Published : 10 May 2025, 09:01 PM
যারা বার বার ‘সংবিধান লঙ্ঘন, অবৈধ সংসদ ও সরকার গঠন’ করেছে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘পতিত পলাতক পরাজিত অপশক্তির পুনর্বাসন চায় না’ দেশের মানুষ।
শনিবার বিকালে বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, “বিএনপিসহ বাংলাদেশের পক্ষের প্রতিটি রাজনৈতিক দল জনগণের এই দাবির সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত।”
অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠে। গত অক্টোবরে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে নিষিদ্ধ করা হয়।
বুধবার রাতে আওয়ামী লীগের সময় দুই মেয়াদের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করা আবদুল হামিদের দেশ ছাড়ার ঘটনায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে।
বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর ডাকে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেয় এক দল বিক্ষোভকারী। শুক্রবার বিকালে শাহবাগ অবরোধের ডাক দেন তিনি। এরপর থেকে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি চলছে। এর মধ্যে শনিবার গণজমায়েত কর্মসূচি থেকে হাসনাত বলেছেন, যারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চায় না তারা ‘ফ্যাসিবাদী’।
এ অবস্থায় রাত সাড়ে ৮টার কিছু পরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক শুরু হয়েছে।
অন্যদিকে রাত ৯টায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক ডেকেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তার আগে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, যারা সংবিধান বার বার লঙ্ঘন করেছে, দেশে অবৈধ সংসদ এবং সরকার গঠন করেছে, যারা সংবিধান লঙ্ঘনের সাথে জড়িত ছিলেন তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে।
“দেশের সরকার ও রাজনীতিতে কোনোভাবেই গুম-খুন-অপহরণ, দুর্নীতি-লুটপাট-টাকা পাচার এবং বর্বর আয়নাঘরের প্রতিষ্ঠাতা পতিত পলাতক পরাজিত অপশক্তির পূনর্বাসন চায় না এই বাংলাদেশের মানুষ। বিএনপিসহ বাংলাদেশের পক্ষের প্রতিটি রাজনৈতিক দল জনগণের এই দাবির সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত।”
‘সরকারকে সফল দেখতে চায় বিএনপি’
তারেক রহমান বলেন, “বিএনপি এই অন্তর্বর্তী সরকারকে সফল দেখতে চায়। তবে এখানে একটি কথা রয়ে গেছে। সরকারের কার্য্ক্রম সম্পর্কে জনগণের সামনে যাতে স্বচ্ছ ধারণা থাকে এই কারণে বিএনপি প্রথম থেকে এই সরকারের কাছে তাদের একটি কর্মপরিকল্পনা-পথনকশা ঘোষণার আহ্বান বার বার জানিয়ে এসেছে, জানিয়ে আসছে।”
“সরকারের কার্য্ক্রম সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা যদি জনমনে থাকে তাহলে কোনো রকমের সংশয়-সন্দেহ কিংবা বিভ্রান্তি সৃষ্টির সুযোগ থাকে না।”
‘ফ্যাসিস্টদের বর্বরতার ঘটনা তুলে ধরুন’
‘ফ্যাসিবাদী’ শাসনের পতনের দুঃশাসন ও দুষ্কর্মসমূহের চিত্র এবং জুলাই-আগস্টের ঘটনাবলী বেশি করে প্রকাশের জন্য বাংলাদেশের গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
‘ফ্যাসিবাদী শাসনের দেড় দশকে কক্সবাজারের রামু, ব্রাহ্মবাড়িয়ার নাসিরনগর, রংপুর, গাইবান্ধা, সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু ধর্মীয় জনগোষ্ঠির বাড়ি-ঘর-উপাসনালয় ঘটনাবলী নিয়েও গণমাধ্যমের কাছে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের অনুরোধ করেন তিনি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরেণ, “কারা এসব ঘটনার নেপথ্যে ছিল, এসব নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আগামী দিনে আর কেউ দেশের ধর্মী জনগোষ্ঠিকে নিয়ে দলীয় রাজনীতিতে ব্যবহারের সাহস করবে না।”
“আগামী দিনে বিএনপি জনগণের রায়ে ইনশাআল্লাহ রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে ফ্যাসিবাদী দেড় দশকে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সঙ্গে যে অপ্রীতিকর, অনাহত ঘটনা ঘটেছে তার নেপথ্য কারণ খুঁজে বের করতে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ের একটি সর্বদলীয়, সর্বধর্মীয় ‘নাগরিক তদন্ত কমিশন’ গঠন করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।”
