Published : 21 Feb 2025, 09:37 PM
ঢাকার ধামরাইয়ে দিন-দুপুরে সাবেক এক ইউপি সদস্যকে দুই চোখ উপড়ে, কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
শুক্রবার জুমার নামাজের সময় ধামরাইয়ের কুল্লা ইউনিয়নের মাকুলিয়া গ্রামের ‘আকসিরনগর আবাসন’ প্রকল্পের ভেতরে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন ধামরাই থানার ওসি মনিরুল ইসলাম।
নিহত বাবুল হোসেন (৫০) ওই মাকুলিয়া গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে। তিনি কুল্লা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দুই বারের ইউপি সদস্য ছিলেন।
নিহতের স্বজনদের মধ্যে কেউ কেউ দাবি করেছেন- জমিজমা নিয়ে বিরোধে স্থানীয় আবাসন কোম্পানির পক্ষ নেওয়ায় তার ওপর এই হামলা চালানো হয়েছে।
তবে তার স্ত্রীর দাবি বাবুল হোসেন কোনো আবাসন কোম্পানির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।
নিহতের ভাতিজা মাহিন হাসান বলেন, “পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী এলাকার আরশাদ, শওকত, শরিফ, আসাদ, মনিরসহ আরও কয়েকজন লোহার পাইপ, হাতুড়ি, চাকু দিয়ে আঘাত করে ও চোখ খুঁচিয়ে আমার চাচাকে হত্যা করেছে।”
তিনি বলেন, “চাচা আকসিরনগর আবাসন প্রকল্পের হয়ে কাজ করতেন। সকাল থেকে তারা ওই হাউজিংয়ের ভেতরে সরিষার গাছ শুকাচ্ছিলেন। জুমার নামাজের সময় আমার চাচি চাচার জন্য খাবার আনতে বাসায় যায়। তিনি ফিরে এসে দেখেন হামলাকারীরা চাচাকে রক্তাক্ত জখম করেছে।”
“চাচি তাকে বাঁচাতে গেলে তাকেও মারধর করে। পরে তিনি দৌড়ে পাশের মসজিদে গিয়ে বিষয়টি জানালে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে চাচাকে উদ্ধার করি।”
পরে তাকে সাভারের এনাম মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
তবে নিহতের স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার জানান, তিনি ও তার স্বামী আকসিরনগর আবাসন প্রকল্পে সরিষা শুকাচ্ছিলেন। এসময় এলাকার কিছু লোকজন সেখানে অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে প্রকাশ্যে তার স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করে।
তিনি আরও বলেন, তার স্বামী কোনো আবাসন প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত নয়। তবে এলাকার কিছু লোক প্রায়ই তাকে হুমকি-ধামকি দিতেন।
তিনি তার স্বামী হত্যার বিচার দাবি করেন।
এনাম মেডিকেলের ডিউটি ম্যানেজার ইউসুফ আলী বলেন, “বিকেল ৩টার দিকে মৃত অবস্থায় বাবুল হোসেনকে হাসপাতালে নিয়ে আসে স্বজনরা। নিহতের মরদেহ বর্তমানে হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।”
তবে আকসিরনগর আবাসন কোম্পানির মালিক তৌহিদুল ইসলাম দাবি করেন, বাবুল হোসেন দীর্ঘদিন ধরে তার প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কাজ করছেন। সেজন্যই এলাকার লোকজন মিলে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি।
ধামরাই থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধে সাবেক ইউপি সদস্য বাবুলকে হত্যা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি আকসিরনগর আবাসন কোম্পানির পক্ষে কাজ করতেন বলে জানা গেছে।
ওসি বলেন, “ওই আবাসন কোম্পানির সঙ্গে জমি নিয়ে স্থানীয়দের বিরোধের বেশ কয়েকটি মামলা চলমান আছে। তবে সেই বিরোধের জেরেই সাবেক ইউপি সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে কিনা বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নই।”
ওসি আরও বলেন, “বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। আমাদের কয়েকটি টিম কাজ শুরু করেছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। থানায় হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে।”
তবে ঘটনার পর থেকে ওই এলাকার অধিকাংশ লোকজন আত্মগোপনে চলে গেছে বলে জানান নিহতের স্বজনরা।