Published : 15 Nov 2024, 08:47 AM
কৃষি বিপণন কর্মকর্তাদের আশ্বাস ছিল, মডেল ঘরে রাখা পেঁয়াজ ভালো থাকবে মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু চাষিরা বলছেন, কাঙ্ক্ষিত সুফল তারা পাননি; পেঁয়াজে পচন ধরেছে আরও দুই-তিন মাস আগেই।
তবে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, দ্রুত পচনশীল হাইব্রিড জাত রাখায় এবং চাষিদের গাফিলতিতে কিছু পেঁয়াজ পচে গেছে। তবু এর মধ্যেই মডেল ঘর আরও আধুনিক করার উদ্যোগ তারা নিয়েছেন।
২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি ও কালুখালী উপজেলায় এসব ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল।
গত বছর তেমন একটি ঘর পেয়ে ২০০ মণ পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেছিলেন বালিয়াকান্দি উপজেলার করমচাঁদপুর গ্রামের চাষি মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান।
আশা ছিল, নভেম্বর মাসে বেশি দামে বাজারে বিক্রি করবেন তিনি। অথচ অর্ধেকের বেশি পেঁয়াজ পচে লোকসানের মুখে পড়েছেন বলে অভিযোগ তার।
লুৎফুর রহমান বলেন, “সরকার থেকে পিজ রাখার জন্য আমাদের একটা ঘর দিচলো। নভেম্বর পর্যন্ত রাহার জন্য বলছিলো। যাতে বাড়তি দামে বিক্রি করা যায়।
“কিন্তু এখন পিজ যে পরিমাণ পচিচে তাতে ধরেন লাভের চে লসই বেশি, অর্ধেকের বেশি পচে গেছে। কৃষি বিপণন কর্মকর্তাদের কথা মত পিজ রাহে এহনতো আমি ক্ষতির মুখে পড়ে গেছি।”
তিনি বলেন, “দেখতেছেন না পচে তো গেছেই আবার গাছও জ্বালাইছে। মাচায় রাখা পিজ থেকে পচা পিজ আলাদা করছি। সব লস হওয়ার আগেই পচা পিজ বাছে ভালোগুলো বিক্রি করে দিব।”
একই অভিযোগ করলেন, কালুখালী উপজেলার এতেম আলী বিশ্বাস।
তিনি বলেন, “তারা তো কইছিলো নয় মাস পিজ ভালো থাকপি। ঘরে ২০০ মণ পিজ রাখছিলাম। অর্ধেক পিজ চার থেকে পাঁচ মাস আগে বেচে দিছলাম। আর অর্ধেকে দেখি পচন ধরছে, পরে সেতাও বেচে দিছলাম। সুবিধা তো পাচ্ছি না ঘরের।”
একই উপজেলার পরশ আলী খান বলেন, “আমি আরও দুই মাস আগে পেঁয়াজ বিক্রি করে দিছি। সে সময় বেশি একটা পচন ধরছিলো না। ধরেন, মণপ্রতি পাঁচ থেকে সাত কেজি করে নষ্ট হয়েছে। নভেম্বর মাস পর্যন্ত রাখলে বোঝা যেত কতটা পচেছে।”
বালিয়াকান্দি উপজেলার চাষি হারুণ অর রশিদ বলেন, “মডেল ঘরে পেঁয়াজ তিন থেকে চার মাস রাখার পরে যেভাবে ভালো থাকার কথা সেভাবে থাকে নাই। পচন ধরে যাওয়ায় পেঁয়াজ বিক্রি করে দিছি। যদি পেঁয়াজ নষ্ট না হতো তাহলে আরও দীর্ঘদিন সংরক্ষণে রেখে বাজারের চাহিদা মত বিক্রি করতে পারতাম।”
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ ও ২৩-২৪ অর্থবছরে দুই উপজেলায় জন্য ৫০টি মডেল ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল। প্রতিটি ঘর নির্মাণে খরচ হয়েছে সাড়ে চার লাখ টাকা।
বাড়ির উঠান বা ফাঁকা জায়গায় মাত্র এক শতাংশ জমিতে টিন-বাঁশ, লোহা ও কংক্রিটের সমন্বয়ে তৈরি করা এসব ঘরে রয়েছে ছয়টি তাপনিয়ন্ত্রণ ফ্যান ও তিন স্তরের মাচা। প্রতিটা ঘরে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ মণ পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায়।
চাষিদের অভিযোগ নিয়ে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাঠ কর্মকর্তা মো. রাজিব খান বলেন, “মডেল ঘর থেকে পেঁয়াজ পচে যাওয়ার যে অভিযোগ করেছে সেটা সত্য। তবে পচে যাওয়ার পরিমাণটা সাত থেকে ১০ শতাংশ।
“কৃষকেরা আগে যেভাবে পেঁয়াজ রাখতেন সে সময় ২০-৩০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যেতো। তবে আমাদের ঘরে যারা পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেছে সেখানে পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে খুবই কম। আর ওজনের যে হ্রাস সেটা পাঁচ থেকে সাত শতাংশ কমেছে।”
কাঙ্ক্ষিত সুফল না মেলার বিষয়ে তিনি বলেন, “মডেল ঘরে নয় মাস পর্যন্ত পেঁয়াজ ভালো থাকার কথা থাকলেও এ বছর অতিরিক্ত গরম ও হাইব্রিড জাতের পেঁয়াজ সংরক্ষণের কারণে কিছুটা পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে।
“এ ছাড়া এবারই প্রথম কৃষকেরা পেঁয়াজ রেখেছে, যে কারণে তাদের অনেক গাফিলতি আছে। অনেক কৃষক মডেল ঘরে ফ্যানের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ নিলেও তারা ফ্যান চালাননি।”
“অন্যদিকে মডেল ঘরে দেশি জাতের পেঁয়াজ বারি-৪ ও তাহেরপুরি পেঁয়াজ রাখার কথা বললেও কৃষকেরা রেখেছেন হাইব্রিড-কিং জাতের পেঁয়াজ। হাইব্রিড দেড় মাস আর কিং তিন মাসেই পচন ধরে। এ কারণে আশানুরূপ সময়ের আগেই পেঁয়াজে পচন ধরেছে।”
তবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে এর মধ্যেই তারা উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানান এই কৃষি বিপণন কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, এবার পাংশা উপজেলায় নতুন করে আরও ৫০টি মডেল ঘর দেওয়া হবে। এরই মধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। এই ঘরগুলো আগের ঘর থেকে আরও আধুনিক হবে।
“ঘরগুলোতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রক মেশিন থাকবে। মেশিনের সাহায্যে যেন সহজেই ঘরের তাপমাত্রা বোঝা যায়। জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ঠিক রাখতে রঙিন পর্দাও দেওয়া হবে।
“বর্তমানে ঘরের মাচার দূরত্ব দেওয়া আছে তিন ফুট করে। কিন্তু নতুন ঘরগুলোয় মাচার দূরত্ব হবে চার ফুট করে। এ ছাড়া ঘরের আড়ায় বাঁশের পরিবর্তে দেওয়া হবে কাঠ।”
নতুন মডেল ঘরে পেঁয়াজ চাষিরা উপকৃত হবেন আশা রেখে তিনি বলেন, “আমাদের ইঞ্জিনিয়ার ছিলো না। যে কারণে পেঁয়াজ রাখা ঘরের তাপমাত্রা কেমন বা অবকাঠামোতে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা সেটা বোঝা যায়নি। তবে এবার বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি এসব ঘরের তদারকি করবেন।”