Published : 24 Feb 2025, 05:27 PM
জাতীয় শহীদ সেনা দিবস উপলক্ষে বিডিআর বিদ্রোহে নিহতদের স্মরণে মঙ্গলবার ঢাকাসহ সারাদেশে দোয়া মাহফিল করবে বিএনপি।
সোমবার বিকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী একদিনের এই কর্মসূচি করেন।
তিনি বলেন, “প্রতিবছর ২৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি অত্যন্ত বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করে এই দিনটি। এবার দিনটি সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় শহীদ সেনা দিবস পালন করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। জাতীয়ভাবে এই দিবসটি পালনে সরকারের ঘোষণার প্রতি বিএনপি সমর্থন জানাচ্ছে। এত দিন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা তাদের কৃত অপকর্ম ঢেকে রাখার জন্য এই দিবসটিকে আড়াল করে রাখার চেষ্টা করেছে।”
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সকালে বনানী সেনা কবরাস্থানে নিহদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং সেখানে দোয়া করা, আলোচনা সভা হবে বিকাল সাড়ে ৩টায় রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে।
একই সঙ্গে সারাদেশে জেলা-মহানগরে দোয়া অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন রিজভী।
প্রতিবছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণা করেছে সরকার।
রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে একটি পরিপত্র জারি করা হয়। সেখানে বলা হয়, সরকার প্রতিবছর ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
তবে এদিন সরকারি ছুটি থাকবে না। দিনটি ‘গ’ শ্রেণীভুক্ত দিবস হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্তটি যথাযথভাবে প্রতিপালনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাকে অনুরোধ জানানো হয় পরিপত্রে।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদরদপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়। নিহত হন সব মিলিয়ে ৭৪ জন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা।
রিজভী বলেন, “বিডিআর বিদ্রোহ ঘটনার সেনা তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি, ওই সময়ের রিপোর্টে স্পষ্টভাবে জানা গেছে যে, ওই নৃশংস হত্যাকান্ডের পেছনে তৎকালীন যারা ক্ষমতাসীন এবং তাদের আন্তর্জাতিক প্রভুরা এর মধ্যে সম্পৃক্ত থাকতে পারে। এই কারণে বহু আলামত নষ্ট করে ফেলা হয়েছিল।“
ওইদিনের প্রসঙ্গ তুলে রিজভী বলেন, “আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ভেতরে (পিলখানায়) ঢুকে কথা বলছেন, আলোচনা করছেন, তাদের কিছু হচ্ছে না। কিন্তু ভেতরে যে নৃশংসতা যারা সংঘটিত করেছে তাদের যারা মাস্টার মাইন্ড তাদের সাথে সাবেক প্রধানমন্ত্রী কথা বলছেন, তাদের সাথে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ কথা বলছেন।“
রিজভীর কথায়, বাংলাদেশকে পঙ্গু করার এবং দেশে যে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল তা নস্যাৎ করতে নানা ষড়যন্ত্র চক্রান্তের পরে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হয়েছিল।
“এটা ছিল দেশি এবং বিদেশী মাস্টার প্ল্যানড।”
এ সময় ওইদিন নিহতদের পরিবারের প্রতি দলের পক্ষ থেকে সমবেদনা জানিয়েছেন রিজভী।
২৫ ফেব্রুয়ারিকে 'জাতীয় শহীদ সেনা দিবস' ঘোষণা
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কেন্দ্রীয় নেতা শিরিন সুলতানা, হেলেন জেরিন খান, মুনির হোসেন, আমিরুল ইসলাম খান আলিমসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
বিডিআরের দরবার হল থেকে সূচনা হওয়া ওই বিদ্রোহের ইতি ঘটে নানা ঘটন-অঘটনের মধ্য দিয়ে পরদিন। পিলখানায় বিদ্রোহের মধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থানে জওয়ানরাও বিদ্রোহ করে।
সেই বিদ্রোহের পর সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিডিআরের নাম বদলে যায়, পরিবর্তন আসে পোশাকেও। এ বাহিনীর নাম এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি।
বিদ্রোহ ও হত্যা মামলার বিচার হলেও ক্ষমতার পালাবদলের পর পুনরায় তদন্তের দাবি ওঠে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে গত ডিসেম্বরের সাত সদস্যের স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একটি অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।