Published : 21 Dec 2023, 12:25 AM
ক্রিকেট মাঠের ‘রাজা’ এবার রাজনীতির ‘২২ গজে’। মাগুরা-১ আসনে ভোটের লড়াইয়ে নামতেই বিএনপির বর্জনের এই নির্বাচনেও ব্যাপক আগ্রহ এলাকায়।
ভোটের প্রচারে সাকিব আল হাসানের এখন দিন-রাত একাকার হয়ে গেছে। এর মধ্যেও গণমাধ্যমকর্মীরা আসছেন, ফেরাচ্ছেন না তাদেরও।
মঙ্গলবার তার ব্যস্ততা ছিল মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের বিজয় শোভাযাত্রা, ডাকবাংলোয় আওয়ামী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক, শিক্ষকদের সঙ্গে সভা এবং সন্ধ্যার পর শহরের পথে পথে লিফলেট বিতরণ ও দুয়ারে দুয়ারে ভোট চাওয়া।
এসবের সঙ্গে নিজ বাড়িতে অসংখ্য মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় তো চলছেই। এমন ব্যস্ত দিনের শেষে রাত ১০টার পর কেশবপুর মোড়ের বাড়িতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মুখোমুখি হলেন সাকিব।
দীর্ঘ একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি শোনালেন তার রাজনীতিতে আসা ও আওয়ামী লীগকে বেছে নেওয়ার কারণ। তাকে ঘিরে ওঠা অনেক প্রশ্ন আর সংশয়ের জবাবও দিলেন, বিতর্কের ঝড় তোলা বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বললেন খোলামেলাভাবে।
ক্রিকেটার হিসেবে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আর সংসদ সদস্য হতে চাওয়ার পেছনে তার তাড়না ও স্বপ্নের কথাও উঠে এল আলাপচারিতায়।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: ১৭ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন, এখন রাজনীতির মাঠে। কোন পরিচয়ে ডাকা যায় সাকিবকে? ক্রিকেটার নাকি রাজনীতিক?
সাকিব আল হাসান: দুটোই। যেহেতু দুটোই সক্রিয় আছে এখন, আমি মনে করি দুটোই বলা ভালো।
কম-বেশি আছে কোনোটা?
ক্রিকেটার পরিচয়ই আগে, ১৭ বছর ধরে খেলছি। রাজনীতি তো মাত্র শুরু হল। এখানে যখন এতটা দিন যাবে, যদি এত বড় ক্যারিয়ার হয় তখন দুটোই সমান-সমান। আর যদি এক সময় রাজনীতির ক্যারিয়ার ক্রিকেটকে পার করে দেয়, তাহলে আগে রাজনীতি, পরে ক্রিকেট!
ক্রিকেটে তো একটা পর্যায়ে গিয়ে থামতে হয়, রাজনীতিতে বয়সে সে রকম সীমা নেই। এই ক্যারিয়ার কতটা লম্বা করার ইচ্ছে আছে আপনার?
এখনই এটা বলা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। এখন তো হানিমুন পিরিয়ডের মতো চলছে বলা যায়। মাত্র শুরু হলো, নতুন একটা ছেলে। যেহেতু ক্রিকেটের একটা ব্যাকগ্রাউন্ড আছে, ওখান থেকে বড় একটা সুবিধা এসেছে। তরুণ প্রজন্মের সাড়া অনেক বেশি পাচ্ছি। স্বাভাবিকভাবেই অনেক মজার একটা সময়।
তবে ধীরে ধীরে সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ আসতে পারে। তখনই বোঝা যাবে যে আসলে কতটা বড় হবে (ক্যারিয়ার)। তবে ওগুলো যদি উৎরে যেতে পারি, আশা করি অনেক বড় ক্যারিয়ারই হবে। ক্রিকেটের মত বড় হলে তো খারাপ হয় না।
দুই দিন হল আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেছেন। এই দুই দিনের অভিজ্ঞতা কেমন?
এই দুই দিনের অভিজ্ঞতা আমার খারাপ লাগেনি। উপভোগ করেছি। বেশ কয়েকটি জায়গায় গিয়েছি। ভালো সাড়া পাচ্ছি, এত বেশি প্রত্যাশা আমিও করিনি। সেদিক থেকে খুবই খুশি, যেভাবে সবকিছু এগোচ্ছে। এভাবে এগোতে থাকলে খুব ভালো নির্বাচন হবে বলে আমি মনে করি; আমার জন্যও, তেমনি মাগুরার জন্যও।
মনোনয়নপত্র তোলা থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত যা কিছু হল, কোনো বিশেষ কিছু হয়েছে, যা আপনার খুব ভালো লেগেছে বা হৃদয়ে দাগ কেটেছে?
একটা ব্যাপার ভালো লেগেছে যে মাগুরা থেকে (নির্বাচন) করতে পারছি। নিজের জায়গা থেকে করতে পারার আলাদা তৃপ্তি আছে। ওই জায়গা থেকে নিজের কাছে অনেক ভালো লাগছে যে নিজের এলাকার জন্য হয়ত কিছু করার সুযোগ আসবে, যদি সবকিছু ঠিক থাকে। নির্বাচনে যদি সবকিছু ঠিক যায়, তাহলে বড় সুযোগ আসবে মাগুরার জন্য কিছু করার। সেটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।
আপনি ঢাকা-১০ থেকেও মনোনয়নপত্র তুলেছিলেন, মাগুরার দুটি আসন থেকেও। এটা কি একটা মরিয়া প্রচেষ্টা ছিল যে, যেভাবেই হোক মনোনয়ন পেতেই হবে?
আমার কাছে ওরকম কখনই মনে হয়নি। এটা একটা রহস্য বলতে পারেন, কেন তুলেছিলাম (ঢাকা-১০ থেকে), মাগুরা-২ থেকেও কিনেছিলাম। ডেসপারেশন বলব না, কিন্তু হ্যাঁ, করার ইচ্ছে ছিল এবার এবং সেই কারণেই মনোনয়নপত্র কিনেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিতে চাই যে আমার জন্মস্থান থেকে নির্বাচন করার সুযোগ দিয়েছেন নৌকার হয়ে। যদি এটা উৎরে যেতে পারি, তাহলে তো অবশ্যই মাগুরার মানুষের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
গত নির্বাচনেও মনোনয়ন চেয়েছিলেন, এটা কতটা সত্যি?
