Published : 09 Jun 2025, 02:39 PM
ঈদুল আজহার টানা ছুটিতে পর্যটক সমাগম বেড়েছে পাহাড়, অরণ্য, ঝিরি-ঝরনা ও উপত্যকা ঘেরা পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে।
সারা বছরই আলুটিলার ঝুলন্ত সেতু, তারেং, রিছাং ঝরনাসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান পর্যটকের পদচারণায় মুখর থাকে। তবে বর্ষায় পর্যটকদের কাছে বাড়তি আর্কষণ নয়নাভিরাম পাহাড়ি ঝরনা।
সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ঈদে অতিথি বরণে প্রস্তুতি নিচ্ছেন হোটেল মোটেল মালিকরা। ইতোমধ্যে জেলার বেশির ভাগ হোটেলের ৪০ থেকে ৬০ শতাংশের বেশি রুম বুকিং হয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
খাগড়াছড়ির বিভিন্ন টুরিস্ট স্পটে যাতায়াতে যাওয়া জন্য গাড়ি বুকিং করছেন পর্যটকরা। আর পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছে টুরিস্ট পুলিশ।
খাগড়াছড়িতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে প্রধান আর্কষণ আলুটিলার ‘রহস্যময় গুহা’। পাহাড়ের পাদদেশে রহস্যময় আলুটিলা গুহার ব্যাস প্রায় ১৮ ফিট আর দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮০ ফিট।
তলদেশ দিয়ে প্রবাহমান শীতল ঝরনা। প্রবেশমুখ ও অপর প্রান্ত আলো-আঁধারিতে আচ্ছন্ন। দিনের বেলায়ও ভেতরে গা ছমছম করা অনুভূতি। সব মিলিয়ে এই গুহা ঘিরে পর্যটকদের কৌতুহল বেশি।
তবে কৃত্রিম আলো ছাড়া গুহায় প্রবেশ করা যায় না। মোবাইলের ফ্লাস লাইটের আলোতে অন্ধকার, হিমশীতল ও পিচ্ছিল পথ পেরিয়ে আলুটিলা গুহা অভিযানের রোমাঞ্চকর অনুভূতি নেন পর্যটকরা। তবে গুহার ভেতরে হাঁটার সময় সাবধানতা অবলম্বন না করলে ঝুঁকি থাকে দুর্ঘটনার।
প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি বেড়াতে আসা স্কুলপড়ুয়া আদৃতা বলেন, “রহস্যময় গুহা দেখতে আলুটিলায় ঘুরতে এসেছি পরিবারের সঙ্গে। খুবই থ্রিলিং একটা গুহা। ভয় আর রোমাঞ্চে ভরা।”
আদৃতার বাবা স্বরূপ বলেন, “সকালে আমরা চট্টগ্রাম থেকে এসেছি। তিনটা স্পটে ঘুরেছি। এর মধ্যে জেলা পরিষদ পার্ক, ঝুলন্ত ব্রিজ এবং এখানকার গুহা।
“গুহার অভিজ্ঞতা এক কথায় এক্সিলেন্ট। এটা দেখে মুগ্ধ হয়েছি। গুহার ভেতরে প্রবেশের পর পাথুরে পথ দিয়ে হাঁটা এক কথায় রোমাঞ্চকর অনুভূতি।”
আলুটিলা বাংলাদেশে অদ্বিতীয় প্রাকৃতিক গুহা। খাগড়াছড়িতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের ভ্রমণ তালিকায় অনিবার্য হয়ে উঠেছে প্রাকৃতিক এই রহস্যময় সুড়ঙ্গ।
সুড়ঙ্গ ছাড়াও আলুটিলা পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে লাভ ব্রিজ, ঝুলন্ত ব্রিজ, নন্দন পার্ক আর অ্যাম্পি থিয়েটারসহ বিভিন্ন স্থাপনার কারণে।
ফেনীর দিদারুল ইসলাম বলছিলেন, “বন্ধুরা মিলে খাগড়াছড়ি এসে এখানকার প্রাকৃতিক গুহাসহ বেশি পর্যটন স্পটে ঘুরেছি। এরপর রিছাং ঝরনায় যাব। প্রতিটি পযর্টন কেন্দ্র বেশ আর্কষণীয়।”
