Published : 07 Jul 2014, 10:51 AM
'সিভিল সোসাইটি' শব্দটি বাংলাদেশে হালে বেশ বাজার পেয়েছে। আর বাজার অর্থনীতির সূত্রানুযায়ী 'সিভিল সোসাইটি'র ব্যানারে কিছু মানুষ 'পপুলার' হওয়ার পাশাপাশি বেশ 'প্রফিটেবল'ও হয়েছেন। আজকে আমরা রাষ্ট্রদর্শনের ল্যাবরেটরিতে নিয়ে এ 'সিভিল সোসাইটি'কে একটু টেস্ট করব। দেখব, এটা তার গুণগত মান রক্ষা করছে কিনা। নাকি আর দশটা বাজারি পণ্যের মতোই এটিও ভেজালে পরিপূর্ণ। দেখব, এটি তার ঐতিহাসিক, তত্ত্বগত এবং জন্মগত দায়িত্ব পালন করছে, নাকি এটি 'সিভিলদের' খায়, 'সাম্রাজ্যবাদের' মোষ তাড়ায়!
রোমান ভাষায় 'রাষ্ট্র' মানে 'সিভিটাস'। এই 'সিভিটাসে'র অধিবাসীরাই 'সিভিল'। গ্রিস ও রোমে রাষ্ট্র ছিল নগরকেন্দ্রিক। ফলে নগরের বাসিন্দারাই ছিল নাগরিক। যার অর্থ দাঁড়ায়, 'সিভিটাস' মানে রাষ্ট্র । 'সিভিল' মানে রাষ্ট্রের নাগরিক। আর 'সোসাইটি' মানে সমাজ। সুতরাং 'সিভিল সোসাইটি' মানে হচ্ছে 'নাগরিক সমাজ' বা 'নগর সমাজ'।
ব্যবহারিক অর্থে 'সিভিল' হলেও এটি প্রকৃত 'সিভিল' ওরফে 'সাধারণের সমাজ' নয়। 'সিভিল সোসাইটি'র অর্থ কখনও-ই অ-নাগরিক ওরফে 'গ্রামীণ সমাজ' হয়নি। কোনোকালেই 'সিভিল সোসাইটি'র মর্মার্থের ভেতরে নগরের বাইরে সমাজ বা 'গ্রামীণ সমাজ' বা 'আম-সমাজ'কে নেওয়া হয়নি। আর 'সিভিল সোসাইটি'র অর্থের চৌহদ্দিতে কোনোকালেই অ-নাগরিক সমাজের ঠাঁই হয়নি।
এ সোসাইটিকে বুর্জোয়া দার্শনিকের বরপুত্ররা সোহাগ করে 'পলিটিক্যাল সোসাইটি' অভিধায় ভূষিত করেছেন। (১) এটি কোন পূণ্যে আবার 'পলিটিক্যাল সোসাইটি' হল তারও একটি শানে-নুযুল আছে। গ্রিক ভাষায় 'পলিস' মানে রাষ্ট্র। আর 'পলিসে'র ভাবে মানুষের স্বভাবে আছে 'পলিটিক্স'। (২) তাই এ 'পলিসে'র সমাজকেই এক কাঠি সরেসরা বলেছেন 'পলিটিক্যাল সোসাইটি'।
এ প্রবন্ধে 'সিভিল সোসাইটি' নামক যে বস্তুটি (!) নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সতের দশকের রাষ্ট্রদার্শনিক জন লক হক করে একে বলেছেন 'পলিটিক্যাল সোসাইটি'। এটাকে বাংলা করা যায় 'রাষ্ট্রসমাজ' নামে। (৩) সে 'রাষ্ট্রসমাজ' এতদিনে হয়ে উঠেছে 'ধনিক সমাজ'। ক্ষেত্র বিশেষে 'বণিক সমাজ'। (৪) ফরাসি ভাষায় এর অর্থ দাড়াঁয় 'বুর্জোয়া সমাজ'। আর জার্মান দার্শনিক হেগেল একে বলেছেন 'বুর্গার সমাজ'। 'সাহেবরা' ওরফে ইংরেজরা বলেন 'সিভিল সোসাইটি'। আমরা পরের ধনে পোদ্দারি করে এর দেশিকরণ করেছি 'সুশীল সমাজ' বা 'নাগরিক সমাজ'।
বর্তমানে 'সিভিল সোসাইটি' শব্দটি বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়। বর্তমান পরিবর্তিত ইউনিপোলার বিশ্বে 'সিভিল সোসাইটি' নতুনরূপে জারি হয়েছে। পৃথিবীর দেশে দেশে একটি প্রকৃত 'সিভিল সোসাইটি'র প্রয়োজনীয়তা আজ তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে। বিশেষ করে, বুর্জোয়া সমাজ ব্যবস্থার যে অন্যতম বৈশিষ্ট্য 'শ্রেণিবৈষম্য' ও 'শ্রেণিশোষণ'– রাষ্ট্র সেই শ্রেণিবৈষম্য ও শ্রেণিশোষণ লালন করে, পালন করে এবং ধারণ করে। (৫) কিন্তু জন্মগত এবং ঐতিহ্যগতভাবে সাধারণ ও সরল দৃষ্টিতে মনে হয়, রাষ্ট্র হবে জনসাধারণের বন্ধু, সুহৃদ ও সহমর্মী। কিন্তু রাষ্ট্র নামক প্রতিষ্ঠানটির জন্মই হয়েছে শ্রেণির স্বার্থ রক্ষার জন্য। আরও সরস করে বললে, সমাজের উঁচুতলার মানুষ ওরফে 'এলিট সোসাইটি'র স্বার্থরক্ষার জন্য।