(হাসি) আমি একটা জিনিস বিশ্বাস করি, আমি যদি চাইতাম (মনোনয়ন) তাহলে মিস হত না। আমার কাছে মনে হয়েছিল, এটা একটু তাড়াতাড়ি হয়ে যেত। সবকিছুর একটা সময় থাকে। আমি নিজেও হয়ত অনেক সময় অনেক কিছু চেষ্টা করি বা চিন্তা করি, তবে দিনশেষে আল্লাহর ওপর ছেড়ে দেই। এই কথাটা আমি বিশ্বাস করি যে, তিনিই উত্তম পরিকল্পনাকারী।
স্বাভাবিকভাবে আমি যা-ই করি, রাত্রিবেলায় একবার মনে করি যে, হ্যাঁ, আমার যা করার করেছি। এখন বাকি সিদ্ধান্ত ওপরওয়ালার। সেটা যখন যেমনই হোক, আমি সেটায় খুশি থেকেছি এবং দেখেছি যে কোনো কিছুই আমার জন্য খারাপ হয়নি এখন পর্যন্ত।
বেশ কবছর আগে (২০১৩ সালে) একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে আপনি ফেইসবুকে লিখেছিলেন যে, জীবনেও রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে আপনার নেই। সেই ভাবনা তো এখন অবশ্যই বদলেছে। কখন কীভাবে কোন সময়টায় তা বদলে গেল?
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। একটা ব্যাপার আমি উপলব্ধি করেছি যে, আপনি যদি আসলেই কিছু করতে চান, কিছু দিতে চান সমাজকে, তাহলে রাজনীতিই একমাত্র অপশন। হ্যাঁ, অন্যান্য মাধ্যম দিয়ে হয়ত কিছুটা করতে পারবেন। তবে বড় পরিসরে যদি বড় কোনো পরিবর্তন আনতে চান… আমরা যেমন সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই যুদ্ধ করি যে ‘এটা করব, ওটা করব’, প্রতিদিন বিশাল কিছু হয়ে যাচ্ছে, আমাদের জাতীয় দলের নতুন নতুন দল করা হয়, একজন বাদ পড়ে, আরেকজন আসে; সরকার পতন হয়ে যাচ্ছে, কোনো দেশে যুদ্ধ থেমে যাচ্ছে, হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা শুরু হচ্ছে বা থেমে যাচ্ছে, অন্যান্য যেসব দেশে যুদ্ধ হচ্ছে, ইউক্রেইন বলেন বা রাশিয়া কিংবা গাজা-ফিলিস্তিন-ইসরাইল, সবকিছুই ফেইসবুকে হচ্ছে। এটা বাস্তব দুনিয়া নয়।
যখন থেকে আমার এই উপলব্ধি এসেছে, তখন থেকেই মনে হয়েছে, যদি আসলেই আমার কিছু করার থাকে, তাহলে এর মাধ্যমেই যেতে হবে। ক্রিকেটের মানুষ, ক্রিকেট দিয়ে যদি উদাহরণ দেই, আমার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ কী করতে পারি? ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষ হলে কোচিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়া বা প্রশাসনিক কিছুতে থাকা।
বোর্ড সভাপতি হওয়া?
সেটাও খুব ভাগ্যক্রমে। আমাদের দেশের যে বাস্তবতা, সেটাও (বোর্ড সভাপতি হওয়া) খুব কঠিন বিষয়। এর বেশি কিছু করার ক্ষমতা নেই।
কিন্তু এর মাধ্যমে (সংসদ সদস্য হলে) যদি সুযোগ আসে, প্রথমত. সুযোগ এলে মাগুরার জন্য কাজ করার সুযোগ আসবে। এরপর যদি বড় ডিসিসন মেকারের পর্যায়ে যেতে পারি, অনেক বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব।
এটাও অনেক বড় সুযোগ আমি মনে করি, এতগুলো মানুষকে নিয়ে কাজ করার সুযোগ। এটা শুধু নিজের ব্যক্তিগত উদ্যোগে কখনই পারবেন না।
ধরুন বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি মানুষ কাজ করে যে কারখানায়, সেটা কত হবে? এক লাখ মানুষ? এটাও খুব বিরল, কয়েকটা হতে পারে, বাকিগুলো হয়ত আরও কম। এখানে আমার আছে ৪ লাখ মানুষ নিয়ে কাজ করার সুযোগ। এটা শুধু ভোটারের সংখ্যা। তাদের বাচ্চাকাচ্চা বা তরুণরা আছে, সব মিলিয়ে বিশাল জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করার সুযোগ।
ব্যক্তিগতভাবে এতটা করা সম্ভব বলে কখনই মনে হয় না। ওই জায়গা থেকেই ভাবলাম যে রাজনীতি করা উচিত। কারণ, আমি অনুভব করি যে, আমার দেওয়ার অনেক কিছুই আছে। যদি সুযোগ পাই, ওরকম কিছু করতে পারব, সেই বিশ্বাসটা আমার আছে এবং এই কারণেই আমার রাজনীতিতে আসা।
সেক্ষেত্রে একটা মৌলিক প্রশ্ন যে, আওয়ামী লীগকেই কেন বেছে নিলেন?
আমার কাছে মনে হয়েছে, গত ১৪-১৫ বছর যদি চিন্তা করি, এর আগে আমার বেশি দেখার সুযোগ হয়নি, বয়সও কম ছিল; যখন থেকে বোঝা শুরু করেছি, ২০০৯ সালে যখন এক নম্বর অলরাউন্ডার হই, তারপর থেকে আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় আছে (হাসি)। আমার কানেকশন সবসময় এই দিকেই ছিল সেই সূত্রে। আর যেহেতু আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ক্রিকেটকে অনেক বেশি সাপোর্ট করেন সব সময়, মাঠে গিয়ে, মাঠের বাইরে থেকে, ফোন করে অনেক সাপোর্ট করেন, যেটা অন্যান্য কোনো দেশে হয় কি না, আমাদের সন্দেহ আছে। সেই জায়গা থেকে একটা সফট কর্নার কাজ করেই।
আর যে ধরনের কাজ হয়েছে, আমার চোখে, আমি বিশ্বাস করি যে, এটাই (আওয়ামী লীগ) সঠিক জায়গা।
কাজ বলতে উন্নয়নমূলক কাজের কথা বলছেন?
অবশ্যই। তার (শেখ হাসিনা) যে ভিশন আছে, তা যদি কাজে লাগানো যায়, আমার মনে হয় যে, এর চেয়ে ভালো কিছু আর হতে পারে না। যে ডেল্টা প্ল্যান আছে ২১০০ সাল পর্যন্ত, ওই জিনিসগুলো আসলেই করা গেলে এর চেয়ে ভালো আর কিছু হয় না। ওগুলোর যদি অংশ হতে পারি আমি, কেন নয় ভালো কিছুর সঙ্গে থাকা!
আপনি যে বৃহৎ পরিসরে কাজ করার কথা বললেন, মাশরাফি বিন মুর্তজা রাজনীতিতে আসার সময় একই ধরনের কথা বলেছিলেন। তার ভাবনা বা উদাহরণ কি কাজ করেছে আপনার মধ্যে?