‘ক্ষমতা কুক্ষিগত করার ষড়যন্ত্র বিষয়ে সতর্ক থাকুন’
“নাগরিকদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে বিএনপি দেশে এমন একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে চায় যে সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে।”
“তবে কেউ যেন আপনার-আমার-আমাদের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার, ভোটের অধিকার কুক্ষিত করে রাখার ষড়যন্ত্র করতে না পারে সেজন্য জনগণের দায়বদ্ধ একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা প্রত্যেকটি মানুষ, এই ঘরে যে মানুষগুলো আমরা উপস্থিত আছি, এই ঘরের বাইরে সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে আমরা যে যেখানেই আছি না কেনো, যে যার অবস্থান থেকে সর্তক এবং সজাগ থাকতে হবে। আপনাদের সকলের কাছে আমি আজ সেই আহ্বান জানাই।”
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে সংস্কার উদ্যোগের মধ্যে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন দাবি করে আসছে বিএনপি।
তারেক রহমান বলেন, “নিরাপদ ও মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বের এখন পর্যন্ত গণতন্ত্রই একমাত্র উত্তম বিকল্প। গণতান্ত্রিক বিশ্বে রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে গণতন্ত্রবিরোধী যারা, গণতন্ত্রের অপশক্তি হিসেবে কিন্তু চিহ্নিত।”
তিনি বলেন, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে বাংলাদেশে বিগত দশক ধরে যারা অথবা যে দলটি ফ্যাসিবাদী শাসন-শোষণ চালিয়েছিল দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে তারা অপশক্তি হিসেবে চিহ্নিত।”
মুক্তিযুদ্ধ, পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর, নব্বই ও সর্বশেষ চব্বিশের রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতার কথা তুলে ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ বর্তমানে দুইটা বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে একমত।
“এক. বাংলাদেশকে যাতে আর কেউ ভবিষ্যতে তাবদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে না পারে। দুই. গণতন্ত্রবিরোধী পলাতক অপশক্তি যাতে আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে।
“এই দু্ইটা বিষয়ে জনগণ আর কোনো আপস করতে রাজি নয়, রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে এটি আমি উপলব্ধি করি।”
‘আমরা সবাই বাংলাদেশি’
তারেক রহমান বলেন, “দলমত ধর্ম নির্বিশেষে দেশে প্রতিটি নাগরিকের প্রথম এবং প্রধান গর্বিত পরিচয় হচ্ছে, আমরা বাংলাদেশি। নিজ নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস বা সাংস্কৃতিক স্বকীয়তা বজায় রেখেই বাংলাদেশি হিসেবে প্রতিটি নাগরিক রাষ্ট্র ও সমাজের সমান এবং ন্যায্য অধিকার ভোগ করবে এটি বিএনপির নীতি।”
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের ত্রিপিটক পাঠের মধ্য দিয়ে বিএনপির শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠান শুরু হয়।
ত্রিপিটক পাঠ করেন, এম শ্রী ইন্দ্র বংশ ভিক্ষু, ভদন্ত সুধর্ম ভিক্ষু, ভদন্ত সমৈত্রী রতন ভিক্ষু ও আনন্দ প্রিয় শ্রমন।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বুদ্ধ পূর্ণিমার শুভেচ্ছা জানান তারেক রহমান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সহসম্পাদক দীপেন দেওয়ান।
সুভাষ চন্দ্রা চাকমার সঞ্চালনায় সেখানে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, বিজন কান্তি সরকার, লন্ডন বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক, কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক দিলীপ কুমার বড়ুয়া।
বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মৈত্রী দেওয়ান, সমীর দেওয়ান, সাথী উদয় কুসম বড়ুয়া, প্রবীণ চাকমা, অনিমেষ চাকমা, নিকোলা চাকমা, প্রার্থ প্রীতম বড়ুয়া, চন্দ্রা চাকমা, মানস থু চাকমা, লু থু মু মারমা।
পরে অতিথিদের মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।