তাই রাষ্ট্রের কোন মহৎ কামে এ 'সিভিল সোসাইটি'র প্রয়োজন বা রাষ্ট্রকাঠামোয় এ 'সিভিল সোসাইটি'র ভূমিকা কী বা সমাজের এলিট সোসাইটির সঙ্গে সিভিল সোসাইটির চরিত্রগত এবং কর্মগত কোন প্রকৃতির মিল বা অমিল বা গরমিল রয়েছে, তা একবার পরখ করা জরুরি। পাশাপাশি এ মুলুকে যে মহান মহান শীলদের (!) নিয়ে তথাকথিত 'সুশীল সমাজ' বা 'নাগরিক সমাজ' ও এর যে সক্রিয়তা দেখা যায়, তারা কি আদৌ 'সুশীল সমাজ' বা 'সিভিল সোসাইটি' নাকি শ্রেণি-স্বার্থবাদী, বুর্জোয়া সমাজের চতুুর অংশ 'এলিট সোসাইটি'র সাহেবি-সংস্করণ, সেটা নিয়ে সওয়াল জওয়াব করা জরুরি।
মানুষ একাধারে সামাজিক ও রাজনৈতিক জীব। কেননা সমাজ যেমন রাজনীতির বাইরের কিছু নয়, তেমনি রাজনীতিও সমাজের অন্তর্ভুক্ত। সমাজ ও রাজনীতি চলে যুগলে, বগলে-বগলে। কিন্তু সভ্যতার বিকাশের বিশেষ এক পর্বে এসে মানুষ রাষ্ট্র গঠন করে। প্রশ্ন আসে, মানুষের মধ্যে কেন এ রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল? মানুষ কীভাবে 'রাষ্ট্র' নামক একটি প্রতিষ্ঠানের জন্ম দেয়?
আমরা ফরাসি দার্শনিক জ্যাঁ জ্যাক রুশোর জবানে শুনি। রুশো তাঁর জগদ্বিখ্যাত কেতাব 'সোস্যাল কন্ট্রাক্টে'(১৭৬২)- এ বিষয়ে সবিস্তার আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন–
''মানুষের ইতিহাসে এমন একটি অবস্থা হাজির হল, তখন ব্যক্তির পক্ষে প্রকৃতির রাজ্যে অবস্থান করবার বিরোধী শক্তিগুলি তার স্বপক্ষের শক্তির চাইতে অধিক শক্তিশালী হয়ে উঠল। প্রকৃতির রাজ্যে ব্যক্তির পক্ষে নিজের অবস্থান বজায় রাখার পক্ষে নিযুক্ত শক্তির চাইতে বিরোধী শক্তিগুলোর আধিক্য দেখা গেল। এমন অবস্থায় প্রকৃতির রাজ্যে মূল ক্রিয়াশীল অবস্থাটি আর বিদ্যমান থাকতে পারছে না। এমন অবস্থায় মানবজাতির চরিত্র পরিবর্তিত না হলে, মনুষ্য জাতি হিসেবে প্রকৃতির রাজ্যে তার অস্তিত্ব অনিবার্যভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হত।'' (৬)
এভাবে মানুষ তার অস্তিত্বের প্রয়োজনে একদিন সমাজবদ্ধ হয়। মানুষ সমাজবদ্ধ হয় অধিকতর, উন্নততর, নিশ্চিত ও স্বাধীন জীবন যাপন করার মতলবে। মানুষ জন্মগত ও প্রকৃতিগতভাবেই স্বাধিকার, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অধিকারী। প্রকৃতির রাজ্যে মানুষের এ স্বাধীনতা এবং প্রকৃতিগতভাবে সুশৃঙ্খল নিয়মের বিস্তর গুণগান পাওয়া যায় দার্শনিক থমাস হব্স-এর কেতাব 'লেভিয়াথান'(১৬৫১)-এ। মহামতি হব্স এটাকে বলেছেন 'ন্যাচারাল রাইট্স' ওরফে 'প্রকৃতিপ্রদত্ত স্বাধীনতা'। (৭)