খুব বেশি কাজ করেছে, তা বলব না। মাশরাফি ভাইয়ের সঙ্গে যেহেতু আমার অনেক আগে থেকেই সম্পর্ক, ক্রিকেটের সম্পর্কটাই সবসময় আমাদের কাছে সবচেয়ে বড়। এর বাইরে রাজনীতির সম্পর্ক নিয়ে খুব বেশি ইয়ে করে না, কখনই।
আমি যদি উদাহরণ দিয়ে বোঝাই, মাগুরার যারা আমাকে ফয়সাল হিসেবে চেনে কিংবা আমার বিকেএসপির বন্ধু যারা, ওদের কাছে আসলে ম্যাটার করে না যে আমি কোন লেভেলে খেলছি, কোন জায়গায় গিয়েছি, কালকে কী হব, ওদের কাছে কিছুই ম্যাটার করে না। ওদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হল আমি কেমন আছি, কী করছি। ওদের সঙ্গে গেলে এখনও ওরকমই, আমার জন্য আলাদা কোনো সুবিধা নেই।
জিনিসগুলো আসলে এরকমই হয়। মাশরাফি ভাইয়ের সঙ্গে যেহেতু আমার ছোটবেলা থেকেই পরিচয়, যখন আমার হাফ প্যান্ট পরার বয়স, আমার এই গল্পটা উনি ভালো বলেন যে, মাফলার পরে দাঁড়িয়ে থাকতাম, আসলেই তাই, আমি যখন প্রথম নড়াইল গিয়েছি এক মাসের ক্যাম্প করতে, সত্যিই এরকম থাকতাম। ৩০ দিনের ক্যাম্পে সম্ভবত ১৪ দিন অসুস্থই ছিলাম। মাফলার-টাফলার পরে থাকতাম, ঠান্ডার সমস্যা এখনও আছে… তো ওই সময় থেকে তার সঙ্গে যে পরিচয়টা আছে, এর বাইরে আসলে খুব বেশি একটা চিন্তা করতে হয় না।
ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ হওয়ার কথা বললে ইমরান খানের উদাহরণ চলে আসবেই। রাজনীতিরও সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়েছেন তিনি, প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। ওই ভাবনাও কি আপনার মধ্যে কাজ করেছে?
দেখুন, আমি যখন ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছি, কখনও চিন্তা করিনি যে কোনো একটা পর্যায়ে এক নম্বর হব। কখনই নয়। আমি স্রেফ খেলাটাকে ভালোবাসতাম, উপভোগ করতাম এবং এই কারণেই খেলেছি।
এখন রাজনীতিতে আমার মনে হয়েছে যে আমার সুযোগ আছে, চেষ্টা করলে কিছু করতে পারব, সেই তাড়না থেকেই এটা করা। ভবিষ্যতে কী টার্গেট আসবে, এটা আমার জন্য বলা কঠিন।
কতদূর যাব, এটা সময়ই বলে দেবে, যদি সুযোগটা পাই। তিন বছর, পাঁচ বছর পর গেলে আমার একটা ধারণা আসবে। এখন খুবই নতুন, এগুলো নিয়ে আসলে ভবিষ্যতেই চিন্তা করা যাবে।
মাশরাফির ক্ষেত্রে যেটা হয়েছিল, তিনি তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন, রাজনীতিতে আসার পর সেখানে ধসও নামে অনেক। আমাদের দেশে সবকিছু তো বিভক্ত হয়ে যায়।
আমার সুবিধা আছে, প্রথম থেকেই মানুষ বিভক্ত (হাসি)…
তারপরও, বাংলাদেশের সব ক্ষেত্র মিলিয়ে আপনি সবচেয়ে জনপ্রিয়দের একজন। এখন সেখানে ধস নামতে পারে।
আমি আসলে কখনও ওভাবে চিন্তা করি না। একটা ব্যাপার হচ্ছে, ক্রিকেটে যারা আমাকে সাপোর্ট করত, আমি বিশ্বাস করি তারা এখনও করবে। আমি ভালো খেললে তারা প্রশংসা করবে, খারাপ খেললে অবশ্যই সমালোচনা করবে। খুবই স্বাভাবিক। ওটার সঙ্গে রাজনীতি যোগ করার কোনো কারণ আছে বলে আমার মনে হয় না।
হ্যাঁ, রাজনীতিতে যখন ভালো কিছু করব, তখন আমার দল যেমন বাহবা দেবে, তেমনি খারাপ কিছু করলে প্রতিপক্ষ হয়ত আমাকে নিয়ে সমালোচনা করতে পারে। এটাতে আমি খারাপ কিছু দেখি না। কারণ, সমালোচনার উর্ধ্বে কেউ নয়। আপনি যতোই ভালো হন, আপনার পক্ষে থাকবে, বিপক্ষেও লোক থাকবে। মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ থাকবেই।
আমি যেহেতু ক্রিকেট ক্যারিয়ারে এসব দেখে এসেছি, আমার জন্য নতুন কিছু নয় এগুলো। আমার জন্য কঠিন কিছু মনে হয় না। মাশরাফি ভাইয়ের হতে পারে (সমস্যা), কারণ তিনি মুদ্রার ওপিঠ খুব কম দেখেছিলেন। স্বাভাবিকভাবই তার জন্য মানিয়ে নেওয়া কঠিন। তবে আমি যেহেতু ভালো সময়েই দুই পিঠই দেখি, আমার জন্য সমস্যা হয় না।
ইমরান খান এখন জেলে। বাংলাদেশের সবসময়ের সেরা ফুটবলারদের একজন, আমিনুল হক রাজনীতিতে এসে জেলে গিয়েছেন কয়েক দফায়।
জেলে গেলে নাকি বড় রাজনীতিবিদ হওয়া যায়!
যারা বড় বড় রাজনীতিবিদ, সবাই জেলে গিয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাস যদি দেখেন; অন্যান্য বড় দেশ তো বাদই দিলাম, নেলসন ম্যান্ডেলা, অং সান সু চির মতো বড় নেতাদের যেতে হয়েছে।
মাশরাফি বা আপনি কি তাহলে মানসিকভাবে এটার জন্যও প্রস্তুত?
(হাসি) ঠিক আছে, জীবনে আমি মনে করি সবকিছুর অভিজ্ঞতা দরকার আছে। ভালো-খারাপ সবকিছুই আমার কাছে অভিজ্ঞতা বলে মনে হয়। যেটা আসবে, সেটা দেখা যাবে। সময়ই বলে দেবে।
ক্রিকেট খেলা আর কতদিন চালাবেন?
এখনও ২০২৫ সাল পর্যন্ত একটা পরিকল্পনা আছে, যেহেতু ওটা একটা বড় টুর্নামেন্ট। ওই সময় পর্যন্ত যদি টিকতে পারি, যদি ফিটনেস থাকে, পারফরম্যান্স হয়, তখন ওখান থেকে একটা পরিকল্পনা করতে পারি।
২০২৫ পর্যন্ত কি তিন সংস্করণই?
