Published : 14 Jul 2024, 10:39 PM
সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা, নারী ও জেলা কোটা সমর্থন করেন না জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা জি এম কাদের। তিনি মনে করেন কেবল প্রতিবন্ধীও পাহাড়ে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা থাকতে পারে, সেটাও সীমিত পরিমাণে।
সংসদের বিরোধী দলের নেতা এও মনে করেন যে, সরকারি চাকরিতে কোটা থাকার বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে প্রশাসনের মাধ্যমে হতে হবে।
বিষয়টি নিয়ে নিয়ে হাই কোর্টে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেছেন, “এটা কি হাইকোর্টের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে? হাই কোর্টে নিলাম কেন? এখানেই তো সন্দেহ রয়ে গেল। গেলাম ২০২১ সালে আর ২০২৪ সালে হঠাৎ করে রায় হয়ে গেল। আর সেই রায়ে কোটা সিস্টেম পুনর্বহাল রইল।”
জাতীয় পার্টির নেতা বলেন, “কোটার বিষয়ে আমার বক্তব্য হল, শুধু অনগ্রসর যারা তারা পাবে, যেমন প্রতিবন্ধী, যারা পাহাড়ে থাকে। এগুলো অতি অল্প, অনেক হিসাব নিকাশ করে করতে হবে।”
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকীতে শনিবার বিকালে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টি নেতা বলেন, “সরকার যেটাকে বাতিল করছে, সরকার আবার এটা নিয়ে মনে হচ্ছে খুশি। তার মানে সরকার এটা তখনও করতে চাননি (কোটা বাতিল), যে কোনো কারণে করেছেন, পরে এটা পুনরুদ্ধার করে বহাল করবেন। তাই তাদের লোক দিয়ে মামলা করেছেন আর পরোক্ষ-প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেছেন।
“মানুষ এটাও বিশ্বাস করছে যে সরকার এটাকে সামনেও কিছু করতে পারে বা ঝুলিয়েও রাখতে পারে। শিক্ষার্থীরা এ জন্যই আন্দোলন থেকে পিছু হঠছে না।”
২০১৭ ও ২৮ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে সব ধরনের কোটা তুলে দেয়।
তিন বছর পর ৭ জন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সরকারের পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যায়। সম্প্রতি হাই কোর্ট এই পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে। ফের কোটা নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়।
অবৈধ ঘোষিত পরিপত্র ফিরিয়ে আনা অর্থাৎ কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা মাঠে নামলেও পরে কোটা সংস্কারের দাবি সামনে নিয়ে আসে। এই দাবিতে গত সপ্তাহে মঙ্গলবার বাদ রেখে প্রতি কর্মদিবসেই ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে অবরোধ কর্মসূচি পালন হয়েছে। চলতি সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
আপিল বিভাগ অবশ্য হাই কোর্টের আদেশে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা দিয়েছে। এ নিয়ে শুনানি হবে সর্বোচ্চ আদালতে।
শিক্ষার্থীরা অবশ্য আন্দোলন থেকে সরে আসার কোনো লক্ষণ দেখাচ্ছেন না। তারা সংসদে বিশেষ অধিবেশন ডেকে কোটা সংস্কারের দাবি জানাচ্ছেন।
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উচ্চ আদালতে চলে যাওয়ায় এ বিষয়ে নির্বাহী বিভাগের এখন আর কিছু করার নেই। আদালতের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে।
জি এম কাদের বলেন, “আমরা বিচার বিভাগ নিয়ে অনেক বড় বড় কথা বলছি। এটা কোর্ট, এটার বাহিরে কিছু বলা যাবে না। কিন্তু আমি বলতে চাই, আমরা আমাদের সংবিধানে এমন কিছু ব্যবস্থা করে রেখেছি যে, বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগের অধীন হয়ে গেছে। সংবিধানের অসামঞ্জস্যতা আছে।”