মানুষ তার এ প্রকৃতিপ্রদত্ত স্বাধিকার, স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব একটি সমষ্টিগত সংস্থার কাছে জমা দেয়– নিজের অধিকার, স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বকে অধিকতর নিশ্চিত ও নিরাপদ করার অভিপ্রায়ে। মানুষের এ সমাজবদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়ায় যে 'সংঘ' গড়ে উঠে, তা-ই মূলত রাষ্ট্র। রাষ্ট্রদর্শনে 'সংঘ' ভিত্তিক রাষ্ট্রগঠনের এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় 'সামাজিক চুক্তি'। (৮) মানুষ একটি চুক্তির মাধ্যমে এ 'সামষ্টিক সংঘ' তৈরি করে। ফলে রাষ্ট্র ও জনগণ ওরফে সিভিলদের মধ্যকার সম্পর্ক হবে ভ্রাতৃত্বের। পরষ্পর হবে পরষ্পরের সুহৃদ।
আন্তনিও গ্রামসি বয়ান করেছেন–
''রাষ্ট্র হবে সিভিলদের রক্ষক ও প্রতিপালনকারী। সিভিলদের ভালো-মন্দের দেখভালকারী ও অধিকার সংরক্ষণকারী।'' (৯)
তাই শ্রেণিবৈষম্যহীন আশরাফ-আতরাফহীন সকলের সমানাধিকারের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয় এ 'সমাজ সংস্থা'। রুশোর বয়ান হচ্ছে–
''যেহেতু নিঃশর্তভাবে আমরা প্রত্যেকে সমর্পিত হয়েছি একটি সমষ্টিগত ইচ্ছায়-সৃষ্ট 'সমাজ সংস্থা'র কাছে, সে কারণে এখানে কারও সঙ্গে অপর কারও বিন্দুমাত্র বৈষম্য থাকা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেকে এবং সকলে প্রত্যেকের এবং সকলের সমান। আর যেহেতু সকলের ক্ষেত্রে সমর্পণ হচ্ছে সমান ও সামগ্রিক, সে কারণে সংস্থার সদস্যদের কারও পক্ষেই অপর কারও প্রতি কোনোরূপ বৈষম্যের মাধ্যমে তার নিজের কোনো যথার্থ স্বার্থ সাধিত হতে পারে না।'' (১০)
এখন বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যাক। এ ব্যাখ্যার এক পর্যায়ে 'সিভিল সোসাইটি' কী চিজ তার সাক্ষাৎ পাব। মানুষ এভাবে চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের জন্ম দেয়। চুক্তি অনুযায়ী একদল রাজা হয়, একদল হয় প্রজা। রাজা এ মর্মে 'সমাজ সংস্থা' ওরফে রাষ্ট্রের দায়িত্ব নেয় যে, সে প্রজাদের স্বাধীনতা রক্ষা করবে, প্রজাদের জান-মালের হেফাজত করবে এবং প্রজাদের ভালো-মন্দের দেখভাল করবে, সর্বোপরি প্রজাহিতৈষী হবে। অন্যদিকে প্রজারা রাজার একান্ত বাধ্যগত থাকবে, রাজার কথা মেনে চলবে এবং রাজার অনুগত থাকবে।
চুক্তিতে এ-ও থাকল যে, 'রাজা যদি জনগণের আমানত (সংঘ বা রাষ্ট্রের) খেয়ানত করে, জনগণের প্রদত্ত ক্ষমতার অপব্যবহার করে, তবে জনগণ সে ক্ষমতা কেড়ে নিতে পারে'। (১১)
রুশো এটাকে আরও একধাপ এগিয়ে রেখেছেন। তিনি বলেন–
''সর্বত্রই এ চুক্তি সর্বসম্মতিতে সম্পাদিত ও স্বীকৃত। ব্যাপারটার এ বোধ আমাদের সামগ্রিকভাবে এ রূপেই থাকতে হবে যে চুক্তির যদি কোনো বিরোধিতা বা বিচ্যুতি ঘটে, তবে আবদ্ধ প্রত্যেক ব্যক্তি ইতোপূর্বে প্রদত্ত প্রত্যেকটি অধিকারই পুনরায় ফিরে পাবে। তার প্রাকৃতিক যে স্বাধীনতাকে সম্মতির ভিত্তিতে সে প্রদান করেছিল, সে সম্পাদিত চুক্তির বিচ্যুতির কারণে তার নিজের প্রাকৃতিক স্বাধীনতা তার কাছে পুনরায় প্রত্যার্পিত হবে।'' (১২)