যতদিন খেলব, একটা তো মাথায় থাকেই। যেটা হতে পারে যে, এখন একটা ফরম্যাট কম খেলে আরেকটা বেশি, অন্য আরেকটা কম খেলে অন্যটা বেশি; এরকম হতেই পারে। এখন আমার কাছে মনে হয় যে, যারা উঠে আসছে, তাদেরকে সুযোগ করে দেওয়ার উপযুক্ত সময়। আপনি যদি ২০২৭ বিশ্বকাপ বা বড় টুর্নামেন্ট নিয়ে পরিকল্পনা করেন, তাহলে আপনার এখন ভবিষ্যতের দিকে তাকাতেই হবে।
হ্যাঁ, যখন প্রয়োজন পড়বে, (অভিজ্ঞ) ক্রিকেটাররা তৈরি থাকবে। কিন্তু এখন সামনের দিকে তাকানোর আসল সময়।
সেক্ষেত্রে অধিনায়কত্বের কী হবে? আপনি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে তিন সংস্করণে অধিনায়ক এবং বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস সম্প্রতি বলেছেন, আপনাকে লম্বা সময় দায়িত্বে দেখতে চান তারা। আপনি বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে টি-স্পোর্টসে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বিশ্বকাপের পর অধিনায়ক থাকবেন না।
জালাল ভাইয়ের মন্তব্য তো ঠিকই আছে, অফিসিয়ালি এখনও আমিই অধিনায়ক। এখন যেহেতু আমি নেই ইনজুরির কারণে, শান্ত করছে (অধিনায়কত্ব)। যখন নির্বাচন শেষ হবে, আমরা বসে আলোচনা করব। এরপর বিপিএল আছে। বিপিএল শেষে মার্চে গিয়ে আমাদের পরের আন্তর্জাতিক সিরিজ (শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে)। অনেক সময় আছে।
এই সময়ের মধ্যে আমি ও বিসিবি কথা বলে যদি মনে হয় যে, করা লাগবে (অধিনায়কত্ব), সেটাতে আমি রাজি আছি। যদি আলোচনার মাধ্যমে আমরা মনে করি যে সময় এসেছে নতুন কাউকে দেখার বা সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার, সেটাও ঠিক আছে। এটা সবকিছু সময়ই বলে দেবে।
হ্যাঁ, আমার ব্যক্তিগত অভিমত যদি বলেন, আমি বিশ্বকাপের আগে যা বলেছিলাম, এখনও ওখানে আছি। লোকে তো একটা সময় চেষ্টা করে মানসিকভাবে যতটা মুক্ত থেকে খেলা যায়। এই সময় তো অত চাপ নেওয়ার কথা চিন্তা নাও করতে পারে। তবে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে যেটি বললাম, আলোচনার মাধ্যমে হবে। সবাই মিলে আলোচনা করে একটা পর্যায় আসে এবং ওই সিদ্ধান্তগুলো খুব ভালো হয়।
যদি খেলা চালিয়ে যান, এখানে মাশরাফির উদাহরণ আবার আসছে যে, ২০১৯ বিশ্বকাপে তার বাজে পারফরম্যান্সের পর অনেকেই বলেছেন যে রাজনীতিতে যাওয়ার কারণেই তার এই অবস্থা ছিল। আপনারও সামনে ক্রিকেট মাঠে পারফরম্যান্স ভালো না হলেই একই দায় দেওয়া হতে পারে।
এটা তো লোকে অনেক ক্ষেত্রেই বলে। এবার আমরা বিশ্বকাপে খারাপ করেছি, তখনও অনেক কারণ চলে এসেছে। যখন একটা দল ভালো করে, তখন এই কারণগুলো আসে না। কিন্তু আমরা যারা খেলি বা দলের সঙ্গে থাকি, তারা জানি যে সবসময় একই পরিস্থিতি থাকে। যখন দল খারাপ করে, তখন সমালোচনা বেশি হয়, দল ভালো করলে সমালোচনা এড়িয়ে যাওয়া হয়। এটাই নিয়ম এবং এটা সবসময়ই হবে।
আমি যেটা বললাম, আমার ক্যারিয়ারে এত কিছুর মধ্য দিয়ে গিয়েছি যে, এসব খুব একটা প্রভাব ফেলে না আর। খুব একটা কী, একদমই প্রভাব ফেলে না।
নির্বাচনে আসা নিয়ে কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে কথা হয়েছে?
নাহ, বিশ্বকাপের পর একদিন দেখা হয়েছিল বিসিবিতে। তখন এমনিতে আলোচনা হয়েছে। তবে নির্বাচন নিয়ে খুব একটা কথা হয়নি। দল নিয়েই বেশির ভাগ কথা হয়েছে, পরিকল্পনা, কী চিন্তা, এসব নিয়ে কথা হয়েছে।
রাজনীতি নিয়ে ওইভাবে কথা হয়নি। হ্যাঁ, স্বাভাবিকভাবেই একটু তো অবাক হয়েছেই, যখন তিনি শুনেছেন (নির্বাচনের কথা), তবে ওরকমভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া হয়নি।
সতীর্থদের প্রতিক্রিয়া? রুবেল হোসেন, নাজমুল ইসলাম অপুদের তো শুরু থেকেই দেখা যাচ্ছে। এখন যারা জাতীয় দলে আছেন, তাদের ভাবনা?
খুব একটা তো কথা হয়নি। বিশ্বকাপ থেকে চলে এলাম ইনজুরি নিয়ে, এরপর তা খুব একটা দেখা হয়নি কারও সঙ্গে। ওদের ভাবনা জানি না। তবে আগেই যেটা বললাম, ওরা তো ক্রিকেটার হিসেবে জানে। ওখান থেকে ওই মাইন্ডসেট বদলানোর সম্ভাবনা খুবই কম।
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের প্রতিক্রিয়া?
(হাসি) ও রকম কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। তবে আমাকে শুধু বলেছিলেন, ‘কী, কেমন লাগে এখন?’ সম্প্রতি দেখা করতে গিয়েছিলাম উনার সঙ্গে। তখন বলেছেন।
রাজনীতিতে আসা নিয়ে পরিবারের প্রতিক্রিয়া কী? বাবা-মা কেমন ভাবছেন?
তারা খুবই সাপোর্টিভ। হয়ত আমার চেয়েও বেশি ইন্টারেস্টেড এবং রোমাঞ্চিত। বলা যায়, একদম এটার ভেতরে ডুবে গেছেন। তারা তো আসলে এখানে জন্ম থেকেই অনেক কিছু দেখে আসছেন। আমি তো দেখছি, তারা খুবই পজিটিভ।
আপনার স্ত্রী?
