Published : 25 May 2025, 12:45 PM
চীনের চিয়াংশি প্রদেশের রাজধানী নানছাংয়ে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো ঐতিহ্যবাহী ড্রাগন বোট ফেস্টিভ্যাল, চীনা ভাষায় যাকে বলে ‘দুয়ানউ জিয়ে’।
শুক্র ও শনিবার চিওলং লেকের নীল জলে রঙিন ড্রাগন-সজ্জিত নৌকা বাইচ, লোকসাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও বৈচিত্র্যময় স্থানীয় খাবারের সমারোহ—সব মিলিয়ে উৎসবটি রূপ নেয় এক বর্ণিল সাংস্কৃতিক উৎসবমঞ্চে।
প্রাচীন চন্দ্রবর্ষ অনুযায়ী পঞ্চম মাসে অনুষ্ঠিত এই উৎসব কেবল প্রতিযোগিতামূলক ক্রীড়ার নয়, বরং ঐতিহ্য, আত্মপরিচয় ও সম্প্রদায়ের বন্ধনের এক অভিজ্ঞান। নৌকাবাইচে প্রতিটি নৌকার সামনের অংশে ছিল ড্রাগনের মুখাবয়ব, আর প্রতিটি দল লড়েছে ছন্দে, শক্তিতে ও ঐতিহ্যের গৌরবে।
উৎসবের সূচনা হয় জাতীয় সংগীত ও ঐতিহ্যবাহী রীতিতে। এরপর পুরো চিওলং লেকজুড়ে বেজে ওঠে ড্রাম, ঢোল আর উচ্ছ্বাস। শিশুদের জন্য ছিল রঙিন সুতা বাঁধা, সুগন্ধি থলে তৈরি, মুখোশ বানানো ও ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পের আয়োজন। শতাধিক খাবারের স্টল ও খেলনার দোকানও উৎসবপ্রেমীদের আকর্ষণ করে।
ড্রাগন বোট ফেস্টিভ্যাল চীনের একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব, এর ইতিহাস প্রায় দুই হাজার বছরের পুরোনো। উৎসবটি মূলত চীনের প্রাচীন কবি ও দেশপ্রেমিক কু ইউয়ানকে স্মরণে আয়োজন করা হয়।
খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে চু রাজ্যের এই রাজকর্মকর্তা ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় রাজদরবার থেকে বিতাড়িত হন’ বলে প্রচলিত রয়েছে। পরে রাজ্য দখলের সংবাদ পেয়ে হতাশায় তিনি নদীতে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
জনগণ নৌকা নিয়ে তাকে খুঁজতে বের হয় এবং মাছ যেন তার দেহ না খায়, সেজন্য চালসহ খাবার নদীতে নিক্ষেপ করে। এই ঘটনাই পরবর্তীতে নৌকাবাইচ ও জংজি (চালের পিঠা) বিলির মাধ্যমে স্মরণীয় উৎসবে পরিণত হয়।
এবার উৎসবটির নিরাপত্তায় ছিল ব্যাপক প্রস্তুতি—মাঠে-মাঠে মোতায়েন ছিল পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবক দল ও পর্যবেক্ষণ টিম। আয়োজকদের মতে, এই আয়োজন কেবল ঐতিহ্যের ধারকই নয়, বরং স্থানীয় পর্যটন ও অর্থনীতির জন্য বড় ভূমিকা রাখছে।
আয়োজকেরা জানান, এবছর ১২টি দেশ ও অঞ্চল থেকে ৫০টি দল অংশ নিয়েছে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায়। স্থানীয়দের পাশাপাশি উৎসবে ছিল বিদেশি শিক্ষার্থী ও পর্যটকদের সরব উপস্থিতি।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সেলিম পারভেজ বলেন, “চীনের এই উৎসব শুধু চোখ নয়, হৃদয়কেও ছুঁয়ে যায়। সংস্কৃতির গভীরতা এবং মানুষের আন্তরিকতা—সবকিছু মুগ্ধ করার মতো।”
ক্যামেরুন থেকে আসা লিলিয়ান রাসেল জানান, “এই প্রথম এমন উৎসবে অংশ নিলাম। চীনা খাবার, নাচ, সংগীত, আর মানুষের হাসিমুখ আমাকে মুগ্ধ করেছে।”
বর্তমানে ড্রাগন বোট ফেস্টিভ্যাল শুধু ঐতিহাসিক স্মারক নয়, এটি চীনের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও সামাজিক ঐক্যের প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হয়।