এখন মজার ব্যাপার হচ্ছে, রাজা তার দায়িত্ব ও কর্তব্য ঠিকমতো পালন করছে কিনা কিংবা রাজা চুক্তিভঙ্গ করছে কিনা কিংবা প্রজারা চুক্তি মোতাবেক রাজার অনুগত কিনা বা প্রজারা রাজার অবাধ্য হয়ে চুক্তি ভঙ্গ করছে কিনা তা দেখবে কে, এ সওয়াল সামনে এল। ডেভিড হিউম তাঁর 'অরিজিনাল কন্ট্রাক্ট' (১৭৪৮)-এ বয়ান করেন–
''সার্বভৌমত্বের ক্ষমতা চুক্তির মাধ্যমে অন্যের কাছে প্রদত্ত হলেও তা ভঙ্গ হচ্ছে কিনা তার নজরদারি করা দরকার।'' (১৩)
চুক্তির মাধ্যমে প্রজার ব্যাধি সারাবে রাজা কিন্তু রাজার ব্যাধি সারাবে কে? ওঁঝা দরকার হল। তখনই প্রজাদের (সিভিল) মধ্য থেকে আরেক দল প্রতিনিধি নির্বাচন করা হল। এদের কাজ হচ্ছে রাজা চুক্তি ভঙ্গ করছে কিনা তদারকি করা। আর এরাই হচ্ছে 'সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি'। জন্মের গুণে এরা 'সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি' হলেও কালের গুণে এরাই হয়ে উঠে 'সিভিল সোসাইটি'। লক এদের বলেছেন 'পলিটিক্যাল সোসাইটি'। হব্স বলেছেন 'সিভিল সোসাইটি'। নিকোলো মেকিয়াভ্যালি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ 'দ্য প্রিন্স'(১৫৩২)-এ বলেছেন 'সিভিল প্রিন্সিপলিটি'। (১৪)
মানব সমাজের শুরুতেই সংঘবদ্ধ বা সমাজবদ্ধ বা রাষ্ট্রবদ্ধ জীবনের প্রারম্ভনায় এ 'সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি' ধারণাটিই সময়ের পরিক্রমায় পৃথিবী ঘুরে আজকে বাংলাদেশে এসে নামায়ন হয়েছে 'সুশীল সমাজ' বা 'নাগরিক সমাজ'। ইতোমধ্যে পৃথিবী পাড়ি দিয়েছে হাজার বছর। ব্রহ্মপুত্র দিয়ে গড়িয়ে গেছে কত জল। নীল নদের পানি আর নীল নেই; সভ্যতার উন্মাদনায় লাল হয়ে গেছে। মানুষের সভ্যতা, সমাজ, সময় ও চিন্তা পাল্টে গেছে। বিবর্তন, পরিবর্তন, পরিমার্জন, পরিবর্ধন এবং বিকাশের মাধ্যমে মানব সমাজ, সভ্যতা ও সংস্কৃতি তার নিজের একটি আদল ধারণ করেছে।
মানুষ নিজেদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশের ও প্রতিপত্তি লাভের সঙ্গে সঙ্গে নিজে হয়ে উঠেছে জটিল, কুটিল, চতুুর, স্বার্থপর, ভোগবাদী ও আত্মপর। ফলে 'সিভিল সোসাইটি'র প্রয়োজনীয়তা এবং গুরুত্ব সমাজ ও সভ্যতার প্রাথমিক পর্যায়ে অতটা অনুভূত না হলেও হাল আমলে এর ভূমিকা ও গুরুত্ব কেবল বেড়েই চলেছে। বর্তমান সময়ে এর প্রয়োজনীয়তা হয়ে উঠেছে অনস্বীকার্য।
প্রজারা যদি 'সিভিল' হয়, তবে তাদের এবং দেশের ভালোমন্দ দেখার প্রতিনিধি তো 'সিভিল সোসাইটি'ই হবেন। আর রাজা যেহেতু প্রজার আনুকূল্য নিয়ে রাষ্ট্রের ক্ষমতা অর্জন করেন (১৫)– সেহেতু রাজা প্রজার (সিভিল) প্রতি স্থায়ী দায়িত্ব পালন করছেন কিনা তা তদারকি করার জন্য একটি সত্যিকার 'সিভিল সোসাইটি'র প্রতিনিধি প্রয়োজন।
উৎপত্তি ও ব্যুৎপত্তিগত দিক দিয়ে, ভাবে এবং স্বভাবের দিক দিয়ে ঠিকই তো আছে। কিন্তু ঘাপলা হচ্ছে অন্য জায়গায়। চরিত্রগতভাবে এ 'সিভিল সোসাইটি' সাধারণ জনগণের প্রতিনিধি হওয়ার কথা থাকলেও, বর্তমান দুনিয়ার প্রেক্ষাপটে এটি মূলত রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করে, যে রাষ্ট্রের ভূমিকা হচ্ছে সমাজের এলিট শ্রেণি ও বুর্জোয়া শ্রেণির স্বার্থ সংরক্ষণ করা। আরও খোলাসা করে বললে, 'সিভিল সোসাইটি' প্রকৃতার্থে এবং প্রায়োগিক অর্থে 'সমাজের এলিট শ্রেণি'ই বটে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি আরও গুরুতর। কেউ গোস্বা করলে মার্জনা করবেন।
বাংলাদেশে 'সিভিল সোসাইটি'র ধারণাটিকে বিভিন্ন শব্দ ও ব্যাখ্যার ফতোয়া পরানো হয়। কেউ এটাকে বলেন 'নাগরিক সমাজ', কেউ-বা বলেন 'গণতান্ত্রিক সমাজ', কেউ বলেন 'সুশীল সমাজ' আবার কেউ-বা বলেন 'সভ্য সমাজ'। (১৬) যেভাবেই এর চরিত্র জাহির করা হোক না কেন, সব রসুনের তলা এক। বাংলাদেশ প্রেক্ষিতে এ 'সিভিল সোসাইটি'র একটু নাড়ির খবর নেওয়া যাক।
বাংলাদেশে 'সিভিল সোসাইটি' ধারণাটির ব্যবহার এবং চর্চা খুব বেশি দিনের নয়। স্বাধীনতা-পূর্ব এবং স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে 'সিভিল সোসাইটি'র ধারণা এবং প্রয়োগের মধ্যে বিস্তর ফারাক দেখা যায়। স্বাধীনতা-পূর্ব 'সিভিল সোসাইটি' বলতে সচেতন ছাত্র সমাজ, পশ্চিম পাকিস্তানবিরোধী সর্বসাধারণের সমষ্টিগত এবং সমন্বয়গত ঐক্য বোঝানো হত। (১৭) কেননা তখন শাসক ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি আর 'সিভিল' ছিল পূর্ব পাকিস্তানি (বর্তমান বাংলাদেশ)।
ফলে 'সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি' বলতে সহি অর্থে যে মহার্ঘটি নির্দেশ করে, পূর্ব-পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের প্রতিনিধিরা ছিলেন সত্যিকার অর্থেই 'সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি' ওরফে 'সিভিল সোসাইটি'। কিন্তু ঘাপলাটা শুরু হল স্বাধীনতার পরে। ঘি তো আর সবার পেটে হজম হয় না! স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে এ 'সিভিল সোসাইটি'র রূপ, রস এবং গন্ধের মধ্যে আমূল পরিবর্তন চলে আসে। 'সিভিল সোসাইটি'র প্রতিনিধিরা আসতে থাকেন সমাজের 'এলিট সোসাইটি' থেকে। ফলে 'সিভিল সোসাইটি'র ব্যবহারিক এবং প্রায়োগিক অর্থে সিভিলদের স্বার্থ না-দেখে এলিটদের তথা শাসক শ্রেণির স্বার্থ দেখতে শুরু করে।
তাই যে অর্থেই একে ব্যবহার করা হোক না কেন, শ্রেণি-স্বার্থের ঘেরাটোপে, 'সিভিল সোসাইটি' তার জন্মগত চরিত্র পাল্টে ফেলে। 'সিভিল সোসাইটি' আর সিভিলদের ওরফে সাধারণ জনগণের চৌহদ্দিতে নেই। সমাজের এক শ্রেণির লোক 'সিভিল সোসাইটি'র মহৎ আত্মা হাইজ্যাক করে নিজেদের বগলে নিয়েছে। 'এলিট শ্রেণির' লোকেরাই এদেশের 'সিভিল সোসাইটি'র সাইনবোর্ড ধারণ করেছেন। এরা তাপানুকূল রুমে বসে মিনারেল ওয়াটারে গলা ভিজিয়ে সমাজের সমস্যা নিয়ে বিদেশি দাতাদের (!) টাকায় স্বদেশি মদদদাতা হিসেবে লেকচার দেন, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম করে 'সিভিল সোসাইটি'র ঢোল পিটান। আর সিভিলদের মরমর অবস্থায় নাকে তেল দিয়ে ঘুমান। তাজ্জব ব্যাপার!
