Published : 24 Jan 2025, 12:14 PM
বাবা ক্ষেতখামারে দিনমজুরের কাজ করেন আর মা বাড়িতে হাঁস-মুরগি ও ছাগল পালন করেন; তাতেই চলে চার জনের সংসার। পরিবারের অভাব-অনটনকে জয় করেই মেহেদী নিজের স্থান করে নিয়েছেন মেডিকেলে ভর্তির মেধাতালিকায়।
তার এমন সাফল্যে পরিবারে খুশির বন্যা বয়ে গেলেও তার মাঝেই ঊঁকি দিচ্ছে দুশ্চিন্তার পাহাড়। কোথায় পাবেন কলেজে ভর্তির টাকা? কীভাবে জোগাড় হবে পড়াশোনার খরচ? কেমনে মিটবে অন্যান্য ব্যয়?
মেহেদী হাসান মেহেদীর বাড়ি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বল্লা গ্রামে। বাবা আনারুল ইসলাম দিনমজুর ও শারীরিকভাবেও অসুস্থ; মা শিল্পী খাতুন গৃহিনী। মেহেদীর ছোট ভাই অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। তাদের দাদির সূত্রে পাওয়া বসতভিটা ছাড়া রয়েছে মাত্র ২০ শতক চাষের জমি।
এর মধ্যেই মেহেদী ঝিকরগাছার বল্লা বিএনকে মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০২১ সালে এসএসসি ও যশোর সদরের নতুনহাট পাবলিক কলেজ থেকে ২০২৩ সালে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
পরে এ বছরের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার মেধা তালিকায় ২৫৪৬তম স্থান দখল করেন মেহেদী। এতে ভর্তির সুযোগ পান দেশের সেরা দশ মেডিকেল কলেজের মধ্যে অন্যতম খুলনা মেডিকেল কলেজে।
মেহেদীর মা শিল্পী বলেন, “ছেলেকে প্রাইভেট পড়তি টাকা দিতি পারিনি। ছাগল বিক্রি করে ১০ হাজার টাকা দিয়েলাম। সে টাকায় কয়েক দিন কোচিং করেছে আর মেসে থেকেছে। এখন মেডিকেলে ভর্তি ও পড়াশোনার খরচ চালানোর দুশ্চিন্তা কাটছে না।”
একই উদ্বেগ প্রকাশ করেন বাবা আনারুলও। তিনি বলেন, “ছেলের মুখি যখন শুনলাম মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ হইছে- ডাক্তার হবে, তখনকার আনন্দ আর বলে বুঝানো যাবে না। তবে এখন নতুন চিন্তা ছেলের ভর্তিসহ পড়ালেখার খরচ জোগানের চিন্তা।”
“কিভাবে কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না। ছেলে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েও তার স্বপ্ন পূরণে দুচোখে অন্ধকার দেখছি।”
এ নিয়ে কথা হলে বল্লা বিএনকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোকবুল হোসেন বলেন, “মেহেদী অত্যন্ত মেধাবী। সে অভাব-অনটনসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যে লেখাপড়া চালিয়ে গেছে। আমরা বৃত্তবানদের কাছে তার পড়াশোনার সহযোগিতা চাই।”
নতুনহাট পাবলিক কলেজের অধ্যক্ষ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, “মেহেদী হতদরিদ্র একটি পরিবারে জন্ম নিয়েও মেধার সাক্ষর রেখে চলেছে।আমরা তাকে পড়াশোনার ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা করেছি। তার ফলাফলে আমরা গর্বিত এবং পরবর্তী জীবনের সফলতা কামনা করছি।”
একজন ‘মানবিক চিকিৎসক’ হতে চান জানিয়ে মেহেদি বলেন, “আমি ডাক্তারি পড়ব, ডাক্তার হব। ডাক্তার হয়ে আমার মতো মেধাবীদের পাশে দাঁড়াব।”
“আমার মতো যারা অসহায় থাকবে চেষ্টা করব তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। আপ্রাণ চেষ্টা করব গ্রামের দরিদ্র-অসহায় মানুষকে ফ্রি চিকিৎসা দেওয়ার।“