Published : 18 Jun 2025, 12:41 PM
‘বয়কটের’ একদিন পর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে যোগ দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল মাল্টিপাস হলে কমিশনের দ্বিতীয় দফা সংলাপের তৃতীয় দিনের আলোচনা শুরু হয়।
মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে যোগ না দিয়ে আলোচনার জন্ম দেওয়া জামায়াতে ইসলামী জানিয়েছিল, বুধবারের সংলাপে তাদের যোগ দেওয়ার বিষয়টি নির্ভর করছে নিজেদের মধ্যে আলোচনার ওপর।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার জানিয়েছেন, বুধবার জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, জেলা সমন্বয় কাউন্সিল নিয়ে আলোচনা হবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে।
এছাড়া সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, নিম্নকক্ষে নারী আসন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সুপারিশ নিয়ে আগের আলোচনার বিষয়টিও সূচিতে রাখা হয়েছে।
বিএনপি, জাতীয় গণফ্রন্ট, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, সিপিবিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে এ আলোচনায়।
জামায়াতে ইসলামীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আযাদ; বিএনপির সালাহ উদ্দিন আহমদ, ইসমাইল জবিউল্লাহ, অধ্যাপক রোরহান উদ্দিন খান; জাতীয় গণফ্রন্টের টিপু বিশ্বাস; এনসিপির নাহিদ ইসলাম; গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি আলোচনায় উপস্থিত আছেন।
খেলাফত মজলিশের আহমেদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের বজলুর রশীদ, এবি পার্টির আসাদুজ্জামান মজিবুর রহমান মঞ্জু, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, বিএলডিপির সাহাদাত হোসেন সেলিম, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বাংলাদেশ জাসদের মোস্তাক হোসেনসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও রয়েছেন।
জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রীয়াজ এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করছেন। বৈঠক রয়েছেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, আইয়ুর মিয়া, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।
যা ঘটেছিল
আগের দিন কমিশনের বৈঠক আধাঘণ্টা দেরিতে বৈঠক শুরু হলেও সেখানে জামায়াতের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত না থাকায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমদের আসনের পাশের আসনটি জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের জন্য রাখা হয়, তবে তা খালি দেখা যায়।
৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পরে যে যৌথ ঘোষণা বা বিবৃতি প্রকাশ করা হয়, তা ‘যথাযথ’ হয়নি বলে মনে করছে জামায়াত।
এর প্রতিবাদে জামায়াত কমিশনের বৈঠক ‘বয়কট’ করেছে বলে দলটির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা অন প্রোটেস্ট বৈঠকে যাইনি।”
দলটির আরেক জ্যেষ্ঠ নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “এজন্য আমরা আজকের জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের বৈঠকে যাইনি কারণ এই কমিশনের প্রধান হচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
“আমরা প্রধান উপদেষ্টা ও তারেক রহমানের বৈঠকের বিষয়ে কোনো কথা বলছি না। আমরা বলতে চাই, বৈঠকের পরে যেভাবে একটি দলের কথায় নির্বাচনের তারিখ বদলে দেওয়ার ঘোষণা হল, এটা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।”
জামায়াতের এই নেতা বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম, দেশে ফিরে প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলোকে ডেকে স্পষ্ট করবেন।”
মঙ্গলবার মধ্যাহ্ন বিরতিতে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ থেকে বের হওয়ার সময় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দারের কাছে জামায়াতের যোগ না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চান কয়েকজন সাংবাদিক।
তিনি বলেন, “জামায়াতে ইসলামী প্রতীকী বয়কট করেছে।”
‘বয়কটের’ কারণ লন্ডনে ইউনূস-তারেক বৈঠক কি না, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “আপনারা বুঝে নেন।”
খাওয়ার বিরতির সময় জাতীয় গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরও বলেন, “আজকে সংলাপে জামায়েতে ইসলামী অংশ নেয়নি, আমাদের সংলাপে জানানো হয়েছে যে তারা প্রতীকী বয়কট করেছে।
কমিশনের পূর্বাপর
ঐকমত্য কমিশন বলছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ধাপে ধাপে আলোচনা হবে।
কোরবানির ঈদের আগে প্রথম ধাপের আলোচনা শেষে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনার জন্য ২ জুন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসেছিল ঐকমত্য কমিশন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত অক্টোবরে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিনের প্রতিবেদন জমা পড়ে ফেব্রুয়ারি মাসে। এসব প্রতিবেদনের সুপারিশের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
তারা সংবিধান সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন এবং জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশের বিষয়ে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের মতামত জানতে চায়- যাদের মধ্যে ৩৩টি মতামত জানায়।
এরপর ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত তাদের সঙ্গে ৪৫টি অধিবেশনের মাধ্যমে প্রথম পর্বের সংলাপ সম্পন্ন করে ঐকমত্য কমিশন।
আলোচনার সুবিধার্থে কয়েকটি দলের সঙ্গে একাধিক দিনও বৈঠক চলে। আলোচনার মধ্য দিয়ে বেশ কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য ও আংশিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে।