Published : 18 May 2024, 07:59 PM
সরকার পতনের আন্দোলনে বিএনপির নেতৃত্বে নতুন কর্মসূচি আসছে জানিয়ে সবাইকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমেদ।
শনিবার বিকালে ঢাকার মগবাজারে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি তার যুগপতের শরিকদের সঙ্গে ধারাবাহিক যে আলোচনা শুরু করেছে তার অংশ হিসেবে দলটির একটি প্রতিনিধি দল অলি আহমেদের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর সাংবাদিকদের সামনে আসেন এলডিপি নেতা।
তিনি বলেন, “দেশে গণতন্ত্র ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য কৃষক-শ্রমিক-যুবক-ছাত্র সমাজ, সকলকে নিজ নিজ জায়গা থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে নতুন উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব বিএনপির নেতৃত্বে নতুন কর্মসূচি ইনশাল্লাহ ঘোষণা করব।”
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে ইনশাল্লাহ এই ‘বাকশালী’ সরকারের পতন হবে, দেশে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে।”
বিএনপির নেতৃত্বে এর আগে আন্দোলন কেন সফল হয়নি এই প্রশ্নে অলি আহমেদ বলেন, এই প্রশ্ন বিএনপিকেই করা উচিত। কারণ, তার দল একটি ছোট দল। যা করার বিএনপিকেই করতে হবে।
ভারতকে দোষারোপ
অলি তার দীর্ঘ লিখিত বক্তব্যে ভারতের তীব্র সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের গণতন্ত্র ‘ধ্বংস’ ও ‘স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য’ ভারত সরকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী।
“আমি নিজে শুনেছি, কয়েকদিন পূর্বে ভারতের কংগ্রেসের সভাপতি একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমরা পাকিস্তানকে দুই টুকরা করে তাদেরকে দুর্বল করে দিয়েছি। তার এই বক্তব্যে সুস্পষ্ট বোঝা যায়, বাংলাদেশের জনগণ তাদের বন্ধু নয়। বিগত কয়েক বছর ভারত সরকার বাংলাদেশে ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অনুরূপ দায়িত্ব নিয়েছে।”
ভারতের জনগণের বিরুদ্ধে কোনো বিরূপ মন্তব্য নাই জানিয়ে অলি বলেন, “আমাদের প্রত্যাশা থাকবে ভারত সরকার কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা দলের সঙ্গে সম্পর্ক করা থেকে বিরত থাকবে বরং ভারতের জনগণের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের বন্ধুত্ব স্থাপনে মনোযোগী হবে।
“আসুন আমরা একে অপরের সম্পূরক হিসেবে কাজ করি, ভালো প্রতিবেশী হিসেবে বসবাস করি। এতেই সকলের মঙ্গল নিহিত।…মেহেরবানি করে আমাদেরকে আমাদের মত করে থাকতে দিন। ভারত সরকারের বর্তমান মনোভাব পরিবর্তন না হলে উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হবে যা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত।”
বর্তমান সরকার ভারতকে দেশের সমুদ্র ও স্থল বন্দর এবং বিভিন্ন সড়ক ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে অনেকগুলো ‘অসম’ চুক্তি করেছে বলেও দাবি করেন বিএনপি সরকারের সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী। বলেন, “তারপরও কেন ভারত সরকার বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়।”
‘দেশের অর্থনীতি টালমাটাল’
অলি আহমেদ বলেন, “দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা টালমাটাল। যে কোনো সময় ব্যাপক ধস নামতে পারে। আমরা মনে করি এই অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে দেশ আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে বাধ্য। হয়ত নিয়ন্ত্রণের বাইরেও চলে যেতে পারে।”
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ‘আশঙ্কাজনক হারে কমছে’ মন্তব্য করে এলডিপি নেতা বলেন, “দেশি মুদ্রার তারল্য সংকট প্রতীয়মান। বাণিজ্যে বিরাজ করছে স্থবিরতা। মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের উপরে। গত দুই বছরে টাকার মান কমেছে ৩৮ থেকে ৫১ শতাংশ, টাকার প্রবাহও হ্রাস পেয়েছে। ব্যাংকগুলোতে টাকার হিসাবে গরমিল দেখা দিয়েছে।
“আর্থিক খাতে বাংলাদেশ রেড জোনে প্রবেশ করেছে। সুতরাং আর্থিক ঝুঁকি খুবই বড়।”
বর্তমান অবস্থার জন্য সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থতাকে দায়ী করেন এই রাজনীতিক।
তিনি বলেন, “বর্তমান সরকার বিগত ১৫ বছর যাবত ‘বাকশালী কায়দায়’ দেশ শাসন করছে। তাদেরকে বলব, আল্লাহর ওয়াস্তে এখন ক্ষ্যান্ত হোন। জনগণকে তাদের ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন করার সুযোগ দেন। আমি না থাকলে দেশ চলবে না এই ধরনের ভ্রান্ত ধারণা থেকে বের হয়ে যান।”
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী নতুন নতুন আইন করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সর্বসাধারণের ওপর জুলুম-নির্যাতন ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। দেশে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে দেশে কখনই শান্তি ফিরে আসবে না, অস্বস্তিকর পরিস্থিতি কাটবে না।”
সংবাদ সম্মেলনে অলি আহমেদের সঙ্গে আলোচনার জন্য আসা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান. এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল আলম তালুকদার, নেয়ামূল বশির, আওরঙ্গজেব বেলাল, কে কিউ সাকলায়েনও উপস্থিত ছিলেন।