Published : 13 Jan 2024, 11:08 AM
যশোরের শার্শার কৃষিতে যোগ হয়েছে নতুন সবজি ‘স্কোয়াশ’। উত্তর আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের এই ফসল দেশের মাটিতে চাষ করে সফলতাও পেয়েছেন তরুণ এক কৃষি উদ্যোক্তা।
উপজেলার লক্ষণপুর ইউনিয়নের শিকারপুর গ্রামের বাসিন্দা মঞ্জুরুল আহসান শীতকালীন এই সবজি আবাদ করে মাত্র দুই মাসেই ভাল লাভের আশা করছেন।
তিনি বলছেন, “নভেম্বর মাসে লাগানো স্কোয়াশে মাঠ ভরে গেছে। মাত্র ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ হাজার টাকার ফল বিক্রি করেছি। বাজারে চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় দেড় লাখ টাকার স্কোয়াশ বিক্রির আশা করছি। ”
সরকারি বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ ডিগ্রি কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পাস করা মঞ্জুরুল কয়েক বছর ধরে পরিবারের সঙ্গে আম, কুল, টমেটো, বাঁধাকপি ও ফুলকপিসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি ও ফল চাষ করে আসছেন।
তবে নিজ উদ্যোগে এবার তিনি ইউটিউবে ভিডিও দেখে ও শার্শা উপজেলার কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে প্রথমবারের মতো শার্শায় স্কোয়াশের বিষমুক্ত চাষ শুরু করে পেয়েছেন সফলতা।
স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পলাশ কিশোর ঘোষ বলেন, “প্রথমবারের মতো শার্শার মাটিতে বিদেশি সবজি স্কোয়াশ চাষ হয়েছে। বাজারে ব্যাপক চাহিদা ও কম খরচে অধিক লাভের চাষ বলে ধারণা করা হচ্ছে আগামীতে এই এলাকায় প্রচুর স্কোয়াশ চাষের প্রসার ঘটবে।”
স্কোয়াশ মূলত উত্তর আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে চাষ হয়ে থাকে। দেখতে অনেকটা শসা আকৃতির এই সবজি লম্বা হলেও রং মিষ্টি কুমড়ার মতো। শীতকালীন উচ্চ ফলনশীল ও স্বল্পমেয়াদি জাতের এ সবজি ভাজি, মাছ ও মাংসের সঙ্গে রান্নার উপযোগী। বিশেষ করে চাইনিজ রেস্টুরেন্টে সবজি এবং সালাদ হিসেবে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের অভিমত, স্কোয়াশ কুমড়ার একটি ইউরোপীয় জাত, যা খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু এবং অতি পুষ্টিকর। সবজিটি ডায়াবেটিস, ক্যানসার ও হার্টের রোগীদের জন্যও বেশ উপকারী।
তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মঞ্জুরুল জানান, স্কোয়াশের বীজ সংগ্রহ করে মিষ্টিকুমড়া বা লাউয়ের মতো বপন করে গাছ তৈরি করেন। পরে মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে জমিতে রোপণ করেন।
দেড় মাস পর ফল আসতে শুরু করে। স্কোয়াশ গাছ একদম মিষ্টি কুমড়ার মতো। পাতা, ডগা, কাণ্ড দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এটি মিষ্টি কুমড়া নাকি স্কোয়াশ গাছ।
তিনি আরও বলেন, “স্কোয়াশ আবাদের সুবিধা হচ্ছে অল্প সময়ে এবং সাশ্রয়ী মূল্যে উৎপাদন করা যায়। পূর্ণবয়স্ক স্কোয়াশ গাছ অল্প জায়গা দখল করে। ফলে এক বিঘা জমিতে যে পরিমাণ কুমড়া লাগানো যায়, তার চেয়ে দ্বিগুণ স্কোয়াশ লাগানো সম্ভব। প্রতিটি স্কোয়াশ গাছের গোড়ায় ৮ থেকে ১২টি পর্যন্ত ফল বের হয়। কয়েকদিনের মধ্যেই খাওয়ার উপযোগী হয় এটি।”
মনজুরুল আহসান বলেন, “আমি ২৫ শতক জমিতে ‘ইস্পাহানি স্কেল সুপার’ ও ‘ছানি হাউজ’ জাতের স্কোয়াশ চাষ করেছি। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে পরিচর্যা করেছি। প্রথম চাষ, তাই পরিচর্যা বুঝতে একটু সময় লেগেছে। খরচও একটু বেশি হয়েছে। তবে প্রতি কেজি স্কোয়াশ বাজারে ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হওয়ায় বেশ লাভ হচ্ছে।”
তিনি জানান, প্রতিটি স্কোয়াশ দেড় থেকে আড়াই কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। বড়গুলো সবজি, ছোটগুলো স্লাইস ও সালাদ হিসেবে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
স্থানীয়দের পাশাপাশি রাজধানীসহ বিভিন্ন বড় শহরের ক্রেতারাও তার কাছ থেকে স্কোয়াশ কিনছেন। স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় আগামীতে আরও বেশি জমিতে এই স্কোয়াশ চাষ করবেন তিনি।
তরুণ এই চাষি আরও বলেন, এই এলাকায় স্কোয়াশ নতুন হওয়ায় এর চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে ও ক্ষেত দেখতে স্থানীয় অন্যান্য সবজি চাষিরাও এগিয়ে আসছেন। তার স্কোয়াশ চাষে এলাকার সাধারণ কৃষকরা বেশ অনুপ্রাণিত হয়েছেন।
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার রায় বলেন, “স্কোয়াশ চাষে আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের সার-বীজসহ সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি। এবার শার্শায় হলুদ স্কোয়াশও চাষ হচ্ছে। আগামীতে এই উপজেলায় আমরা ব্যাপকভাবে স্কোয়াশ চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করব।”
“রবিশস্যটি অপ্রচলিত হলেও খুবই লাভজনক। প্রতি গাছ থেকে গড়ে ১০টি ফলন হতে পারে। মানুষ এ সম্পর্কে জানতে পারলে উৎপাদন ও চাহিদা বাড়বে। এতে কৃষিতে স্বনির্ভরতা আসবে”, বলেন তিনি।