Published : 25 Feb 2025, 06:09 PM
রাঙামাটির পর্যটনকেন্দ্র সাজেকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে রিসোর্ট-কটেজ, দোকানের পাশাপাশি ৩৫ ত্রিপুরা ও লুসাই জাতিগোষ্ঠীর পরিবার তাদের বসতবাড়ি হারিয়েছে। এসব পরিবারের দুই শতাধিক সদস্যের অধিকাংশই এখন খোলা আকাশের নিচে দিন পার করছেন।
আগুনে ঘরবাড়ি হারিয়ে কেউ কেউ মন্দির বা গির্জায় আশ্রয় নিয়েছেন। সামান্য কিছু মালামাল ও আসবাবপত্র রক্ষা করতে পারলেও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ঘরবাড়ি। ভবিষ্যৎ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় শেষ সম্বল হারানো মানুষেরা।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয়দের খাবার দিয়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সাজেক কটেজ-রিসোর্ট মালিক সমিতি।
সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিজয় ত্রিপুরা বলেন, “আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের সমিতি, আশপাশের পাড়ার লোকজন আর সেনাবাহিনী মিলে গতকাল রাত থেকে খাবারের ব্যবস্থা করছে।”
রাঙামাটি জেলা প্রশাসন এবং সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির তথ্যমতে, আগুনে লুসাই জনগোষ্ঠীর ১৬টি এবং ত্রিপুরাদের ১৯টিসহ মোট ৩৫টি বসতঘর পুড়ে গেছে বলে জানা গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত মিঠুন ত্রিপুরা বলেন, “আমাদের বাড়িঘর যা ছিল সব পুড়ে হয়ে গেছে। ঘরে ধান ছিল সব পুড়ে গেছে। আমরা এখন কী যে খাব? খাওয়ার মত আর কিছু নেই। ঘরের পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্রগুলো দেখে দেখে খোলা আকাশে নিচে সারারাত কাটিয়েছি। চিন্তায় ঘুমাতে পারিনি।”
রঞ্জন ত্রিপুরা বলেন, “আমরা কিছুই রক্ষা করতে পারিনি, ঘর পুড়ে গেছে, ঘর থেকে কিছুই বার করতে পারিনি।”
ডেভিড লুসাই বলেন, “এখানে যে সব বাড়িঘর পুড়ে গেছে সবাই আমার আত্মীয়-স্বজন। একেক জনের, একেক রকম রকম ক্ষতি হয়েছে। অনেকের আদা, আবার অনেকের হলুদ পুড়ে গেছে। এখন একদম রাস্তায় থাকা ছাড়া আর আমাদের কোনো উপায় নেই। সব শেষ হয়ে গেছে।”
১৬৭ নম্বর রুইলুইপাড়ার হেডম্যান (মৌজাপ্রধান) লাল থাং লুসাই জানান, সাজেকে এত বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। তার নিজের পাকা ঘরটিও পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, থাকার মত অবস্থায় নেই।
তিনি বলছিলেন, “আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে গায়ে যে কাপড় ছিল তা নিয়েই ঘর থেকে বের হয়েছি আমরা। জুতা পায়ে দেওয়ার সুযোগও পাইনি। আগুনের লেলিহান শিখা মুহূর্তে চারিদিকে ছড়িয়েছে। আমরা পরিবার নিয়ে খোলা আকাশে রাত কাটিয়েছি।”
সাজেক ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য অনিত্য ত্রিপুরা বলেন, ক্ষতিগ্রস্তরা নিঃস্ব হয়ে গেছে। ত্রিপুরা, লুসাই জনগোষ্ঠীর ক্ষতিগ্রস্তরা সবাই খেটে-খাওয়া মানুষ। জুম চাষ, হলুদ চাষ করে তাদের জীবন চলে। নিঃস্ব মানুষদের সহায়তায় সরকার ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এই জনপ্রতিনিধি।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, “ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত সরকারি নিয়ম অনুসারে আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমরা কাজ করছি। আশা করছি, আজকের মধ্যে অফিশিয়াল প্রক্রিয়াগুলো শেষ করে দ্রুত আমরা সেখানে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াব। এরইমধ্যে আমাদের তদন্ত দল সেখানে গিয়ে কাজ করছে।”
সাজেকে অগ্নিকাণ্ড: তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি
সাজেকে পুড়ল রিসোর্ট-কটেজসহ ৯৫ স্থাপনা
সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে সাজেকের আগুন
সাজেকে ভয়াবহ আগুন, পুড়েছে ২০ রিসোর্ট