সবাই খুব পজিটিভ। খুব বেশি একটা নেগেটিভ দেখিনি কারও থেকে কিছু। একটু তো চিন্তা করেই। তবে সবাই পজিটিভ।
আপনি তো এমনিতেই অনেক ব্যস্ত থাকেন। খেলা নিয়ে, খেলার বাইরের ব্যস্ততা আছে। পরিবারকে তো ওভাবে সময় দিতে পারেন না অনেক সময়। স্ত্রী-সন্তান বেশির ভাগ সময়ই দেশের বাইরে থাকে। তাদের তো আরও বেশি দুশ্চিন্তায় পড়ার কথা যে, আপনাকে আরও কম কাছে পাবে এখন!
আসলে খেলার সময় যত ব্যস্ত ছিলাম, এর চেয়ে খুব একটা বেশি বাড়বে না ব্যস্ততা। আর যেটা বললাম, ম্যানেজ করার চেষ্টা করছি।
এখনও আমি মনে করি, আইপিএল হয়ত ৫০-৫০, তবে অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে নাম দিলে মিস হওয়ার চান্স নেই (দল পেতে)। ওই জায়গাগুলো যখন আমি ছেড়ে দিচ্ছি, স্বাভাবিকই একটা বড় জায়গা ফাঁকা হবে।
জীবনে চেক অ্যান্ড ব্যালান্স তো করতেই হয়। একেকটা সময় একেকটাকে প্রাধান্য দিতে হয়। এখন যেহেতু এটা বড় প্রাধান্যের জায়গা, ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ না খেললেই তিন-চার মাস বেঁচে যাচ্ছে এখানে। যেটা আমি মনে করি, মোর দ্যান এনাফ।
খেলা তো এমনিতেও ৮ মাস থাকবে না। যেটা বললাম আগে, আমি যদি একটা ফরম্যাট একটু কম খেলার চেষ্টা করি, তাহলে আরও সময় বের হয়ে আসবে। যেটা খেলব, সেটায় যেন পূর্ণ মনোযোগ রাখতে পারি। এসব চেক অ্যান্ড ব্যালান্স করতে পারলে অনেক সময়ই বের করতে পারব।
আপনার স্ত্রী তো সামাজিক মাধ্যমে বেশ সক্রিয় থাকেন আপনার সমর্থনে, ভোটের মাঠে কি তাকে দেখা যাবে?
(হাসি) এখন যেহেতু বাচ্চাদের স্কুল চলছে, ওটা কঠিন ওর জন্য। এমনিতেই স্কুল অনেক মিস হয়ে গেছে। ওই সম্ভাবনা তাই কম।
আপনার প্রচারণায় খবর সংগ্রহে এসে মাগুরায় অনেকের সঙ্গেই কথা হয়েছে আমাদের। অনেকেরই বেশ শঙ্কা আছে যে, আপনার স্ত্রী-বাচ্চারা যুক্তরাষ্ট্রে থিতু, এখানে কতটা সময় দিতে পারবেন।
এটা সময়ই বলে দেবে। আসলে মানুষ অনেক ধারণাই করে আমাকে নিয়ে। দূর থেকে একটা অনুমান আপনি করতেই পারেন এবং আমি তাদেরকে ভুল বলি না বা দোষ দেই না। তাদের একটা চিন্তা থাকতেই পারে। যেহেতু তারা ভোট দেবেন, অনেক কিছু চিন্তা করেই দেবেন। এটা খুবই স্বাভাবিক।
তবে আমি যেটা বললাম, লোকে যতটা ভাবছে, তার চেয়েও বেশি সময় তারা আমার কাছ থেকে পাবে এবং তারাই অবাক হবে যে, কীভাবে সাকিব এতটা ম্যানেজ করতে পারছে।
যেটা আমি আমার (ক্রিকেট) ক্যারিয়ারে করে আসছি। আমার মনে হয় না, এখানেও সমস্যা হবে।
নিজ দলের নেতা-কর্মীদের মনে আশ্বাস বা ভরসা জোগানোর ব্যাপারও তো আছে! তারাও অনেকে সন্দিহান।
হ্যাঁ, অবশ্যই ভরসা জোগানোর জায়গা আছে। তারা অসম্ভব পরিমাণ সাপোর্ট করছে আমাকে। সেদিক থেকে আমি খুবই ভাগ্যবান। তাদের নির্দেশনা এখন আমার জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হবে। তারাই এখন আমার কোচ। তাদের কোচিংয়ের যে মেধা আছে, সেটা দিয়ে আমাকে চালাবে। আমি তাদের থেকে অনেক শিখব আশা করি এবং শিখে ভালো ভালো কাজ করতে পারব।
দলে তো অনেক ত্যাগী নেতা-কর্মী আছেন। ২০-২৫, ৩০-৪০ বছর ধরে কাজ করছেন। কিন্তু মাশরাফি বা আপনার মতো যখন কেউ হুট করে আসেন, তাদের প্রতিক্রিয়া কেমন? তাদের অনেক রাজনৈতিক স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা থাকে। আপনাকে কীভাবে গ্রহণ করেছেন?
দেখুন, তাদের মনে কী আছে, তা তো আমার পক্ষে বলা মুশকিল। তবে ওপর থেকে যেটা দেখেছি, সবাই অনেক সাপোর্টিভ ছিলেন, স্পোর্টিংলি নিয়েছেন এবং পজিটিভ ছিলেন। প্রতিটি জায়গায় তারা আমাকে সর্বাত্মক সহায়তা করার চেষ্টা করছেন।
যিনি এখানে ছিলেন, তিনিও হেভিওয়েট প্রার্থী, অনেক কাজ করেছেন।
যখনই সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমি তার সঙ্গে দেখা করেছি, তার সঙ্গে লাঞ্চ করেছি, তার থেকে পরামর্শ নিয়েছি এবং আমি নিশ্চিত, এই প্রচার-প্রচারণার কোনো একটা সময় তিনিও আসবেন, জয়েন করবেন এবং একসঙ্গেই কাজ করব। যেহেতু তিনি অনেক দিন এখানে ছিলেন, স্বাভাবিকভাবেই তার ধারণা আছে যে কীভাবে সামনের দিকে এগোনো যাবে। তার পরামর্শ আমার অনেক দরকার হবে।
অনেকেই মনে করেন যে আপনি একটু রিজার্ভড। নিজস্ব পরিমণ্ডলে অন্যরকম হতে পারেন, তবে বাইরে একটু রিজার্ভড, নিজের মতো থাকতে পছন্দ করেন, মানুষের সঙ্গে মিশতে সেভাবে পছন্দ করেন না এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করেন। এখন তো পুরো উল্টো। মানুষের কাছাকাছি যেতে হবে, মানুষকে নিয়েই আপনার কাজ!
