Published : 22 May 2025, 12:51 PM
আদালতের রায়ে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ার বাধা কাটলেও বৃষ্টির মধ্যে রাজধানীর মৎস্যভবন মোড়ে অবস্থান নিয়ে আছেন তার সমর্থকরা।
বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে তারা সেখানে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে ইশরাক হোসেনের ছবি নিয়ে চলছে বিজয় মিছিলের প্রস্তুতি।
শত শত মানুষের এই জমায়েতের কারণে মৎস্যভবন মোড় হয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সেগুন বাগিচা, পল্টন, জাতীয় প্রেসক্লাব সড়ক, দোয়েল চত্বর, বিজয়নগর সড়ক, তোপখানা রোডের অলি-গলিতে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক যানজট।
‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে জড়ো হওয়া এইসব নেতা-কর্মীরা ইশরাকের সমর্থক। অনেকের হাতে বিএনপির দলীয় পতাকা এবং ইশরাকের পক্ষে স্লোগান লেখা ফেস্টুন রয়েছে। কিছুক্ষণ পরপর বিভিন্ন স্লোগান ধরে তারা নিজেদের উপস্থিতির জানান দিচ্ছেন।
সূত্রাপূরের বাসিন্দা আবদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকাল ৮টায় এসেছি। হাই কোর্টের রায় হয়েছে। আমরা খুশি।
“আদালত জনগণের ভোটাধিকারের প্রতি সন্মান জানিয়েছি। তবে আমাদের আরেক দাবি, দুই উপদেষ্টার (স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম) পদত্যাগ, এটা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। অবশ্যই দলীয় উপদেষ্টাদের পদত্যাগ করতে হবে।”
স্বামীবাগ থেকে আসা জাবেদ আলী বলেন, “অন্তবর্তীকালীন সরকারের দুই উপদেষ্টার কারণে পুরো সরকার বিতর্কের মধ্যে পড়েছে। এরা কারা আপনারা সকলে জানেন। নাম বলতে চাই না।
“প্রধান উপদেষ্টার উচিত দ্রুত বিষয়টি আমলে নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া। এই বিষয়ে নিরব থাকলে তিনিও বির্তকে পড়ে যাবেন।”
জমায়েত থেকে কিছুক্ষণ পরপর স্লোগান উঠছে, ‘হৈ হৈ রৈ রৈ আসিফ-মাহফুজ গেল কই’।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির সবশেষ নির্বাচন হয়। তাতে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে।
এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তাকে যেন শপথ পড়ানো না হয় সেজন্য গত ১৪ মে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদ।
অন্যদিকে ইশরাককে শপথ পড়ানোর দাবিতে ওইদিনই আন্দোলন শুরু করেন তার সমর্থকরা। তাদের আন্দোলনে কার্যত অচল হয়ে পড়ে নগর ভবন। কিন্তু আইনি জটিলতার কথা বলে ইশরাকের শপথের আয়োজন থেকে বিরত থাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এক ফেইসবুক পোস্টে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগ দাবি করেন ইশরাক। তার সমর্থকরাও একই দাবি তোলেন।
আন্দোলনকারীরা মঙ্গলবার ঘোষণা দেন, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানো না হলে, আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
পাশাপাশি ডিএসসিসি এলাকার সব নাগরিক সেবা বন্ধ করে দেওয়ারও হুঁশিয়ারি আসে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্মচারী ইউনিয়নের কাছ থেকে।
বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হওয়ায় বুধবার সকাল ১০টার পর নগর ভবনের সামনে থেকে চলে আসেন ইশরাক সমর্থকরা। তারপর তারা মৎস্যভবন ও কাকরাইল মোড় ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন। বৃহস্পতিবারও তাদের অবস্থান কর্মসূচি চলছে।
নেতা–কর্মীরা যাতে ক্লান্ত হয়ে না পড়েন, সে জন্য থানা ভিত্তিক সময় ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। ৫ ঘণ্টা সময়ে বেঁধে নির্দিষ্ট কিছু থানার নেতা–কর্মীরা রাস্তায় বসছেন, এরপর আবার নতুন দল অবস্থান নিচ্ছে পালাক্রমে।
মৎস্য ভবন থেকে যে সড়কটি হেয়ার রোডে গেছে, সেখানে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন ‘যমুনা’। সে কারণে মৎস্য ভবনের কাছে অবস্থান নিয়ে আছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তারকাঁটার ব্যারিকেডের অন্যদিকে ইশরাক সমর্থকদের স্লোগান চলছে।