Published : 11 May 2025, 07:01 PM
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে ‘গুম, খুন, নিপীড়ন ও অপশাসন পরিচালনাকারী’ ‘ফ্যাসিবাদী দলের’ বিচারে অন্তবর্তীকালীন সরকারের নেওয়া পদক্ষেপকে ‘সঠিক’ বলেছে বিএনপি।
রোববার দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে বিএনপির এমন অবস্থান তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘‘আমরা আনন্দিত যে, বিলম্বে হলেও গতরাতে (শনিবার) অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ফ্যাসীবাদী সরকারের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার দ্রুত করার এবং বিচারকার্য নির্বিঘ্ন করার স্বার্থে ফ্যাসীবাদী দল আওয়ামী লীগ ও তার সাথে যুক্ত সকল সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
‘‘প্রাসঙ্গিক আইন সংশোধন করে বিচারিক প্রক্রিয়ায় গুম, খুন, নিপীড়ন ও জনগণের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন অপশাসন চালনাকারী, ফ্যাসীবাদী দলের বিচার করার সিদ্ধান্তকে আমরা সঠিক বলে মনে করি।”
বিএনপি বলছে, তারা অনেক আগে থেকেই এসব দাবি জানিয়ে আসছিল। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে তারা এসব নিয়ে কথাও বলেছে।
দলটি মনে করছে, তাদের দাবি মেনে আগেই ‘এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে’ চাপের মুখে ব্যবস্থা নেওয়ার মত ’বিব্রতকর ও অনভিপ্রেত’ অবস্থায় সরকারকে পড়তে হত না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ভবিষ্যৎ কার্যক্রম পরিচালনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিষয়টি সতর্কতার সাথে মনে রাখবেন বলে আমরা আশা করি।”
শনিবার রাতে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকার অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি, জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের দাবির মুখে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়।
একই সঙ্গে দলটিকে জুলাই আন্দোলন দমনে ‘মানবতাবিরোধী’ অপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনেরও সিদ্ধান্ত নেয় উপদেষ্টা পরিষদ।
সরকারের এ সিদ্ধান্তের পর রোববার বিকালে দেওয়া বিবৃতিতে বিএনপি ফ্যাসিবাদী সরকার ও তাদের দোসরদের বিচারে তাদের তরফে আগে থেকেই দাবি জানানো হয়েছিলে বলে তুলে ধরে।
বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল এসব দাবি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে একাধিক সাক্ষাতের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘গত ১০ ফেব্রয়ারি তার (প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস) হাতে দেওয়া পত্রে ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিচারিক প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসার’ দাবি জানিয়েছিলাম। গত ১৬ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সর্বশেষ সাক্ষাৎকালেও তার হাতে দেওয়া পত্রে আমরা ‘পতিত ফ্যাসীবাদী দল ও সেই দলীয় সরকারের সঙ্গে যারাই যুক্ত ছিলেন তাদের বিচার দ্রুত করে দেশের রাজনীতির ময়দানকে জঞ্জালমুক্ত করার’ দাবি জানিয়েছি।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “আলোচনায় আমরা স্পষ্ট করে বলেছিলাম যে, আইনি প্রক্রিয়াতেই ফ্যাসীবাদী দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সম্ভব ও উচিত। বিভিন্ন সভা, সমাবেশে ও আলোচনায় আমরা আমাদের এসব দাবি বার বার উত্থাপন করেছি। উল্লেখযোগ্য যে, আমরা প্রশাসনিক আদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে বলেই বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের আগ মুহূর্তে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছিল বিএনপি।”
বিবৃতিতে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি পুনর্ব্যক্ত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে ভোটাধিকার বঞ্চিত জনগণ তাদের ভোটাধিকার তথা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই ফ্যাসিবাদের পতনের জন্য গুম, খুন, জেল, জুলুম সহ্য করেও অব্যহত লড়াই করেছে। তাদের সেই দাবি এখনও অর্জিত হয়নি।
‘‘গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষনার দাবীও ক্রমাগত উপেক্ষিত হওয়ায় জনমনে যে ক্ষোভোর সৃষ্টি হচ্ছে সে ব্যাপারে সচেতন হওয়ার জন্য আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”