘাম ও ব্যাক্টেরিয়া সরাতে অতিরিক্ত একবার মুখ ধোয়া যেতে পারে। না হলে নরম কাপড় দিয়ে মাইসেলার ওয়াটার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করাও ভালো উপায়।”
অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে
ডা. লরেন ময় জানান, অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বক থাকলেই বেশি বার মুখ ধোয়া উচিত। এটা ভুল ধারণা।
তিনি বলেন, “বারবার মুখ ধোয়ার ফলে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল চলে যায়। ফলে ত্বক নিজে থেকেই অতিরিক্ত তেল উৎপাদন করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করে। এতে ত্বকে ব্রণ, প্রদাহ এবং অতিসংবেদনশীলতা দেখা দেয়।”
যদি মুখের ত্বক ধোয়ার পর টান টান লাগে অথচ তেলতেলে ভাবও হয় তবে বুঝে নিতে হবে অতিরিক্ত মুখ ধোয়া হচ্ছে।
“এই অবস্থায় দুবার মুখ ধোয়ার নিয়মে ফিরে যান এবং হালকা ও ময়েশ্চারাইজিং ক্লেনজার ব্যবহার করুন, যেগুলো ত্বকের রোমছিদ্র বন্ধ করে না”- পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।
আরও পড়ুন