Published : 03 Jul 2025, 11:18 PM
ফরিদপুর সদরের সাবেক সংসদ সদস্য এ কে আজাদের শহরের বাড়িতে গিয়ে বিএনপি নেতারা সেখানে ‘আওয়ামী লীগের লোকজনের গোপন বৈঠকের’ বিষয়ে খোঁজখবর করেছেন। পরে কাউকে না পেয়ে তারা চলে আসেন।
বৃহস্পতিবার বিকাল পৌনে ৪টার দিকে ফরিদপুর মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম মোস্তফা মিরাজের নেতৃত্বে দলের তিন-চারজন নেতাকর্মী শহরের ঝিলটুলী সড়কের ওই বাড়িতে যান।
পরে সেখানে বাইরের কাউকে দেখতে না পেয়ে বাড়ির পাশ থেকে মিছিল করে শহরের অন্য দিকে চলে যান বিএনপির নেতাকর্মীরা।
এ কে আজাদের বাড়িতে সেসময় উপস্থিত তার শিল্প প্রতিষ্ঠান হা-মীম গ্রুপের ভূমি কর্মকর্তা মো. রাফিজুল খান অভিযোগ করেন, “চলে আসার সময় এক নেতা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ‘এরকম (আওয়ামী লীগের গোসন সভা) কোনো ঘটনা ঘটলে বাসায় আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেব’।”
ঘটনার সময় এ কে আজাদ সেখানে ছিলেন না। ওই বাড়িতে তখন হা-মীম গ্রুপের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. সোলাইমান হোসেন, নিরাপত্তা কর্মী মেহেদী হাসান ও ক্লিনার মো. হান্নান মিয়া অবস্থান করছিলেন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রাফিজুল খান সাংবাদিকদের বলেন, “বিএনপির নেতারা গেইটে আঘাত করলে নিরাপত্তা কর্মী মেহেদী হাসান এগিয়ে গিয়ে গেইট খুলে দেন। ওই সময় ভেতরে মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব গোলাম মোস্তফা, মহানগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদুল ইসলাম নাহিদসহ বিএনপির তিন-চারজন নেতাকর্মী বাড়িতে ঢোকেন।
“বাড়ির ভেতরে ঢুকে মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব গোলাম মোস্তফা নিরাপত্তা কর্মীর কাছে জানতে চান, ‘এই বাড়িতে আওয়ামী লীগের কোনো গোপন সভা হচ্ছে কিনা?’ তখন নিরাপত্তা কর্মী এমন কিছু হচ্ছে না বলে জানান। তার উত্তর শুনে তিনি বাড়ির বাইরে চলে আসেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ কে আজাদের বাসা থেকে বের হয়ে মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা পাশের ভূমি কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। পরে সেখানে প্রায় শতাধিক লোকের সমাগম ঘটে। তখন তারা সেখান থেকে মিছিল বের করেন।
মিছিল থেকে ‘আওয়ামী লীগের দোসররা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘ফ্যাসিবাদের দোসররা, হুঁশিয়ার সাবধান’ ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়।
মিছিলটি ভূমি কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে শহরের অনাথের আচারের মোড় এলাকায় যায়। পরে মিছিলটি এ কে আজাদের ঝিলটুলীর ওই বাড়ির দক্ষিণ পাশের সড়ক দিয়ে পশ্চিম দিকে চলে যায়।
এ মিছিলে অন্যদের মধ্যে ফরিদপুর মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বয়ক মিজানুর রহমান, মহানগর যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলী রেজোয়ান বিশ্বাস, ফরিদপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব শাহরিয়ার হোসেন, মহানগর ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুনিব হাসান উপস্থিত ছিলেন।
মিছিলকারীরা পরে শহরের কাঠপট্টি এলাকায় অবস্থিত জেলা বিএনপির কার্যালয়ের নিচে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।
সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন, ফরিদপুর-৩ আসনের সাবেক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এ কে আজাদের মদদপুষ্ট হয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পুনরায় দলকে প্রতিষ্ঠিত করার পাঁয়তারা করছেন। বিএনপি সেটা হতে দেবে না।
তারা বলেন, ফরিদপুরে আর কোনো আওয়ামী লীগের দোসরদের পুনর্বাসিত করা যাবে না। যদি কেউ তাদের পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করতে চায় তাহলে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রতিহত করবে। প্রয়োজনে দাঁতভাঙ্গা জবাব দেওয়া হবে।
এ কে আজাদ হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং দৈনিক সমকাল ও টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের সত্ত্বাধিকারী। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের আগের কমিটিতে সহসভাপতি ছিলেন। পরের কমিটিতে তাকে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য করা হয়।
২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে তিনি ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাকে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এ কে আজাদ।
এ কে আজাদের বাসায় যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব গোলাম মোস্তফা সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা জানতে পারি, ঝিলটুলীতে আওয়ামী লীগের সহসভাপতির বাড়িতে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা দেশে অরাজগকতা সৃষ্টি করার জন্য সভা করছে। সে খবর পেয়ে আমরা ওই বাড়িতে গিয়েছিলাম ওখানে কোনো গোপন সভা হচ্ছে কিনা দেখার জন্য।”
দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকার পর একটি রাজনৈতিক দলের নেতারা একজন সাবেক সংসদ সদস্যের বাড়িতে এভাবে যেতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত করার চেষ্টা করছে পুলিশ।”
ফরিদপুর-৩ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হতে গণসংযোগ ও প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান প্রয়াত চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের মেয়ে নায়াব ইউসুফ। তিনি জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, এ কে আজাদের বাড়িতে যারা গিয়েছিলেন এবং মিছিল করেছেন তারা প্রায় সবাই নায়াব ইউসুফের সমর্থক।
এ বিষয়ে নায়াব ইউসুফ সাংবাদিকদের বলেন, “শহরে এ কে আজাদের অনেকগুলো বাড়ি। আজ বিএনপির একটি মিছিল হয়েছে। কিন্তু কোনো বাড়িতে বিএনপির নেতারা চড়াও হয়েছেন এ খবর আমার জানা নেই।
“এ কে আজাদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করছে। টাকা ছড়াচ্ছেন। মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। সামনে নির্বাচন এ অবস্থায় আওয়ামী লীগকে সংগঠিত আমরা করতে দিতে পারি না। তবে আমি হিংসার রাজনীতি করি না, হামলার রাজনীতি করি না। আমি এর পক্ষপাতি নই। সন্ত্রাস-বিশৃঙ্খলা আমি পছন্দ করি না এবং আমার নেতাকর্মীদের করতে দেই না।”
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী বলেন, তিনি বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। এ কে আজাদের বাড়িতে কিছু ঘটেছে বলে তার জানা নেই। কেউ তাকে জানায়নি।
ফরিদপুর কোতোয়ালী থানার ওসি আসাদউজ্জামান বলেন, “বিকাল ৪টার দিকে আমি খবর পাই, এ কে আজাদের বাড়িতে বিএনপির লোকজন গিয়েছে। এ খবর পাওয়ার পর দ্রুত সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়। তবে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ কাউকে পায়নি।”
এ বিষয়ে এ কে আজাদের মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি সাড়া দেননি। পরে বিষয় জানিয়ে এসএমএস করলেও উত্তর মেলেনি।