Published : 18 May 2025, 07:04 PM
সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার জুলাই অভ্যুত্থানের সক্রিয় কর্মী ও সাংবাদিক জান্নাতুল ফেরদৌস জিসানের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের সংবাদমাধ্যম কর্মীরা।
রোববার বেলা সোয়া ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় কেন্দ্র্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়।
একই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা জিসানের বাবা-চাচার মুক্তি ও মামলা থেকে তাদের নাম প্রত্যাহার করার দাবিও জানানো হয়।
সাংবাদিকদের মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে রাজনৈতিক, সামাজিক ও বিভিন্ন পেশাজীবীরাও ছিলেন।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তারে বাধা ও হামলার অভিযোগে পুলিশের এক মামলায় ১২ মে রাতে নগরীর শহীদনগর এলাকার বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন নিউজ পোর্টাল ‘প্রেস নারায়ণগঞ্জ’র প্রতিবেদক জান্নাতুল ফেরদৌস জিসান।
একই মামলায় গ্রেপ্তার জিসানের বাবা-চাচাও এখন কারাগারে।
এর প্রতিবাদে করা মানববন্ধন থেকে সংবাদ কর্মীরা জিসান ও তার পরিবারের সদস্যদের নিঃশর্ত মুক্তি ও মামলা থেকে তাদের নাম প্রত্যাহারের দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তারের সময় বাধা দেওয়ার মামলায় জিসান, ফুড ব্লগার মিথুনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অথচ ওইদিন সেখানে তারা ছিলই না। অথচ মামলা নথিভুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেছে।
সংবাদমাধ্যম কর্মীদের দাবি, তারা খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত শহীদনগর এলাকার শাকিল নামে এক ব্যক্তি ‘বাণিজ্য করার জন্য’ পুলিশের সহযোগিতায় নামগুলো মামলায় যুক্ত করেছেন।
মানববন্ধনে বক্তাদের দাবি, ইতোপূর্বে ঠিক এমন কাজই করে গেছে ওসমান পরিবার। ওই পরিবার ‘বিতাড়িত’ হলেও তাদের স্থান দখলে ব্যস্ত অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারা।
মানববন্ধনে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সাংবাদিকরা বলেন, এইসব হয়রানিমূলক মামলা সাংবাদিকদের নামে আগেও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করা যায়নি। এখনো এইসব চাঁদাবাজি, মামলাবাজি, মানুষকে হয়রানি নিয়েও সাংবাদিকরা লিখে যাবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এইসব মামলাবাজদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতেই হবে।
স্থানীয় প্রশাসনের উদ্দেশে বক্তারা বলেন, এইসব মামলাবাজি, গ্রেপ্তার, মানুষকে হয়রানি করা ৫ অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানের পরিপন্থী। যে সমাজ নির্মাণ করার জন্য জুলাই অভ্যুত্থান হয়েছে, ছাত্ররা জীবন দিয়েছে, রক্ত ঝরেছে; সেই চেতনার পরিপন্থী কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই প্রশাসন থেকে আশা করা যায় না।
তবে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শাকিল বলেন, “আমার মহল্লায় ভালো-খারাপ সব ধরনের মানুষই আছে। এই মামলায় আমি কারও নাম দিই নাই। আমি এইসব করেছি, এমনটা প্রমাণ হলে আমার শাস্তি হোক।”
অনলাইন সংবাদমাধ্যম প্রেস নারায়ণগঞ্জ’র সম্পাদক ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্ব এবং আজকের পত্রিকা ও ডিবিসি টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি সাবিত আল হাসানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরো ছিলেন নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সহ সভাপতি বিল্লাল হোসেন রবিন, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন সবুজ, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা প্রেস ক্লাবের সভাপতি হোসেন চিশতি সিপলু, ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আব্দুর রহিম, সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মোহাম্মদ মাসুম।
সংহতি জানিয়ে আরো ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক শওকত আলী, প্রথম আলো বন্ধুসভার নারায়ণগঞ্জের সহসভাপতি জহিরুল ইসলাম মিন্টু, গবেষক মাহবুব সুমন, ছাত্র ফেডারেশনের জেলা সভাপতি ফারহানা মানিক মুনা, ছাত্র ফ্রন্টের জেলা কমিটির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মেহরাব হোসেন প্রভাত।
রাতভর অপেক্ষার পর ৯ মে সকালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তারে করে পুলিশ।
এ ঘটনার চারদিন পর ১২ মে রাতে সদর মডেল থানায় আইভীকে গ্রেপ্তারে বাধা ও পুলিশের গাড়িতে হামলার অভিযোগে ৫২ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করে পুলিশ।
ওই মামলায় নগরীর শহীদনগর এলাকা থেকে সাংবাদিক জান্নাতুল ফেরদৌস জিসান ও তার বাবা মো. হানিফ, চাচা শওকত মিথুন এবং মিথুনের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মাহমুদা আক্তারকেও আসামি করা হয়। রাতেই জিসান, হানিফ ও মিথুনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এই মামলায় সাংবাদিক জিসান ও তার পরিবারকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি তাদের পরিবারের সদস্যদের।