উল্টো হওয়ার কারণ হচ্ছে, দুটোই আমার জায়গার কারণে। ক্রিকেটে আমার রিজার্ভড থাকা জরুরি ছিল বলে আমি মনে করেছি এবং সে কারণেই রিজার্ভড থেকেছি। এ কারণেই হয়ত আমার প্রতি লোকের ইন্টারেস্ট বেশি। সব খুলে দিলে হয়ত ইন্টারেস্ট থাকত না। সেই জায়গা থেকে আমি অনুভব করেছি এবং যেভাবে আমি বড় হয়েছি, আমার গাইডেন্স এরকম ছিল যে চাইলেও আমি নরম্যাল একটা জায়গায় বসে খেতে পারব না বা আড্ডা দিতে পারব না ফ্রেন্ড সার্কেলের সঙ্গে।
এটা আমার ছোটবেলা থেকেই। কারণ, যখন একটা পর্যায়ে আসব, যারা আমাকে গাইড করেছেন, তারা আমাকে নিয়ে এরকম ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাই করেছিলেন যে আমার এরকম একটা জায়গায় যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তখন আমি সাধারণ কাজগুলো করতে পারব না, সেটা মেনে নিতে কষ্ট হবে, যদি এই লাইফই ক্যারি করি। এজন্যই যখন আমি সত্যিই এই পর্যায়ে এসেছি, তখন আর নিজেকে বদলাতে হয়নি।
আমারও অনেক ইচ্ছে করে সংসদ ভবনের সামনে গিয়ে বা কোনো একটা পার্কে গিয়ে বসতে। কিন্তু সেটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সাধারণ সময়ে সম্ভব নয়। সে কারণেই ওই সময় এ রকম ছিলাম।
এখন যেহেতু আমার মানুষের কাছে যেতে হবে, অবশ্যই মানুষের কাছে যাব। কোনোটিতেই আমার সমস্যা নেই।
এমন তো নয় আমি নতুন করে মানুষের কাছে যাচ্ছি। মানুষের কাছেই ছিলাম। হয়তো প্রাচীরের এপাশ আর ওপাশ দেখতে হত। এখন আমি তাদের কাছাকাছি যেতে পারি। এই তো। মাঝখানের প্রাচীরটা নেই।
আপনার ক্রিকেট ক্যারিয়ার যেমন রেকর্ড-অর্জনে সমৃদ্ধ, তেমনি বিতর্কও অনেক আছে। মাঠের বাইরেও বিতর্ক কম নেই। গত কয়েক বছরেই অনেক হয়েছে। যেমন একটি বেটিং সাইটের সঙ্গে চুক্তি করা, দুবাইয়ে বিতর্কিত এক ব্যবসায়ীর স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করা। এসবের কোনো প্রভাব পড়তে পারে মলে মনে হয়? রাজনীতিতে ভাবমূর্তি ব্যাপারটা তো খুব গুরুত্বপূর্ণ।
মানুষ কোনো জিনিস পজিটিভলি নেবে, কোনটি নেগেটিভলি। আগেও বলেছি, এখনও বলছি, আমি কাউকেই দোষ দেই না। যখন ক্রিকেট খেলেছি, তখনও এই কথাই বলেছি, এমন নয় যে রাজনীতিতে এসে কথা বদলে ফেলেছি। লোকের প্রত্যাশা থাকতেই পারে।
বেটিং সাইটের ব্যাপারটি হলো, আপনাদের কথা এক দিক থেকে ঠিক আছে। তবে এরকম অনেক সারোগেট ব্র্যান্ড আছে। ধরুন, আপনি আমাকে নিষিদ্ধ করলেন, কিন্তু বাংলাদেশে এরকম অনেক টিভি চ্যানেল আছে, যেখানে চলছে, এটাও নিষিদ্ধ হওয়া উচিত না?
অফিসিয়ালি যদি আপনি দেখেন, আইনগতভাবে এটা নিষিদ্ধ করার উপায় নেই। আইনের দিক থেকে আমি ঠিক আছি। কারণ অফিসিয়ালি ওটা বেটিং সাইট ছিল না। হ্যাঁ, বলতে পারেন যে এভাবে খাচ্ছেন না, ওভাবে ঘুরিয়ে খাচ্ছেন, সেটা অন্য ব্যাপার। কিন্তু অফিসিয়ালি বললে এটা কোথাও নিষিদ্ধ নয় এবং এই কারণেই তারা চুক্তি করতে পেরেছিল।
আমি চুক্তি করার আগেও জিজ্ঞেস করেছি যে, আইনগতভাবে কোনো সমস্যা আছে কি না। আমাকে তারা আইন দেখিয়েছে যে, অফিসিয়ালি কোনো আইনে কেউ আটকাতে পারবে না। যদি কেউ আমার বিরুদ্ধে মামলা করে এবং আমার আইনজীবীর সঙ্গে লড়ে, আমার আইনজীবী কখনই হারবে না। কারণ, আইনে ওটা নাই। আমি দেখাব যে, ওটা তো বেটিং সাইটই না।
একদিক থেকে আপনি বলতেই পারেন। তাহলে সবাইকেই ধরতে হবে। আইন আসলে কার জন্য? এখন তো আইসিসিও উন্মুক্ত করে দিয়েছে। কোনো দেশ চাইলে তাদের স্পন্সর হিসেবে সারোগেট ব্র্যান্ডগুলো রাখতে পারবে। এখন আপনি কী বলবেন? আইসিসি অনুমোদন দিয়েছে, চাইলে বিসিবিও এখন সারোগেট ব্র্যান্ড নিতে পারে স্পন্সর হিসেবে। বড় স্পন্সর নিতে হলে এরকম স্পন্সরই নিতে হবে। অন্যান্য জাতীয় দল দেখবেন, এরকমই স্পন্সর। আইপিএল বাদ দিলে প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে এই ব্র্যান্ডগুলি স্পন্সর।
হয়ত বাংলাদেশ আর ভারতে নেই। অন্য সব জায়গায় আছে এবং ওসবের টিভি বিজ্ঞাপন আমার করতেই হচ্ছে। অফিসিয়ালি বা আনঅফিসিয়ালি হোক, আমি তো করছি এবং এটা আটকানোরও কোনো উপায় নেই।
আমি মনে করি যে, ব্যক্তিগতভাবে আমার আর্থিক ক্ষতি করানোর জন্য এসব করা হয়। এছাড়া আর কিছুই নয় এবং এখানে মিডিয়ারই বড় ভূমিকা। তারাই এগুলো শুরু করে একটা অবস্থা সৃষ্টি করে।
মিডিয়া নাহয় তাদের মত করতেই পারে। কিন্তু বিসিবির যারা দায়িত্বশীল, তারা মিডিয়ার কথা শুনবেন কেন?
