Published : 20 May 2025, 07:48 PM
দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে ‘কালো ছায়া’ দেখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জনগণকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার ‘পাঁয়তারা’ শুরু হয়েছে বলেও অভিযোগ তার।
এমন পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীদের যেকোনো ষড়যন্ত্র রুখে দিতে প্রস্তুত থাকতে আহ্বান জানান বিএনপির মহাসচিব।
মঙ্গলবার দুপুরে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক রুটনিন আই হসপিটালের কেবিন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দলের এক যৌথ সভায় বক্তৃতা করছিলেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘‘গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করবার এবং সত্যিকার অর্থে ফ্যাসিবাদ মুক্ত একটা আধুনিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবার (যে সুযোগ তৈরি হয়েছে) সেখানে আমরা দেখছি একটা কালো ছায়া এসে দাঁড়াচ্ছে।
‘‘অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়া, জনগণকে যে অধিকার সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করবার এবং ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করবার একটা পাঁয়তারা শুরু হয়েছে।”
বিভাজনের রাজনীতি আবার শুরু হওয়ার অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘সরকারের বিভিন্ন ইনস্টিটিউশনগুলোকে পরস্পরের মুখোমুখি করার একটা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত শুরু করা হয়েছে। আমরা দেখতে পারছি যে, কিছু মানুষ যারা সরকারের মধ্যে অনুপ্রেবশ ঘটিয়ে বাংলাদেশকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে।”
চোখে জটিলতা দেখা দিলে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ১৩ মে ব্যাংকক যান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে তার বাম চোখে সফল অস্ত্রোপচার করা হয়। চিকিৎসকরা তাকে টানা দুই সপ্তাহ নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকতে বলেছেন। এখন হাসপাতালের কেবিনে আছেন তিনি। সঙ্গে তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগমও রয়েছেন।
দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত যৌথ সভায় মহাসচিব মির্জা ফখরুল সভাপতিত্ব করেন। অসুস্থতার কারণে বিদেশে থাকলেও এবার তিনি ভার্চুয়ালি এ সভায় সভাপতিত্ব করেছেন।
সভায় জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ২৬ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত আট দিনের কর্মসূচি ঠিক করা হয়। পরে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
‘শোককে শক্তিতে পরিণত করতে হবে’
সভায় দলের প্রতিষ্ঠাতার বর্ণাঢ্য কর্মজীবন তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ ও আধুনিক দেশ করবার যে কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছিল সেটির সূচনা করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। দুর্ভাগ্য আমাদের এই জাতির আমরা এই ক্ষণজন্মা মহাপুরুষকে বেশিদিন ধরে রাখতে পারিনি।
‘‘আজকে যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে, যারা বাংলাদেশকে ১৫ বছর ধরে একটা ফ্যাসিস্ট শাসনের মধ্যে রেখেছিল, যারা আজকেও এখনো ষড়যন্ত্র করে চলেছে সীমান্তের ওপার থেকে বাংলাদেশকে আবারও জনগণকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করবার জন্য, বাংলাদেশের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করবার জন্য এরকম সময়ে আমাদেরকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নাম বারবার মনে রাখতে হবে, স্মরণ করতে হবে।”
তিনি বলেন, ‘‘বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে, ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিলে, প্রায় ১৭শ নেতাকর্মীকে ‘গুম’ এর মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেই অবস্থা থেকে আজকে একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে যে, আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ করব।
‘‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের যে স্বপ্ন, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যে স্বপ্ন, তারেক রহমানের যে স্বপ্ন সেই স্বপ্নগুলোকে বাস্তবায়নে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকীতে আজকে আসুন শোক নয়, শোককে আমরা শক্তিতে পরিণত করতে চাই এবং এভাবে অনুপ্রাণিত হতে চাই যাতে করে সমস্ত অপশক্তিগুলোকে পরিাজিত করে আমরা যেন সত্যিকার অর্থেই গণতান্ত্রিক, আধুনিক এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি।”
সভায় রিজভী ছাড়াও দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী, আবদুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।