দেশের সত্যিকার সিভিলদের ন্যূনতম মানবাধিকার হরণ করে নিচ্ছে শাসকশ্রেণি বা রাষ্ট্রযন্ত্র বা বেঁচে থাকার প্রাণান্ত লড়াইয়ে সত্যিকার সিভিলদের যখন প্রাণ ওষ্ঠাগত, তখনও এ 'সিভিল সোসাইটি' আছে মাল কামানোর তালে। দেশপ্রেমের জোয়ারে ভাসতে থাকা এ সিভিল সোসাইটির তলে তলে এক নির্মম ও বিকৃত ভাটার অস্তিত্ব।
বাংলাদেশের 'সিভিল সোসাইটি'র চরিত্র এবং কর্মগত একটি প্রোফাইল করেছেন হাসনাত আবদুল হাই। 'সিভিল সোসাইটি'র মধ্যে তিনি অন্তর্ভুক্ত করেছেন 'মিডিয়া (প্রেস, বেতার ও টিভি), ট্রেড ইউনিয়ন, পেশাজীবী, বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং সমাজকল্যাণমূলক সংগঠনসমূহ'। (১৮) এ হচ্ছে আমাদের গুণধর 'সিভিল সোসাইটি'। তিনি আরও যা উল্লেখ করেননি, তা হল বাংলাদশে সিভিল সোসাইটির ফেস্টুন ধরে আরও বগল বাজান অবসরপ্রাপ্ত আমলা, এনজিও প্রতিনিধি, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা, বিভিন্ন কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধি, বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠন এবং ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। বুঝুন ঠ্যালা!
এসব বগল-বাজানো নামসর্বস্ব তথাকথিত 'সিভিল সোসাইটি'র সঙ্গে সত্যিকার সিভিলদের সত্যিকার কোনো সম্পর্ক নেই। এঁরা জানেন না পঞ্চগড়ের কৃষক কলিমুদ্দিনের ক্ষুধার যন্ত্রণা কী, এঁরা উপলব্ধি করেন না মারিয়ার বাবার আহাজারি, এঁরা শুনেন না মাহিমার আর্তচিৎকার। রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে চ্যাপ্টা হওয়া কোনো শ্রমিকের দীর্ঘশ্বাস এঁরা অনুভব করেন না, তাজরিন ফ্যাশনে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া শ্রমিকের লাশের গন্ধ এঁদের নাকে লাগে না। প্রবাসী শ্রমিকের কফিন যখন এদেশের মাটিতে আনা হয়, এঁরা তখন ব্ল্যাক কফি পান করে সংবাদপত্র পড়ে হা-হুতাশ করেন। এঁরা জানেন না কৃষক-শ্রমিক-দিনমজুরের শ্রম শোষণের নিষ্ঠুরতা। সংখ্যালঘুর ঘরবাড়ি যখন জ্বালিয়ে দেওয়া হয় এঁরা তখন টিভি চ্যানেলের টকশোর প্রস্তুতি নেন।
এঁরাই হচ্ছেন 'সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি' ওরফে 'সিভিল সোসাইটি'। আর আজকে যাঁরা শিক্ষিত শহুরে নাগরিক শ্রেণির চতুুর অংশ ওরফে 'সিভিল সোসাইটি'– এঁরা হচ্ছেন সমাজের 'এলিট সোসাইটি' বা 'অভিজাত শ্রেণি'। এঁরা হচ্ছেন, প্রকৃতপক্ষে শাসক শ্রেণির দোসর।
বাংলাদেশের কোনো কোনো গবেষক-বুদ্ধিজীবী 'সিভিল সোসাইটি'র সঙ্গে সুশাসনের সম্পর্ক দেখানোর চেষ্টা করেছেন। বলা হচ্ছে, একটি কার্যকর 'সিভিল সোসাইটি' রাষ্ট্রে সুশাসন নিশ্চিত করতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের বিদ্যমান এবং সক্রিয় 'সিভিল সোসাইটি' রাষ্ট্রযন্ত্রেরই একটি অংশ। যে রাষ্ট্র এলিটদের স্বার্থ রক্ষা করে, সে রাষ্ট্র সিভিলদের কল্যাণ চিন্তা করতে পারে না। আর যেহেতু 'সিভিল সোসাইটি' হচ্ছে সমাজেরই 'এলিট সোসাইটি', তাই রাষ্ট্রের স্বার্থ দেখাই তাদের 'কাম'। এটাই আসল 'কাম', উপরের মুখোশটা 'আকাম'। সিভিলদের বেচে, সিভিলদের সঙ্গে গাদ্দারি করে এলিট সোসাইটির পোদ্দারি করাই বর্তমান 'সিভিল সোসাইটি'র ভূমিকা। এরা সাম্রাজ্যবাদের খায় এবং সুশীল সমাজের মোষ তাড়ায়। আমরা ছা-পোষা সিভিলরা 'ভাব' নিয়ে 'স্বভাবে' পরনির্ভরশীল হয়ে 'অভাবে' দিন কাটাই।
