Published : 14 May 2025, 01:17 PM
“আমরা পরিবারের ১১ জন মানুষ আছে। মাত্র ২০ কেজি চাল দিয়ে কিছুই হচ্ছে না আমাদের। কোনো মাছও শিকার করতে পারছি না; কারণ মাছ ধরা বন্ধ।
“অনেক সময় নিষেধাজ্ঞা ৩ মাসের জায়গায় ৫ মাসও হয়ে যায়। কিন্ত খাদ্য সহায়তা আমরা ওই তিন মাসেরই পাই। এটা দিয়ে আমাদের চলে না।” কথাগুলো বলছিলেন খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার জেলে নূর মোহাম্মদ।
প্রজনন মৌসুমে কাপ্তাই লেকে মাছ আহরণ বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন মহালছড়ির নিবন্ধিত ১ হাজার ৫৬১ জেলে। নিবন্ধনের বাইরেও জেলে রয়েছে; যাদের জীবিকাও নির্ভর করে মূলত কাপ্তাই হৃদে মাছ শিকার করে।
মহালছড়ির মৎসজীবীরা বলছেন, মাছ ধরা বন্ধের মৌসুমে কর্মহীন জেলেদের প্রতি মাসে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় মাত্র ২০ কেজি চাল বরাদ্দ দিলেও তা তাদের জন্য পর্যাপ্ত নয়। বিকল্প আয়ের উৎস না থাকায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা।
কাপ্তাই হ্রদে ১ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস মাছ আহরণ, পরিবহন, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন।
গত ১৬ এপ্রিল রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক বৈঠক থেকে জানানো হয়, হ্রদে মাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার এ সময়ে ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে এবং বাংলাদেশ মৎস উন্নয়ন কর্পোরেশন-বিএফডিসির তত্ত্বাবধানে কাপ্তাই হ্রদ নির্ভর জেলেদের মাঝে খাদ্যশস্য বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছে রাঙামাটির জেলা প্রশাসন। তবে সেই সহায়তা পর্যাপ্ত নয় বলে দাবি জেলেদের।
রাঙামাটির কাউখালী এবং রাজস্থলী উপজেলা ছাড়া বাকি আট উপজেলা ও খাগড়াছড়ির দীঘিনালা এবং মহালছড়ি উপজেলা নিয়ে কাপ্তাই হ্রদ বিস্তৃত।
রাঙামাটি জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদ নির্ভর নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা প্রায় ২৭ হাজারের কাছাকাছি।
৭২৫ বর্গ কিলিমিটারের আয়তনের কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরে খাগড়াছড়ির মহালছড়ির প্রায় নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত প্রায় ৩ হাজার জেলে তাদের জীবন-জীবিকা চালায়।
বৃধবার সকালে মহালছড়ি মৎস অবতরণ ঘাটে গেলে কয়েকজন জেলে অপর্যাপ্ত চালের বরাদ্দ নিয়ে তাদের অসন্তোষের কথা জানান। তাদের একজন নিবন্ধিত জেলে ফজর আলী।
ফজর বলছিলেন, “এখানে মে মাসের ১ তারিখ থেকে মাছ ধরা বন্ধ। কাপ্তাই লেকে অনেক সময় পানি কম থাকায় তিন মাসের জায়গায় নিষেধাজ্ঞা বাড়িয়ে ৪ মাস বা ৫ মাসও করা হয়। কিন্ত আমাদের যে চাল দেয় তা তিন মাসের জন্য ২০ কেজি করে মোট ৬০ কেজি।
“এটা দিয়ে আমাদের সপ্তাহ খানেক বা দশ দিন চলে। সরকার যদি আমাদের বরাদ্দ বাড়িয়ে দেয় তাহলে পরিবার নিয়ে কোনোরকম তিন মাস বাঁচতে পারব।”
রমজান আলী নামের স্থানীয় এক জেলে বলেন, “বছরের মধ্যে তিন মাস লেকে জাল ফেলা নিষেধ। এ সময় কেউ মাছ শিকারে যায় না। কিন্ত সরকার জেলেদের যে বরাদ্দ দেয়, তাতে দুই জনের সংসার হলে এক মাস চলত। কিন্ত কোনো পরিবারে তো ৫ জনের নিচে সদস্য নেই।
“এখন যে চাল দেয় তা দিয়ে এক সপ্তাহ যায়। চাল দিলেও অন্য বাজার-সদাই কিভাবে করবো? কারণ মাছ ধরা বন্ধ থাকলে তো, আমাদের আয়ও বন্ধ থাকে।”
মহালছড়ি মৎস ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মো. আবুল খায়েরও জেলেদের সুরে সুর মিলিয়েছেন।
তিনি বলেন, “সরকার যে ভূর্তকি দেয় তা পর্যাপ্ত না। প্রতিটি জেলে পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫ থেকে ৭ জন। বিশ কেজি চাল দিয়ে পুরো মাস যায় না। সরকার যদি জেলেদের প্রণোদনা দ্বিগুণ করে দেয় তাহলে ভালো হয়।”
মহালছড়ি কাপ্তাই হ্রদ মৎস উন্নয়ন ও বিপণন উপকেন্দ্রের প্রধান মো. নাসরুল্লাহ বলেন, “কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞার সময়ে মহালছড়ির নিবন্ধিত জেলেদের জন্য মানবিক খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির আওতায় প্রতি মাসে ভিজিএফের ২০ কেজি চাল দেওয়া হয়। এটা আমাদের কাছেও অপ্রতুল মনে হয়েছে।”
তিনি বলেন, “এরইমধ্যে চালের বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য মৎস উন্নয়ন কর্পোরেশনের কাছে আবেদন করেছি। আশা করছি, বরাদ্দ বাড়ানো বিষয়টি বাস্তবায়ন হবে।”
২০২৪-২৫ অর্থ বছরে খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপকেন্দ্রে মৎস আহরণ থেকে প্রায় ১ কোটি ১৬ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে বলে জানান নাসরুল্লাহ।
আরও পড়ুন