Published : 07 Jun 2025, 09:20 PM
ঈদের আগের দিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস আগামী বছরের এপ্রিলে জাতীয় নির্বাচনের যে ঘোষণা দিয়েছেন, সেই সময়সূচি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বামপন্থি কয়েকটি রাজনৈতিক দলের মোর্চা- বাম গণতান্ত্রিক জোট।
তারা মনে করছে, ডিসেম্বরের পরিবর্তে এপ্রিলে নির্বাচন করতে চাওয়া ‘ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার অভিলাশ’; যার মাধ্যমে কোনো দল বা গোষ্ঠীর ‘বিশেষ স্বার্থ রক্ষা’ করা হয়েছে।
শনিবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বাম জোটের নেতারা ‘করিডোর’ ও চট্টগ্রামের বন্দর ব্যবস্থাপনার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন।
শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন সংক্রান্ত চলমান সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা করে আমি আজ দেশবাসীর কাছে ঘোষণা করছি যে আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একটি দিনে অনুষ্ঠিত হবে।”
ইউনূসের এমন ঘোষণায় সেই রাতেই হতাশা প্রকাশ করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার দাবি পুনর্ব্যক্ত করে বিএনপি।
পরদিন বাম গণতান্ত্রিক জোট বলছে, “দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এবং মানুষ এ বছর ডিসেম্বরের মধ্যে এমনকি তারও আগে দ্রুততম সময়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর দেখতে চাইলেও প্রধান উপদেষ্টা ২০২৬ সালের এপ্রিলে নির্বাচনের কথা বলেছেন।”
রোজা, পরীক্ষা, ধান কাটা, বর্ষা বিবেচনায় ওই সময়ে নির্বাচন ‘গ্রহণযোগ্য নয়’ বলে বিবৃতিতে বলা হয়।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা বলছেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার করে এ বছরের মধ্যেই নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর ‘ভালোভাবে সম্ভব’। সেই সঙ্গে জুলাই-অগাস্ট হত্যাযজ্ঞের বিচার কাজ দৃশ্যমান করাও ‘সম্ভব’।
“কোনো অজুহাতে নির্বাচনকে বিলম্বিত করার অর্থ হলো কোন দল বা গোষ্ঠীর বিশেষ স্বার্থ রক্ষা করা। দেশকে সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যবাদী শক্তির প্রভাব বলয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘৃণ্য প্রচেষ্টা; যা দেশকে দীর্ঘমেয়াদী সংকটে ফেলতে পারে।”
বাম গণতান্ত্রিক জোট মনে করে, সরকারপ্রধানের ভাষণে জনমতের প্রতিফলন ঘটেনি, ডিসেম্বরে না হয়ে এপ্রিলে কেন নির্বাচন তা ‘বোধগম্য নয়’। ভাষণে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার অভিলাশ ফুটে উঠেছে।
বেশিরভাগ দল ও জনগণের ‘মতকে উপেক্ষা করে’ বিশেষ দল-গোষ্ঠীর ‘স্বার্থে’ এপ্রিলে নির্বাচন ঘোষণার মধ্য দিয়ে ইউনূ ‘নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন’ বলেও মনে করে বাম জোট।
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণকে ‘সাধারণ মানুষের প্রতি অবজ্ঞা ও ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার বিশেষ উদ্দেশ্য’ মন্তব্য করে জোটের নেতারা ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন এবং দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও জনস্বার্থ বিরোধী যেকোনো কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ‘ঐক্যবদ্ধভাবে’ রুখে দাঁড়াতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস মিয়ানমারের রাখাইনে মানবিক করিডর দেওয়ার খবরকে ‘সর্বৈব মিথ্যা’ ও ‘চিলে কান নিয়ে যাওয়ার’ গল্প হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছেন, “জাতিসংঘের মহাসচিব গত মার্চে ঢাকা সফরকালে রাখাইনের মানবিক বিপর্যয় মোকাবেলায় একটি ত্রাণ চ্যানেলের প্রস্তাব করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, প্রস্তাবটি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহায়ক হবে। বিষয়টি প্রস্তাব পর্যায়েই রয়ে গেছে।”
করিডোর ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সরকারপ্রধানের দেওয়া বক্তব্যে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করে বিবৃতিতে বাম জোটের বিবৃতিতে বলা হয়, “রাখাইনে করিডোর দেওয়ার প্রশ্নে যা বলতে চেয়েছেন তাতে এটা পরিষ্কার বোঝা যায় জনমত উপেক্ষা করে হলেও রাখাইনে করিডোর দেওয়ার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।”
অধ্যাপক ইউনূস শুক্রবারের ভাষণে বলেন, “বন্দর ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা যাদের আনছি তারা পৃথিবীর যে-সব দেশে কাজ করে, সেসব কোনো দেশেরই সার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েনি।”
তিনি এও বলেন, “আমি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাই আপনারা নিজেদেরকে ভিত্তিহীন বিরোধিতা এবং অপপ্রচারের শিকার হতে দেবেন না।
“অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বন্দর ব্যবস্থাপনার উদ্যোগে আপনাদের দৃঢ় সমর্থন অব্যাহত রাখুন। যারা বিরোধিতা করছে তাদের প্রতিহত করুন।”
এমন বক্তব্য কোনো দেশপ্রেমিক মানুষ ‘গ্রহণ করতে পারে না’ মন্তব্য করে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা বলছেন, “এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণকারী আন্দোলনকারীদের প্রতিরোধ করার যে ঘোষণা দিয়েছেন তা প্রকারান্তরে ‘মব সন্ত্রাসকেই’ উস্কে দিচ্ছে। সরকারের দায়িত্বপূর্ণ কোনো পদে থেকে এ ধরনের উস্কানি জনগণ গ্রহণ করবে না বরং প্রত্যাখ্যান করবে।”
করিডোর ও বিদেশিদের দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনার পদক্ষেপ ‘রুখে দিতে’ ইতোমধ্যে বাম জোট ঘোষিত ২৭ ও ২৮ জুনের ঢাকা-চট্টগ্রাম ‘রোড মার্চ’ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
বিবৃতিদাতারা হলেন- বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সিপিবি সভাপতি মো. শাহ আলম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী।