Published : 23 May 2025, 09:57 PM
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় খাল পার হতে গিয়ে স্রোতের টানে শতাধিক গরু ভেসে গেছে। পরে ৩৬টি গরু মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে হোসেন্দী ইউনিয়নের ভাটি বলাকী গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীর সঙ্গে যুক্ত খালে এ ঘটনা ঘটে বলে গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম জানান।
স্থানীয়রা জানান, গ্রামের গরুগুলো প্রতিদিনই সকালে বিলে ঘাস খেতে যায়। দিনশেষে খাল পার হয়ে আবার গৃহস্থের বাড়ি ফিরে আসে। খালে প্রচুর কচুরিপানা রয়েছে। শুক্রবার ফেরার সময় গরুগুলো হঠাৎ করে আসা জোয়ারের স্রোতের মুখে পড়ে। এতেই গরুগুলো ভেসে যায়।
তখন লোকজন বাড়ি থেকে ছুটে এসে গরু খোঁজা শুরু করে। বাড়ির নারী-শিশুরাও খালের পাড়ে এসে জড়ো হন। তাদের আহাজারিতে সেখানে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। গ্রামের প্রায় সব মানুষই ক্ষতির শিকার হয়েছেন। ঈদের আগে তারা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, এরই মধ্যে কৃষক এমরানের দুইটা, মহাসিনের চারটা, ইয়ারুরের তিনটা, মাসুমের একটা, ওয়াহিদুজ্জামানের একটা, রনির একটা, নাহিদের তিনটা, হেলানির একটা, হানিফার দুইটা, মনার দুইটা, মো. শরীফের তিনটা, তরিকুলের দুইটা, কবিরের তিনটা, আবুল হোসেনের তিনটা, জামালের একটা, শাহাজালালের তিনটা, রসুল গাজীর একটা গরুকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শ্যামল খান বলেন, “আমাদের গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। সবারই গরু রয়েছে। ভাটি বলাকী গ্রাম সংলগ্ন চরে খাস খাইয়ে গরুগুলো লালন-পালন করে সবাই। গ্রাম এবং চরের মধ্যে ছোট একটি খাল রয়েছে। খালটি মেঘনার সঙ্গে যুক্ত। সেখানেই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
“আজকের দিনটা আমাদের গ্রামের জন্য বিষাদের। সবারই ক্ষতি হয়েছে। লাখ লাখ টাকা ক্ষতির মুখে পড়ে কৃষকরা পাগলপ্রায়।”
কৃষক মহাসিনের চারটি গরু মারা গেছে। তিনি কেঁদে কেঁদে বলছিলেন, “এমন ঘটনা জীবনেও ঘটে নাই। এমন কিছু ঘটতে পারে তা আমরা চিন্তাও করি নাই। আমি একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছি, পথের ফকির হয়ে গেছি।”
কৃষক আবু তালেব সুজন খান বলেন, “জোয়ারের পানির স্রোতে ১০০ গরু ভেসে গেছে। ৩৬টি মরা গরু উদ্ধার হয়েছে। এখনও অনেক কৃষক তাদের গরু খোঁজাখুঁজি করছে।”
হোসেন্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠু বলেন, “খবর পেয়ে ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যকে খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।”
গজারিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ফয়সাল আরাফাত বিন ছিদ্দিক বলেন, “আমাদের অবস্থান থেকে যতটুকু সম্ভব আমরা কৃষকদের সাহায্য করব।”
গজারিয়ার ইউএনও আশরাফুল আলম বলেন, “এখন পর্যন্ত ৩৬টি মৃত গরু উদ্ধার করা হয়েছে, আরও খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। কৃষকদের অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করা হবে।”