ঠিক আছে, আমি বললাম যে, আমাকে ‘না’ করলেও আমার আপত্তি নেই, যদি বলত করতে, তাহলে করতাম।
হলে সরে এসেছিলেন কি বিসিবি বা বোর্ড সভাপতির চাপে?
না না, চাপে নয়। বিসিবি থেকে বলেছে আমি এটা করতে পারব না। ঠিক আছে, সমস্যা নেই। যেহেতু এই জিনিসটাই তাদের জন্য প্রথম ছিল, তারা বলেছে, ‘এটা তুমি কর না।’ আমি ছেড়ে দিয়েছি।
আগেও এরকম হয়েছে। যখন রবি স্পন্সর ছিল বাংলাদেশ দলের, তখন আমি গ্রামীণফোনের সঙ্গে চুক্তি করেছিলাম। তখনও বলা হয়েছিল ছেড়ে দিতে। আর্থিকভাবে এসব আমার জন্য অনেক বড় বড় ধাক্কা।
তবে এগুলো নিয়ে আমি কখনও ‘ইয়ে’ করিনি। যা আমার কপালে আছে, তা আসবেই। কেউ আটকে রাখতে পারবে না বলে আমি বিশ্বাস করি।
দুবাইয়ের সেই স্বর্ণের দোকান উদ্বোধনের ব্যাপারটি?
দেখুন, আমি কার দোকান উদ্বোধন করতে যাচ্ছি, এটা আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। আমার ডিমান্ড আছে বলেই তারা আমাকে ডাকছেন। মালিক কে, এটা আমার কাছে খুব বেশি ম্যাটার করে না। আর সাধারণত এই চুক্তিগুলো দেখেন আমার ম্যানেজার। সে আমাকে বলেছে যেতে।
যাওয়ার পর আমরা জেনেছি যে, এ রকম অভিযোগ আছে। আমি জানি না সে আসলে কী। সে যদি সত্যিই ক্রিমিনাল হয়ে থাকে, মানে মিডিয়ায় যেভাবে তাকে উপস্থাপন করা হয়েছে, তাহলে তাকে ধরার দায়িত্ব কার? আমার তো দায়িত্ব নয়! অন্তত আমি তো একটা ভালো কাজ করেছি যে, তাকে বের করে এনে! (হাসি) আমি তো উপকারই করলাম, কাজ কিছুটা এগিয়ে দিলাম!
আমি তো খারাপ কিছু দেখি না। এখন মানুষ তাদের জায়গা থেকে বিভিন্ন কিছু করতে পারে। যেটা হচ্ছে যে, আগে থেকেই ভাইরাল হয়ে যায় জিনিসগুলো। আমার নাম থাকলে আরেকটু বেশি ভাইরাল হয়। অতিরঞ্জিত হয়। অন্য কেউ করলে এগুলো হবে না। এসব আমি স্বাভাবিকভাবেই গ্রহণ করে নেই।
এখন যদি জনপ্রতিনিধি হয়ে যান, তখন কি আগের চেয়ে অনেক বেশি ভাবতে হবে না এসব ক্ষেত্রে?
আমি আমার জীবনজুড়েই নিজের ইচ্ছেমতো কাজ করেছি। এখানেও সেটাই থাকব। আমি বিশ্বাস করি যে, আমি যদি সৎ থাকি, রাস্তাটায় যদি ফোকাসড থাকি যে ঠিকঠাক, তখন আসলে এসব সমালোচনা আমার জন্য শোনা ঠিক হবে না। হ্যাঁ, অবশ্যই, সমালোচনা আমি নেব মাথায়। তবে আমার যদি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়, এগুলো নিয়ে যুদ্ধ করলে আমি কেবল আমার সময়ক্ষেপণ করছি। সৎভাবে কোনো কিছু কাজ করতে চাইলে আমাকে খুব বেশি চিন্তা করতে হবে না। যদি আমার চিন্তা বা উদ্দেশ্য খারাপ থাকত, তাহলে অন্য কিছু চিন্তা করতে হত।
আরেকটি সাম্প্রতিক সবচেয়ে বড় যে বিতর্ক, বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার ঠিক আগে টি-স্পোর্টসে ওই সাক্ষাৎকারটি… বিশ্বকাপের সময় সংবাদ সম্মেলনে একটি প্রশ্নের উত্তরে আপনি বলেছেনও যে, ওই সাক্ষাৎকারের প্রভাব দলে পড়ে থাকলেও থাকতে পারে। এখন পেছন ফিরে তাকালে কী মনে হয়, সাক্ষাৎকারে ওসব না বললেও পারতেন?
আমার জীবনে যা হয়ে গেছে, কোনো কিছু নিয়ে আমি ‘রিগ্রেট’ করি না। আপনি যদি বলেন ইন্টারভিউয়ের কথাগুলি, আমি এখনও ওখানেই স্ট্যান্ড করি। একদম হুবহু যা বলেছি, কোনো একটা পয়েন্টও যদি বলেন যে বদলানোর সুযোগ থাকলে বদলাব কি না, একটা শব্দও বদলাব না।
আমার চাওয়া ছিল যে, এখানে সবকিছু আমি পরিষ্কার করে যাব, যাতে বিশ্বকাপে পুরোপুরি মনোযোগ দিতে পারি। যেহেতু বড় একটা ইভেন্টে যাচ্ছি। এখন কোন দৃষ্টিতে আপনারা দেখবেন, এটা আপনাদের ওপরই নির্ভর করে। আপনারা এটিকে যদি দেখেন যে গ্লাস অর্ধেক পূর্ণ, তাহলে তা-ই। অর্ধেক খালি যদি দেখেন, তাহলেও তা-ই।
আমার সঙ্গে যদি কেউ বসে, মনে হয় না একটা কথাও কেউ দ্বিমত করতে পারবে আমি যা বলেছি। পয়েন্টে কেউ পারবে না আমার সঙ্গে।
তাহলে ওই বিতর্ক করার জন্য আরেকটা ইন্টারভিউ লাগবে! সেসব তাহলে আপাতত তোলা থাকল। আপনি বললেন কথা বদলাবেন না সুযোগ পেলেও। কিন্তু সময়টা কি বদলাতেন? সুযোগ পেলে ওই সময়ে না বলে অন্য সময়ে?
নাহ, আমার কাছে মনে হয় না জীবনে এসব খুব বেশি প্রভাব পড়ার মতো। আমি এটা অনুভব করি না। আর যদি প্রভাব পড়ে থাকে, তাহলে তো আমি ‘কিছু একটা’ যে, আমার কথায় এত প্রভাব পড়ে!
অবশ্যই আপনি ‘একটা কিছু!’ আপনি বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক, এজন্যই প্রভাব পড়তে পারে!