প্রধানমন্ত্রী হাই কোর্টের সব নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন দাবি করে জাতীয় পার্টির নেতা বলেন, “হাই কোর্ট প্রধানমন্ত্রীর আওতার বাইরে যেতে পারছে না।”
‘এরশাদের আমল ছিল স্বর্ণযুগ’
সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদের ৯ বছর দেশে ‘স্বর্ণযুগ’ ছিল বলেও দাবি করেন তার ছোট ভাই। তিনি বলেন, “কখনও (এরশাদ) নিজের ইচ্ছা জনগণের উপর চাপাননি। যেটা মানুষ গ্রহণ করতে চায়নি, সেটা তিনি বাতিল করেছেন। মানুষকে গ্রহণ করতে জোর করেননি।
সেনাপ্রধান থাকার সময় ১৯৮২ সালে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরে রাষ্ট্রপতি হন এরশাদ।
জিয়াউর রহমানের পথ ধরেই তিনিও উর্দি পরে দেশ শাসন করতে থাকেন, গঠন করেন রাজনৈতিক দলও। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে তার গঠন করা জাতীয় পার্টি ১৯৮৬ সালে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ও পায়।
তবে গণ-আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এরশাদ। তিনিও বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান যিনি আন্দোলনে গদিচ্যুত হয়েছেন।
খালেদা জিয়ার আমলে কাজ শুরু হওয়া এবং শেখ হাসিনার আমলে শেষ হওয়া যমুনা সেতুর কৃতিত্বও এরশাদকে দেন তার ভাই। বলেন, “এরশাদ অল্প টাকার বাজেটেই যমুনা সেতু করেছিলেন। উত্তরবঙ্গের জন্য খুব দরকার, তাই তিনি রেলও সংযোগ করেছিলেন। এখন যমুনা ব্রিজে প্রফিটও হয় অনেক টাকা।”
যে কোনো সময় দেশের রিজার্ভ শূন্য হয়ে যাবে দাবি করে বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, “তখন আমাদের ইমপোর্ট বন্ধ হয়ে যাবে। সব শুভংকরের ফাঁকি! এই ফাঁকি দিয়ে দিয়ে কীসের এত অহংকার!”
এখন দেশের প্রতিটি মানুষের ঘাড়ে দেড় লাখ টাকা করে ঋণের বোঝা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এরশাদের সময়ে এ রকম ঋণের বোঝা ছিল?”
এরশাদ কখনও নির্বাচনে হারতেন না মন্তব্য করে জি এম কাদের বলেন, “তাহলে জনগণ উনাকে প্রত্যাখ্যান করল কোথায়?”
‘বিকৃত তথ্য দিয়ে’ দিয়ে এরশাদের মানহানি করা হয়েছে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, “মৃত্যুর পর বোঝা যায় মানুষ কেমন ছিল। ঢাকা শহরে তিনটি জামাত হয়েছে, পুলিশ বলেছে এত বেশি মানুষের জমায়েত কখনো দেখে নাই। রংপুরে তিল ধারণের জায়গা ছিল না।”
‘আইজিপি শত শত বিঘা জমির, ড্রাইভার শত কোটি টাকার মালিক’
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু বলেন, “একজন পুলিশের আইজিপি শত শত বিঘা জমির মালিক, ড্রাইভার শত কোটি টাকার মালিক। এগুলো সোনার বাংলা কায়েমের লক্ষণ?
“আওয়ামী লীগ সরকার সোনার বাংলা বলে বলে চোরের বাংলা কায়েম করছে। মানুষ আর দুর্নীতিগ্রস্ত আওয়ামী লীগকে চায় না। তাই এখন মানুষের বিশ্বাসের জায়গায় আসার সুযোগ আছে জাতীয় পার্টির।”
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, “নব্বই সালে আমাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছিল একটি গণতান্ত্রিক দেশের জন্য। কিন্তু আজ কি দেশে গণতন্ত্র আছে?”
দলের কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মুস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা এবং সদস্য নাজমা আক্তার ও চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরীফা কাদেরও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।