লক এত হক কথা বললেন, কিন্তু কীভাবে এ সিভিলদের 'ভাব' ছুটানো যায় তা বললেন না। কেননা সিভিলদের ভাব ছুটালেই 'সিভিল সোসাইটি'র স্বভাব পরিবর্তন হবে বা পরিবর্তন করতে বাধ্য করানো হবে। মার্কস অবশ্য বলেছেন। কিন্তু সেটা তো রাজনীতির ব্যাপার। এসব ছা-পোষা সিভিলরা কি আর রাজনীতি বোঝে! হব্সও বললেন না 'সিভিল সোসাইটি' রাষ্ট্রের ব্যারাম তাড়াবে কিন্তু 'সিভিল সোসাইটি'র ব্যামো সারাবে কে? ব্যারাম সারানোর জন্য ওঁঝা দরকার কিন্তু ওঁঝা সারাবে কে?
এ বড় মুসিবতের সওয়াল। আজকে এ সওয়ালের জবাব খোঁজা বড্ড বেশি প্রয়োজন।
সমসাময়িক বাংলাদেশ অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় জীবনে একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অস্থিরতা, দুর্নীতি, অসততা এবং অসহিঞ্চুতা প্রবল প্রতাপে বিরাজ করছে। মানুষের সামগ্রিক দায়িত্বজ্ঞান, কর্তব্যনিষ্ঠা, সত্যপরায়ণতা আজ সমাজদেহ থেকে প্রায় বিতাড়িত। এ রকম একটি সময়ে রাষ্ট্রের যেখানে মানুষের বন্ধু হওয়ার কথা, সেখানে রাষ্ট্র হয়ে উঠেছে সাধারণ জনগণের শত্রু। ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক হয়ে উঠেছে প্রতিপক্ষের।
সাধারণ সিভিলরা একটু শান্তির প্রত্যাশায়, একটু ভালো থাকার আশায় এ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেয় একটি রাজনৈতিক দলকে। কিন্তু রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলেই সকলে জনগণের সেবক না হয়ে, শাসক না হয়ে শোষক হয়ে উঠে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।
এ রকম একটা হতাশাব্যঞ্জক পরিস্থিতিতে একটি শক্তিশালী 'সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি' বা 'সিভিল সোসাইটি'র প্রয়োজনীয়তা একান্তই আবশ্যক। এঁরাই সরকারকে রাষ্ট্রের রক্ষক হিসেবে পরিচালিত করবেন বা করতে বাধ্য করবেন। সাধারণ জনগণের (সিভিলদের) স্বার্থরক্ষায় সচেষ্ট থাকবেন। জনগণের সত্যিকার প্রতিনিধি হয়ে সরকারকে জনগণের কল্যাণ-চিন্তা করতে প্রণোদিত ও প্ররোচিত করবেন। সরকার এবং জনগণের মধ্যে বা রাষ্ট্র এবং জনগণের মধ্যে একটি ভ্রাতৃত্বের সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবেন এ 'সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি' বা 'সিভিল সোসাইটি'।
এঁরা একাধারে সরকারের স্বেচ্ছাচারী হওয়া যেমন প্রতিরোধ করবেন, তেমনি জনগণকেও দেশের আইন-শৃঙ্খলা সুরক্ষা ও দেশের উন্নয়ন-সমৃদ্ধি প্রভৃতি বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেবেন। এ 'সিভিল সোসাইটি' তাঁদের ইতিবাচক ভূমিকার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রকে সত্যিকার অর্থে জনগণের বন্ধুতে পরিণত করতে পারবেন। সরকারকেও জনগণের শাসক না হয়ে সেবকে পরিণত করা সম্ভব হবে। আর সত্যিকার অর্থেই যদি 'সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি'র কার্যক্রম ইতিবাচক এবং গুণাত্মক ভূমিকা রাখতে পারে তবেই এর জন্মগত, ঐতিহ্যগত এবং ঐতিহাসিক মাহাত্ম্য সাফল্যমণ্ডিত হবে।
এ কথা অনস্বীকার্য যে, সকল তত্ত্বই মানুষের কল্যাণে সৃষ্টি হয়। মানুষ তা চর্চার মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে বিধায় তত্ত্বের অপকার সাধারণ মানুষের জীবনে অনুভূত ও উপলব্ধ হয়। 'সিভিল সোসাইটি'র ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তত্ত্ব ও চর্চার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য। এ পার্থক্য দূরীকরণের মধ্যেই একটি সুন্দর, সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব।
ড. রাহমান নাসির উদ্দিন: অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
তথ্যসূত্র:
এটি লেখকের ২০০৩ সালে প্রকাশিত একটি লেকচারের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে যেটি ২০০৩ সালে 'বিবর্ত পাঠচক্র'র সেমিনারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠিত হয়েছিল। পরবর্তীতে এর একটি প্রাইমারি সংস্করণ দৈনিক ইত্তেফাকের সাহিত্য সাময়িকীকে ছাপা হয়েছিল। সে লেকচারের আর কিছুটা অংশ 'অঙ্গন', চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিকী ম্যাগাজিনে ছাপা হয়েছিল। পূর্ব প্রকাশিত সকল লেখার কাছে কর্জ স্বীকার করছি।
১. Lock, John, Two Treaties of Government. Cambridge
Cambridge University Press, 1965, page-361
২. ভি পদেস্তনিক ও ইয়খোত, দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ পরিচিতি (অনুবাদ: শরীফ হারুন)
বাংলা একাডেমী , ১৯৯৬, পৃষ্ঠা-৮.
৩. সলিমুল্লাহ খান, রাষ্ট্রসমাজের উৎপত্তি: জন লকের সঙ্গে বিচার
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, ঢাকা, ২০০১, পৃষ্ঠা-২
৪. বণিক সমাজ বলা যায় এ অর্থে যে, এ সিভিল সোসাইটির কুইনাইন বিক্রি করে অনেকে বেশ ব্যবসা জমিয়েছেন। বেনিয়া তরিকায় অনেকে এ সিভিল সোসাইটি নামক মহার্ঘটি বেচা বিক্রি করে ভালোই মালপানি কামাই করেছেন।
৫. Marx, Karl, Capital (Volume-1), Mosco
Progress Publication, 1986, page-339
৬. Rousseau, J., Social Contract' in Sir Ernest Barker, ed. 'Social Contract, essay by Locke, Hume and Rousseau, London
Oxford University Press, 1966, page-254
৭. Hobbs, Thomas, Leviathan. New York
Everyman's Library, I965, page-63
৮. Barker, Ernest, ed. Social Contract, essay by Locke, Hume and Rousseau. London
Oxford University Press, 1966, page-Introduction.
৯. Gramsci, Antonio, 'State and Civil Society', in Selctions frm the Prison Notebooks
Edited and Translated by Quintin Hoare and Geoffrey Nowell Smith
India, Orient Longman, 1998, page-210.
১০. Rousseau,
পূর্বোক্ত, page-255
১১. Thomas Hobbs,
পূর্বোক্ত, page-91
১২. Rousseau,
পূর্বোক্ত, page-255
১৩. Hume, David, Original Contract, Sir Ernest Barker, ed. 'Social Contract, essay by Locke, Hume and Rousseau
London, Oxford University Press, 1966, page-221
১৪. Machiavelli ,Nicolo, The Prince
London, Worlds worth References Ltd, 1993, Page-73
১৫. Machiavelli, Nicolo,
পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা-73
১৬. মামুন, মুনতাসীর ও রায়, জয়ন্ত কুমার, বাংলাদেশের সিভিল সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম.
ঢাকা, অবসর প্রকাশনী সংস্থা, ১৯৯৫, ভূমিকা।
১৭. মামুন, মুনতাসীর ও রায়, জয়ন্ত কুমার.
পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা-১১
১৮. Hye, Hasnat Abdul(etd) Governance: south Asian Perspective,
University Press Limited, Bangladesh, 2000, page-27