Published : 12 May 2025, 07:41 PM
স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় ইউনিয়ন ও পৌরসভা বিলুপ্ত করে উপজেলার অধীনে সরাসরি ওয়ার্ড যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি।
দলটির নেতারা বলেন, শহরে কাউন্সিলর আর গ্রামে মেম্বার থাকলে বৈষম্য করা হয়। এ বৈষম্য দূর করতে উপজেলা পর্যায়ে ইউনিয়ন ও পৌরসভা বিলুপ্ত করতে হবে।
সোমবার জাতীয় ঐকমত্য সংস্কার কমিশনের সঙ্গে সংলাপ শেষে তারা এ কথা বলেন।
জাতীয় সংসদের এলডি হলে সোমবার বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত এ সংলাপ চলে। এতে নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমির আব্দুল মাজেদ আতাহারীর নেতৃত্বে আট সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়।
সংলাপ শেষে আব্দুল মাজেদ বলেন, “কমিশনের ১৬৬টি প্রস্তাবের বেশির ভাগের সাথে আমরা একমত পোষণ করেছি। ছয়টি বিষয়ে আমরা পরিষ্কারভাবে দ্বিমত পোষণ করেছি। আবার ১০টি বিষয়ে আংশিক একমত হয়েছি।
“সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদ শব্দটি যুক্ত করা হয়েছে, আমাদের প্রস্তাবনা ছিল, এই শব্দটিকে কেন্দ্র করে যেহেতু আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত বা এটা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এইজন্য এই শব্দ পরিহার করার সুপারিশ করেছি। সংবিধানে ইতিপূর্বে মহান আল্লাহর উপরে আস্থা এবং বিশ্বাস রেখে যাবতীয় কার্যাবলীর ভিত্তি, সেটাকে পুনর্বহাল করার সুপারিশ করেছি।”
সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে ১৮ বছর প্রস্তাব দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “কমিশনের পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়েছিল ২১, আমরা বলেছি যেহেতু একজন নাগরিক ১৮ বছরে ভোট দিতে পারে সেই ক্ষেত্রে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বয়স ন্যূনতম ১৮ করার প্রস্তাব করেছি।
“অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের জন্য কমিশনের প্রস্তাব ছিল ১৫ সদস্যের। এখানে আমরা সর্বোচ্চ ২৫ সদস্যের প্রস্তাব করেছি। বিচারক নিয়োগ এবং বিচারকার্য এইসব ক্ষেত্রে আমরা তাদের প্রস্তাবে একমত হয়েছি। তবে আইনজীবীদের নির্বাচন নিয়ে কমিশনের যে প্রস্তাব সেটির সাথে দ্বিমত করেছি। আইনজীবীরা দলীয়ভাবে নির্বাচন করতে পারবে না। তাদের নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের কথা বলেছি।”
ইউনিয়ন ও পৌরসভা বিলুপ্তের বিষয়ে তিনি বলেন, “জনপ্রশাসন প্রস্তাবের মধ্যে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো এবং আমূল পরিবর্তন আনা। স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন এবং উপজেলা পর্যায়ে ইউনিয়ন এবং পৌরসভার যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে এগুলোকে বিলুপ্ত করে আরেকটু শক্তিশালী করে এবং উপজেলা সরাসরি ওয়ার্ডের সাথে সম্পৃক্ত করার কথা বলেছি।”
সংলাপে দলের নেতাদের মধ্যে মহাসচিব মূসা বিন ইযহার, যুগ্ম মহাসচিব মুস্তাফিজুর রহমান মাহমুদী, সংগঠন সচিব হাফেজ আবু তাহের খান, অর্থ সচিব আনোয়ারুল কবীর, দপ্তর সচিব দীনে আলম হারুনী, প্রচার সচিব আব্দুল্লাহ আল সাইফ খান ও নির্বাহী সদস্য আমির জিহাদী অংশ নেন।
রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর একীভূত সুপারিশ চূড়ান্ত করার পাশাপাশি এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরির জন্য কাজ করছে ঐকমত্য কমিশন।
পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশের ওপর ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মতামত জানতে চেয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। এরপর সেই মতামত ধরে সংশ্লিষ্ট দলের সঙ্গে সংলাপ করছে কমিশন।
সোমবার বিকালে নেজামে ইসলাম পার্টির সঙ্গে সংলাপের শুরুতে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, “একটি সমৃদ্ধশালী গণতান্ত্রিক এবং জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র বিনির্মাণে রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকারকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করতে চায় কমিশন৷ কাঠামোগত রূপান্তর ছাড়া এদেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করা সম্ভব নয়।
“রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে যেমন মতভিন্নতা রয়েছে, তেমনি জাতি ও রাষ্ট্রের প্রয়োজনে এক ধরনের ঐকমত্যও আছে। তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে, সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি ফ্যাসিবাদী শাসনকে পরাস্ত করতে পেরেছে৷ একটি ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে অসীম সাহস এবং বীরত্ব প্রদর্শন করেছে৷”
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংলাপে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান ও মো. আইয়ুব মিয়া।