আমার কাছে মনে হয় না যে এগুলোর প্রভাব পড়ে। বেশির ভাগ ক্রিকেটারের মানসিকতা এখন যা দেখি, আমার মনে হয় না এটা।
মানে বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সে ওটার প্রভাব পড়েনি?
নাহ, আমরা যদি শুধু নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেই জিততাম, যেটা আমরা জয়ের প্রত্যাশা করি, তাহলেই তো অন্যান্য বিশ্বকাপের মতোই হত, তিন ম্যাচে জয়। খুব বেশি পরিবর্তন হত না। হ্যাঁ, নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে হারাটা খারাপ হয়েছে।
ওই সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গেই যদি বলা হয়, তামিমের সঙ্গে আপনার সম্পর্কের টানাপড়েনের ব্যাপারটি। বোর্ড সভাপতি যখন প্রকাশ্যে এটা বলে দিলেন, তার পরই কেমন একটা যুদ্ধ যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলো।
আমার এরকমই মনে হয়। এর আগ পর্যন্ত আপনারা সন্দেহ করতেন বা বলতেন যে আছে কিছু। কিন্তু কখনও সেটির প্রভাব মাঠে পড়েনি। ভেতরে যাই হোক, মাঠে বোঝা যায়নি। এমনকি এখনও যদি ড্রেসিং রুমে আমরা একসঙ্গে থাকি, তাহলে প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না।
আগের মতো ঘনিষ্ঠতা বা বন্ধুত্ব যদি নাও হয়, আপনাদের সম্পর্ক কি কখনও স্বাভাবিক হতে পারে?
আসলে ভবিষ্যৎ কে বলতে পারে! কে জানে, মানুষের জীবনে কত কিছুই তো ঘটে। হতেই পারে আবার। আমি তো অস্বাভাবিক কিছু দেখি না। আবার না হলেও অস্বাভাবিক নয়। একসঙ্গে যদি আবার জাতীয় দলে খেলা হয়, হয়ত খুব স্বাভাবিকও হয়ে যেতে পারে। তাই না? এগুলো আসলে সময়ই সব বলে দেবে।
নির্বাচনে ফেরা যাক। মাগুরা তো ছোট একটি জেলা, এখানে অনেক কিছু করার আছে।
আমিও ভাবতাম ছোট জেলা। কিন্তু ভোটার তো অনেক! ৪ লাখের বেশি ভোটার আমার আসনে। এত ছোটও নয়।
গোটা দেশেই তো আসলে মানুষ বেশি। তবে উন্নয়নের দিক থেকে বলা হলে হয়ত, অনেক জায়গায় এখনও কাজ করার সুযোগ আছে, স্বাক্ষরতার হার যেমন অফিসিয়াল হিসেবে মাত্র পঞ্চাশভাগের একটু বেশি এবং আরও অনেক ঘাটতি আছে। আপনার এখানে লক্ষ্য কী এবং মাগুরা নিয়ে স্বপ্ন কী?
স্বপ্ন আসলে চতুর্দিক থেকে উন্নতি করার। আমি যেহেতু অলরাউন্ডার, একটা নাম আছে, চেষ্টা করব ‘অলরাউন্ড মাগুরা’ গড়ে তোলার। ক্রিকেট নয় শুধু, সামগ্রিক ক্রীড়া, সংস্কৃতি, শিক্ষা, চিকিৎসা, চাকরির ক্ষেত্র তৈরি করা, বেকারত্বের হার যতটা কম রাখা যায়, এই সব জায়গায় আসলে কাজ করার আছে।
আমাদের এদিকে কৃষির অনেক ব্যাপকতা আছে। আরও বেশি বৈজ্ঞানিকভাবে তা করা গেলে হয়তো আরও বেশি ফসল ফলানো সম্ভব। অনেক কিছু নিয়েই কাজ করার আছে। কৃষি নিয়ে যেহেতু আমার বাড়তি আগ্রহ আছে, কাজেই এখানে অনেক বেশি কাজ করার ইচ্ছা আছে। তবে সার্বিকভাবেই ইচ্ছে থাকবে, মাগুরার অনেক উন্নতি করার।
আপনার নিজের এমনিতে কিছু বলার আছে, ভক্ত বা মাগুরাবাসীর জন্য?
আমি একটা ব্যাপার অনুভব করি যে, মানুষ অনেক সন্দেহ করে, অনেক সংশয় আছে তাদের অনেক ক্ষেত্রেই। প্রতি সিরিজের আগেই যেমন দেখা যায় যে আমি খেলব কি না বা দেশে আসব কি না, এরকম কিছু চলতেই থাকে। তবে দিনশেষে সব ঠিকঠাকই হয়।
সবার প্রতি অনুরোধ থাকবে সেই সন্দেহ না করতে। যদি সুযোগ পাই (সংসদ সদস্য হওয়ার) সবার সন্দেহই দূর হয়ে যাবে। আমার কাছে মনে হয়, এখান থেকে আমার পাওয়ার কিছু নেই। দেওয়ার অনেক কিছু আছে। সেই জায়গা থেকে আমি কেবল দিতেই পারি। চেষ্টা করব, আমার দিক থেকে সর্বোচ্চটা দেওয়ার।
আর যেটা বললাম, যাদের মনে সন্দেহ-সংশয় আছে, সেসব না রাখতে। ৭ জানুয়ারি এসে ভোট দিতে। সেটা আমাকে হোক বা অন্য কাউকে। তাদের ওপরই সিদ্ধান্ত, পরের ৫ বছরের জন্য তারা প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। তবে সবাই যেন আসেন ভোট দিতে।
আমরা অনেক সময় এই দায়িত্ববোধও কম মনে করি। অনেকেই মনে করেন ‘দিলাম ভোট বা না দিলাম’। আমি ছোটবেলা থেকেই মনে করি, এটা আমার অধিকার, আমার দেওয়া উচিত। সেটা যখন আমি রাজনৈতিক কোনো কিছুর সঙ্গে সম্পৃক্ত নই, তখন থেকেই।
প্রথম থেকেই এই উপলব্ধি আমার ছিল। বাইরে যখন যাই, দেখি যে বিদেশে ভোট নিয়ে ওদের কতটা আগ্রহ এবং কতটা ফোকাসড ওরা। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে লোকে ওভাবে চিন্তা করে না। খুবই সাদাসিধে মানুষ। সবাইকেই তাই অনুরোধ করব, তারা যেন ভোট দেয়, যাকে ইচ্ছা। আমি অনুরোধ করব অবশ্যই আমাকে দিতে। তবে না দিলেও সমস্যা নেই। ভোটকেন্দ্রে যেন আসেন।
আবারও বলছি, মানুষের যে সন্দেহ আছে, সুযোগ পেলে, সব সন্দেহ দূর করতে পারব।