যাতায়াত সুবিধার কারণে খাগড়াছড়ি হয়ে সাজেক ভ্রমণে যায় পর্যটকরা; এতে বাড়তি লাভের আশা ব্যবসায়ীদের। ঈদুল আজহার ছুটিতে পর্যটক সমাগম কয়েকগুণ বাড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে বলে আশা করছেন তারা।
আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক সোহেল ত্রিপুরা বলেন, “ঈদের প্রথম দিন রোববার ১ হাজার ২৭০ জন পর্যটক আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে প্রবেশ করেছে। দ্বিতীয় দিন পর্যটকের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে। এখানকার রহস্যময় সুড়ঙ্গ পর্যটকদের প্রধান আর্কষণ।
“এছাড়া ঝুলন্ত ব্রিজ, নন্দন পার্কেও প্রচুর পর্যটক হয়। আর বৃষ্টির সময়ে প্রচুর পানি থাকায় রিছাং ঝরনাও পর্যটকদের কাছে আর্কষণীয় হয়ে ওঠে।”
রিছাং ঝরর্ণার টিকেট কাউন্টারম্যান নিপন জয় ত্রিপুরা বলেন, “প্রতিদিন অন্তত ১ হাজার পর্যটক রিছাং ঝরনা ভ্রমণ করছে। ঈদের ছুটির পুরো সপ্তাহে এমন ভিড় থাকবে। এ সময়ে ঝরনায় পানি বেশি থাকায় তা পর্যটকদের কাছে আর্কষণীয় হয়ে উঠেছে।”
এদিকে খাগড়াছড়ির হোটেল গুলোতে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন। বেশির ভাগই আগাম বুকিং দিয়ে এসেছেন। অনেকে আবার এসে পছন্দমত হোটেল-মোটেল বুকিং দিচ্ছেন। অনেকে পর্যটক টানতে ভাড়ায় দিচ্ছেন ছাড়।
খাগড়াছড়ির বেসরকারি আবাসিক হোটেল অরণ্য বিলাসের ব্যবস্থাপক আব্দুর রশীদ সাগর বলেন, “আমাদের হোটেলের ৪০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। আগামী কয়েকদিন চাপ আরও বাড়বে। ঈদ উপলক্ষ্যে কক্ষ বরাদ্দে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছি।"
খাগড়াছড়ির বেসরকারি হোটেল গাইরিংয়ের ব্যবস্থাপক প্রান্ত ত্রিপুরা বলেন, “আমাদের হোটেলের সব রুম ১৫ জুন পর্যন্ত বুকিং হয়ে গেছে।”
সাজেকগামী পর্যটকদের গাড়ির কাউন্টারের দায়িত্ব থাকা সৈকত চাকমা বলেন, “সোমবার সকাল থেকে সাজেকে প্রচুর পর্যটকবাহী গাড়ি বুকিং রয়েছে। পর্যটকেরা সাজেক এবং খাগড়াছড়ির বিভিন্ন স্পটে যাতায়াতে যাওয়া জন্য গাড়ি বুকিং করছে। পুরো সপ্তাহজুড়ে পর্যটকদের ভিড় থাকবে।”
ঈদের ছুটিতে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে সাবক্ষণিক টহল দিচ্ছে পুলিশ। ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছে জেলা পুলিশও।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, “ঈদের লম্বা ছুটিতে পর্যটকদের ভ্রমণ নিরাপদ করতে প্রত্যেকটা ট্যুরিস্ট পয়েন্টে পুলিশের টিম কাজ করছে।
“দেশি-বিদেশি পর্যটকরা যাতে নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াতে পারেন এবং হোটেলগুলোতে নিরাপদে থাকতে পারেন সেজন্য আমরা সর্তক আছি।”