Published : 26 Jul 2024, 05:33 PM
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের ওপর দায় চাপালেও আন্দোলনকারীদের নেতাদের মধ্যে ‘জঙ্গি গোষ্ঠীর এজেন্ট’ থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেছেন, “যদি একটু ধৈর্য ধরা হত, তাহলে ছাত্র আন্দোলনে বিএনপি জামায়াত দেশবিরোধী অপশক্তি সুযোগ নিতে পারত না। ছাত্রনেতাদের মধ্যে জঙ্গি গোষ্ঠীর এজেন্ট আছে কিনা খোঁজ নেওয়া দরকার।
“আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, প্রকৃত কোনো ছাত্র এই ধরনের হামলা অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িত ছিল না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে তাদের নেতাকর্মী ও জামায়াত ইসলাম রাষ্ট্রের ওপর এই হামলা চালিয়েছে।”
ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে শুক্রবার এক আলোচনাসভায় কথা বলছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ।
হামলাকারী প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “পুলিশ তদন্ত করছে। যারা পিটিয়ে মানুষ হত্যা করেছে, মেট্রোরেল, বিটিভিতে আগুন দিয়েছে, তাদের প্রত্যেকের বিচার হবে। আমরা এটি করতে বদ্ধপরিকর।
“আজকে রাষ্ট্র আক্রান্ত। এই রাষ্ট্রের ওপরে হামলা তারেক রহমানের নির্দেশে হয়েছে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) তারা (বিএনপি নেতারা) স্বীকারোক্তি দিয়েছে, ছাত্রলীগ মারলে পাঁচ হাজার ও পুলিশ মারলে ১০ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা ছিল। আমির খসরু নির্দেশ দিচ্ছেন তাদের তরুণ নেতাকর্মীদেরকে ছাত্র আন্দোলনে ঢুকে পড়ার জন্য। তারেক রহমান নির্দেশ দিচ্ছেন, সেই অডিও ক্লিপ সরকারের কাছে আছে। অডিওতে তারেক রহমান বলছেন, ‘কারফিউ ভাঙো, আর না হয় পদত্যাগ করো’।”
ঢাকায় হামলা আর অগ্নিসংযোগ করে বিএনপি কর্মীরা ‘দলীয় পদ পাচ্ছেন’ মন্তব্য করে হাছান মাহমুদ বলেন, “গত বছর ২৮ অক্টোবর (দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে) যারা ঢাকা শহরে অগ্নিসংযোগ ও নৈরাজ্য করেছিল, তাদেরকে বিএনপি বড় বড় পদ দিয়েছে। এবারও যারা মানুষ মারবে, পুলিশ মারবে তাদেরকে বিএনপি বড় বড় পদ দেবে। এটি কোনো রাজনৈতিক দল? এটি একটি দেশবিরোধী সন্ত্রাসী সংগঠন।
“বিএনপি-জামায়াতের আক্রমণে সাধারণ মানুষ ও তাদের সহায় সম্পত্তি আক্রান্ত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ধ্বংস ও রাষ্ট্রের ওপরে আঘাত হানা হয়েছে। এ অঞ্চলে স্থাপিত প্রথম টেলিভিশন চ্যানেল বিটিভিতে আঘাত হানা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের ওপর এমন সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেনি।
“দেশে যখন ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দুর্যোগ কবলিত মানুষের কাছে ছুটে যান। কিন্তু এখন সেই মন্ত্রণালয়েও আগুন দিয়েছে। এটি রাষ্ট্রের ওপরে হামলা।”
সেতু ভবনে হামলার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “যে সেতু ভবন পদ্মা, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ কাজ পরিচালনা করেছে, সেই সেতু ভবনকেও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডেটা সেন্টারে আগুন দেওয়া হয়েছে, যার কারণে বেশ কয়েকদিন ইন্টারনেট বন্ধ ছিল।
“পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করে সাবমেরিন কেবলগুলোকে কেটে দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। ঢাকাবাসীর গর্ব মেট্রোরেলে হামলা চালিয়েছে। ফুটব্রিজে আগুন দেওয়া হয়েছে। এক হাজারের বেশি গাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
সামগ্রিক পরিস্থিতি বিশ্বকে জানাতে গত সপ্তাহে কূটনীতিবিদদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সে প্রসঙ্গ ধরে তিনি বলেন, “আমি বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের এই ধ্বংসযজ্ঞ দেখানোর জন্য নিয়ে গিয়েছিলাম। তখন ইটালিয়ান রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ‘এটা লজ্জাজনক’। বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের সামাজিক মাধ্যমের আইডি হ্যাক করে উল্টাপাল্টা পোস্ট দেওয়া হয়েছে।
“…সমস্ত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করে দায়ীদের বিচার আওতায় আনা হবে।”
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, আওয়ামী লীগ নেতা এম এ করিম,জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন সভায় উপস্থিত ছিলেন।